সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উদঘাটন না হলে র‌্যাবের সফলতা ম্লান হবে: হাইকোর্ট

0
274

খুলনাটাইমস: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন, দোষীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করতে না পারলে র‌্যাবের সফলতা ম্লান হবে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মামলাটি বাতিল চেয়ে সন্দেহভাজন আসামি তানভিরের আবেদনের ওপর রায় ঘোষণাকালে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন। আদালতে আসামি তানভিরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, দীর্ঘ সময় পার হলেও তদন্তের মাধ্যমে এ মামলার রহস্য উদঘাটিত না হওয়া এবং অপরাধীদের চিহ্নিত, গ্রেফতার এবং বিচারের সম্মুখীন না করতে পারা নিঃসন্দেহে দুঃখ ও হতাশার বিষয়। জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক, বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার, ভেজাল প্রতিরোধসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রযুক্তিনির্ভর, এলিট ও চৌকস বাহিনী হিসেবে র‌্যাবের অনন্য সফলতা রয়েছে। কিন্তু এই সফলতা কিছুটা হলেও ম্লান হবে, যদি এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও দোষীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করা না হয়। আদালত প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, আদালত প্রত্যাশা করছে যে, র‌্যাব দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে হত্যা রহস্য উন্মোচন, প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে বিচারে সোপর্দ করতে সক্ষম হবে। বিশেষায়িত এই বাহিনী ব্যর্থতার দায়ভার বহন করুক, এটা কারোই কাম্য নয়। এরপর আদালত তার রায়ে, সামগ্রিক ঘটনা ও আইনগত অবস্থা বিবেচনায় সাগর-রুনি হত্যা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে সন্দেহভাজন আসামি মো. তানভির রহমানকে অব্যাহতি দেন। একইসঙ্গে সামগ্রিক অবস্থা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আগামী ৪ মার্চ বা তার আগে এ মামলার তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা এবং অপরাধের সঙ্গে বর্তমান আসামি তানভিরের সম্পৃক্ততার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন হলফনামাসহ দাখিলের নির্দেশ দেন। এর আগে, এ হত্যা মামলা বাতিল চেয়ে সন্দেহভাজন আসামি মো. তানভির রহমানের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন এবং গত ৬ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার শফিকুল আলম হাইকোর্টে হাজির হলে মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানান। এরপর আদালত মামলাটির রায়ের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করেছিলেন। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। পরের দিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় রুনির ভাই বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শেরেবাংলা নগর থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই)। পরে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু গত সাত বছরেও মামলার তদন্তে অগ্রগতির কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। এ মামলায় রুনির বন্ধু তানভির রহমানসহ মোট আসামি আট জন। অন্য আসামিরা হলো−বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ। আসামিদের প্রত্যেককে একাধিকবার রিমান্ডে নেওয়া হলেও তাদের কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাসের আদালতে দাখিলের দিন নির্ধারণ সত্ত্বেও ৬৯ বারের মতো প্রতিবেদন দাখিল পেছায়।