রূপসায় মটর শ্রমিক ইউনিয়নে সভাপতির চেয়ারে অশ্রমিক : প্রকৃত শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ

0
468

রূপসা প্রতিনিধি:
রূপসা-বাগেরহাট আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নে বহিরাগত অশ্রমিক সভাপতিকে বিতাড়িত করে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মিশন ব্যর্থতায় রূপ নিয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত এডহক কমিটি বিলুপ্ত করে আর এক অশ্রমিক সভাপতির চেয়ার দখল করায় সাধারণ শ্রমিকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। সুবিধা-অসুবিধা বা বিপদে-আপদে শ্রমিক সংগঠনে ঠাঁই মিলছেনা ইউনিয়নের সাধারণ শ্রমিকদের। এমনকি এ ইউনিয়নে প্রতিমাসের চাঁদা আদায়ের আড়াই লাখ টাকা নিমেশে উধাও হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় এমপি’র এক সময়ের ফুটবল খেলার পার্টনার পরিচয়ধারী উপজেলার জাবুসা গ্রামের বাসিন্দা হায়দার আহমেদ রাজু এসব কাজে লিপ্ত রয়েছেন বলে একাধীক অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
সাধারণ শ্রমিকদের অভিযোগ, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এ ইউনিয়নের সভাপতি প্রয়াত মফিজুল ইসলাম মফিকে বিতাড়িত করে চেয়ার দখল করে খুলনা জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি বিএম জাফর। দীর্ঘ ৫বছর ধরে শ্রমিক সংগঠনের অর্জিত সমূদয় টাকা আত্মসাত করায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তাকে সংগঠন থেকে বিতাড়িত করে সাধারণ শ্রমিকরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে এডহক কমিটি গঠন করেন। যা জেডিএল দ্বারা অনুমোদিতও হয়। শ্রমিক সংগঠনের আইন মোতাবেক ৪৫ দিনের মধ্যে এডহক কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে না পারলে ফের নতুন এডহক কমিটি গঠিত হবে।
এদিকে রূপসা-বাগেরহাট আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের এডহক কমিটি গঠনের পর ইউনিয়নের সভাপতি কর্তৃক বিগত ৫ বছরের আত্মসাতকৃত ১ কোটি ২৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা আদায়ের লক্ষ্যে সাধারণ শ্রমিকরা আন্দোলন সংগ্রাম করে। এদিকে পরিস্থিতি শান্ত করতে স্থানীয় এমপির প্রতিনিধি হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এম এম মুজিবর রহমান ১৪ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় ইউনিয়ন অফিসে এসে আন্দোলনকারীদের সাথে বৈঠকে বসেন। তিনি সাধারণ শ্রমিকদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে আগামী এক সপ্তাহ’র মধ্যে ইউনিয়নের অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেবে প্রকৃত শ্রমিকরা। বহিরাগত অশ্রমিকদের কোন জায়গা এখানে হবেনা।
অথচ এডহক কমিটি বিলুপ্ত করে কোন প্রকার নির্বাচন ছাড়াই অশ্রমিকদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। যার সভাপতি হিসেবে মনোনিত হন অশ্রমিক জাবুসা গ্রামের হায়দার আহমেদ রাজু। তিনি সভাপতির চেয়ারে বসেই কখনো নিজেকে স্থানীয় এমপি’র বন্ধু, আবার কখনো তার ফুটবল খেলার পার্টনার হিসেবে দম্ভ প্রকাশ করে চলেছেন। সাধারণ শ্রমিকরা সুবিধা-অসুবিধায় পড়ে ইউনিয়ন অফিসের দ্বারস্থ হতে পরছেনা। নিজের ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করছেন ইউনিয়ন অফিসটিকে।
এদিকে অবৈধভাবে গঠিত কমিটি দ্বারা ইউনিয়ন পরিচালিত হলেও শ্রম অধিদপ্তর (জেডিএল) থেকে চিঠি-পত্র আসছে এডহক কমিটির কাছে। এমনকি এখনো নির্বাচন করার জন্য তাগিতও দিচ্ছেন।
এব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি এ্যাড. এম এম মুজিবর রহমান বলেন, হায়দার আহমেদ রাজুকে ইউনিয়নের সভাপতি করা হয়নি। এমনকি ওই ইউনিয়নের কোন কমিটিও গঠিত হয়নি। রাজুকে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করাসহ সার্বিক কর্মকান্ডে নিযুক্ত করা হয়েছে। এখন যদি সে নিজেকে সভাপতি পরিচয় দেয় বা নিজে সভাপতি সেজে কোন কমিটি করে ইউনিয়ন পরিচালনা করে তা’হলে তা সঠিক কাজ হবেনা। তিনি বলেন, ঈদের পর সকল শ্রমিকদের সমন্বয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে এ ইউনিয়নের কমিটি গঠন করা হবে। এখানে কোন অশ্রমিক বা অপেশাজীবি থাকতে পারবেনা।
এ ব্যাপারে শ্রম অধিদপ্তর খুলনার পরিচালক (অঃ/দঃ) ও রেজিস্টার/রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়ন্স মো. মিজানুর রহমান বলেন, এডহক কমিটিকে বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে আমাদের জানা নেয়। তাছাড়া পেশাজীবি ট্রেড ইউনিয়নে কোন পদে বা সদস্য হিসেবে অশ্রমিকরা আসতে পারবেনা। এধরণের অভিযোগের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ সংগঠনগুলিকে নির্বাচন করার জন্য ইতিমধ্যে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক কারণে কোন অপেশাদার বা অশ্রমিককে ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকর্তা করতে হলে আগে যে কোন উপায়ে তাকে ওই সংগঠনের সদস্যপদ লাভ করতে হবে। অথচ সর্বশেষ গঠিত এডহক কমিটি অথবা এর আগের ৫ বছর ক্ষমতায় থাকা কমিটি দ্বারা উক্ত হায়দার আহমেদ রাজু সদস্যপদ লাভ করেননি