শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ চাঁদাবাজির শিকার

0
265

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বর্তমানে অনলাইন টিভি, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, আইপি টিভি’র সাংবাদিক পরিচয়ে একটি চক্র সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। এদের হাতে প্রতিনিয়ত অপমান ও লাঞ্চনার শিকার হচ্ছে নানা শ্রেনী পেশার মানুষ। শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী কেউ বাদ পড়ছে না এ প্রতারক চক্রের চাঁদাবাজির হাত থেকে। স¤প্রতি সময়ে এদের অপকর্ম মহামারী আকারে ধারণ করেছে। খুলনাসহ আশপাশের জেলায় বেশ কয়েকজন প্রতারক গ্রেফতার ও মামলা হয়েছে। এছাড়াও ঢাকায় র‌্যাবের অভিযানে দু’টি ভূয়া অনলাইন টিভি অফিস সিলগালা ও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দেশে এ ধরনের অনলাইন ও আইপি টিভি রাখা হবে না। এসকল কথিত সাংবাদিকদের নিয়ে পেশাজীবী সংবাদকর্মি ও প্রশাসন বিব্রত অবস্থায় রয়েছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ৩১ আগস্ট খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার হাজিডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক শেখর চন্দ্র মন্ডলকে মিথ্যা কেলেংকারিতে জড়ানোর ভয় দেখিয়ে কথিত সাংবাদিক পরিচয়ে নগদ ৬০হাজার টাকা চাঁদা নেয় একটি চক্র। এসময় তারা ওই শিক্ষকের বাসা থেকে দুই লাখ টাকার চেক স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এবিষয়ে ভুক্তভোগি শিক্ষক বাদি হয়ে গত ২সেপ্টেম্বর ডুমুরিয়া থানায় ৬জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪/৫জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। প্রতারক চক্রটি বেশ কয়েকদিন আগে থেকে মুঠোফোনের মাধ্যমে এক ছাত্রীকে জড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর অভিযোগ তুলে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছিলো। ওই শিক্ষক জানান, ৩১ আগস্ট এনামুল, পলাশ, লিটন গাজী, আছাদ জোয়ার্দার, নাইম হোসেন ও সোহানসহ ৮/৯ জন আমার বাড়িতে ঢুকে আমার স্ত্রীর সামনে অপমান করে। এরপর তাদের মারমুখি অবস্থা দেখে নিরুপায় হয়ে নগদ ৬০ হাজার টাকা ও দুই লাখ টাকার একটি চেক দিতে বাধ্য হই।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম বিপ্লব জানান, বে-আইনী ভাবে একজন শিক্ষকের ঘরে ঢুকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চাঁদা গ্রহন ও জোর করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণের অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে যার নং-০২। অভিযুক্ত আসামীরা সবাই পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রয়েছে।
গত ৩সেপ্টম্বর রাতে সাতক্ষীরায় এক নিকাহ রেজিষ্টারের কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদাদাবির অভিযোগে সাংবাদিক পরিচয়দানকারি চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বেউলা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ভুয়া আইডি কার্ড, অনলাইন টিভির বুম উদ্ধার করা হয়েছে। এঘটনায় আশাশুনি থানায় মামলা হয়েছে বলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কবীর নিশ্চিত করেছেন। গ্রেফতার হওয়া প্রতারকরা হলো, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বকচরা মোল্লাপাড়ার মন্তাজ মোল্লার ছেলে আব্দুল মান্নান, একই গ্রামের আফছারউদ্দিন সরদারের ছেলে হাফিজুর রহমান, একই উপজেলার আদালতপুর চালতেতলার আবুল কাশেম সরদারের ছেলে রবিউল ইসলাম ও সাতক্ষীরা শহরের কুকরালীর মোকিম হোসেনের ছেলে মোশাররফ হোসেন আব্বাস। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রতারক চক্রটি সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী পরিচয়ে জেলাব্যাপি ব্যাপক চাঁদাবাজি করে আসছিল। নানা শ্রেনী পেশার মানুষকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে তারা চাঁদা আদায় করতো।
গত ২৪আগস্ট খুলনায় সাংবাদিক পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত বাদির অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতারক চক্রটি অনলাইন টিভি’র সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদা চেয়েছেন বলে ওই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন। ওই ব্যবসায়ীর দায়ের করা মামলায় অভিযুক্তরা হলো খালিশপুর এলাকার তানজীর, আলামিন, উদয়, মোতালেব, হাসান। এছাড়া আসামিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ব্যবসায়ীকে নিয়ে কুৎসা ও মানহানীকর প্রচার প্রচারনা চালিয়েছেন।
গত ২৫আগস্ট যশোরের অভয়নগরে ম্যাজিস্ট্রেট ও অনলাইন টিভির সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় খুলনার ৩জনসহ চার প্রতারক গ্রেফতার হয়। তাদের কাছ থেকে ভুয়া আইডি কার্ড ও বুম, ক্যামেরা ও একটি প্রাইভেটকার জব্দ করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া প্রতারকরা হলো খুলনার দৌলতপুর উপজেলার দক্ষিণ পাবলা গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে শাহাদৎ হোসেন (৩৫), খালিশপুর উপজেলার গোয়াখালী গ্রামের বাবর আলীর ছেলে মোস্তফা কামাল(৩৫) ও আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে ইতি খাতুন (২২), ঝিনাইদহের কোটচাদপুর উপজেলার আলুকদিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৪০)। তাদের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় প্রতারনা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা হয়েছে।
গত ৩ সেপ্টম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় ৩সেপ্টেম্বর র‌্যাবের অভিযানে দু’টি ভূয়া অনলাইন টিভি অফিস সিলগালা করা হয়। এসময় সেখান থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দেশে এ ধরনের অনলাইন ও আইপি টিভি রাখা হবে না।