সদরের ফিংড়ীতে অবৈধ ভাবে নদী ও খাল দখল করে মাছ চাষ করায় জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে হাজার হাজার বিঘার ফসলী জমি

0
434

মইনুল ইসলাম:
সাতক্ষীরা সদরের ফিংড়ীতে অবৈধ ভাবে নদী ও সরকারী খাল দখল করে মাছ চাষ করায় জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে জেলার ফিংড়ী, বুধহাটা, শোভনালী ইউনিয়নসহ কয়েকটি বিলের হাজার হাজার বিঘা ফসলী জমি। সঠিক প্রতিকারের অভাবে কৃষি আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় কৃষকরা। আদৌকি এ সমস্যার সমাধান হবে এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর। প্রতি বছরের বৃষ্টি মৌসুমে বৃষ্টির পানি চারি দিক থেকে বিল ও খালে নেমে এলেও খালের পানি নদীতে নিস্কাশন হওয়ার উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকার কারণে বিগত কয়েক বছর ধরে এসকল এলাকার জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক জেলার সকল সরকারী নদী ও খালের নেট-পাটা অপসারণের নির্দেশ দিলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্যাংদহা বাজারের মৎস্য আড়ৎ সংলগ্ন মরিচ্চাপ নদীতে আড়া-আড়ি ভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় খাল ও বিলের পানি নিস্কাশন হতে পারছে না। অন্যদিকে ব্যাংদহা বাজারের স্লুইচ গেটটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট থাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা খালের মুখে আড়া-আড়ি ভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় খাল ও বিলের পানি নদীতে নিস্কাশন হতে পারছে না। ফলে ফিংড়ী ইউনিয়নের ফিংড়ী, গাভা, ব্যাংদহা, জোড়দিয়া, গোবরদাড়ী, হাবাসপুর, কুলতিয়া, বুধহাটা ও শোভনালী ইউনিয়নের বেউলা, শ্বেতপুর, কুন্দুড়িয়া, নৈকাটি, পাইথালী, বসুখালী, কমালকাটি, বালিয়াপুর এলাকার হাজার হাজার বিঘা ফসলী জমি, ঘরবাড়ী, রাস্তাঘাট জলাবদ্ধতার কারণে মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এসকল ইউনিয়ন ঘূরে দেখা গেছে, বিভিন্ন খালে শত শত অবৈধ নেট-পাটা ও বেড় জাল দিয়ে খন্ড আকারে মাছ চাষ করে আসছে প্রভাবশালী ভূমি দস্যুরা। এছাড়া ব্যাংদহা বাজার সংলগ্ন স্লুইচ গেটটির সম্মুখে পরিকল্পিত ভাবে বাঁধ দিয়ে পানি বন্দী রেখে মাছ চাষ করায় ফিংড়ী ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৩ বিলের পানি ও বুধহাটা ইউনিয়নের কুন্দুড়িয়া, চুমুরিয়া ও বেউলা বিলের পানি ধুলিহর ইউনিয়নের ভালুকা চাঁদপুর গ্রামের আমদখালী স্লুইচ গেট দিয়ে বেতনা নদীতে নিস্কাশন হয়। এক সময় এ অঞ্চলের পানি মরিচ্চাপ নদী দিয়ে নিস্কাশিত হতো। কিন্তু বর্তমানে নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ ও এ সরকারী খালের স্লুইচ গেট সংলগ্ন একটি অংশ ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে সারিবদ্ধ ভাবে কয়েকটি পাঁকা স্থাপনা। ব্যাংদহা বাজার মৎস্য সেট সংলগ্ন স্থানে মরিচ্চাপ নদীতে আড়া-আড়ি ভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় পানি নিস্কাশন মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এব্যাপারে নদীরক্ষা, জলাবদ্ধতা নিরসন, খাস জমি পূর্ণউদ্ধার কমিটির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি মহাসিন হোসেন বাবলু বলেন, জেলার অধিকাংশ নদী ও খাল বিভিন্ন ব্যক্তিরা দখল করে রেখেছে। জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল নেট-পাটা অপসারণের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করলেও রাঘব বোয়ালরা রয়ে গেছে ধরা ছোয়ার বাইরে। ফিংড়ী, বুধহাটা, শোভনালী, ধুলিহর ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যদিকে সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ফিংড়ী, ফিংড়ী, বুধহাটা, শোভনালী, ধুলিহর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ এখনো জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পায়নি। এ সকল ইউনিয়নের খাল নদী দখল মুক্ত করা না পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় জলাবদ্ধার হাত থেকে রক্ষা পেতে নদী ও সরকারী খাল উন্মুক্ত করতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।