শব্দদূষণের শীর্ষে ঢাকা, এই অত্যাচার বন্ধ হওয়া জরুরি

0
216
ইফতারপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের কুপ্রবৃত্তি কি বন্ধ হবে না?

টাইমস সম্পাদকীয়: রাজধানী ঢাকায় শব্দদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে-এমন কথা হরহামেশাই বলা হয়ে থাকে। তবে কতটা মারাত্মক, তা বোঝা যায় জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) ২০২২ সালের প্রতিবেদনে। ‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২২ : নয়েজ, বেøজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার শব্দদূষণ বিশ্বের যে কোনো শহরের চেয়ে বেশি। এ নগরীর শব্দের সর্বোচ্চ তীব্রতার মাত্রা ১১৯ ডেসিবল। উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের গাইডলাইনে সড়কে শব্দের তীব্রতা ৫৩ ডেসিবলের মধ্যে সীমিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এ হিসাবে ঢাকার বাসিন্দাদের পথে চলতে গিয়ে জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া সীমার দ্বিগুণেরও বেশি মাত্রার শব্দের অত্যাচার সহ্য করতে হয়। শব্দদূষণে রাজশাহী নগরীর অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। শব্দদূষণের কারণে রাজধানীর মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তীব্র শব্দ মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রের ওপর নানা ধরনের প্রভাব ফেলে। যেমন, উচ্চমাত্রার শব্দ হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি রোগের কারণ হতে পারে। উচ্চমাত্রার শব্দ মস্তিষ্কের কোষের ওপর অক্সিজেনের অভাবজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এমনকি উচ্চমাত্রার শব্দ আংশিক বা পূর্ণ বধিরতারও কারণ হতে পারে। এ ছাড়া শব্দদূষণ মানবদেহের রক্তের শর্করার ওপর প্রভাব ফেলে। এর বাইরেও শব্দদূষণের আরও নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এসব সত্তে¡ও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে খুব কমই গুরুত্ব পেয়ে থাকে। বছরে একদিন আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে বিষয়টি নিয়ে কিছু সভা-সেমিনার, কর্মশালা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। এরপর আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না, সবকিছু চলে আগের মতোই। পরিবেশ অধিদপ্তর অবশ্য ২০০৬ সালে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। এতে রাতে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কয়েকটি সড়ককে নীরব এলাকা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যস, এ পর্যন্তই। এর তেমন কোনো কার্যকারিতা লক্ষ করা যায় না। ফলে শব্দদূষণ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি, বরং অবনতি হচ্ছে দিন দিন। এ পরিস্থিতি হতাশাজনক। দেশে শব্দদূষণের প্রধান উৎস যান্ত্রিক যানবাহন। বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি, মোটরসাইকেলের হর্ন অনবরত শব্দদূষণ ঘটিয়ে থাকে। হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো স্পর্শকাতর স্থানেও শব্দদূষণ ঘটছে অহরহ। এ ছাড়া বিভিন্ন যন্ত্র ও মাইক ব্যবহারেও শব্দদূষণ হয়। বিশেষ বিশেষ সময়ে আতশবাজির শব্দে তীব্র শব্দদূষণ হয়ে থাকে। তবে শহরে শব্দদূষণের জন্য যান্ত্রিক যানবাহনই বেশি দায়ী। দায়ী জনসচেতনতার অভাবও। শব্দদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির বিষয়টিও তাই জরুরি।