মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা: কেন্দ্রে থাকবে আইসোলেশন-অক্সিজেন ব্যবস্থা

0
151

টাইমস ডেক্স : দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বাড়ছে। এরমধ্যেই আগামী ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এমবিবিএস প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা। এবারের এই ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে আছে নানা রকমের শঙ্কা। একদিকে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী রেখা ও অন্যদিকে পরীক্ষা দিতে গিয়ে সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা থেকে অনেকেই আছেন সংশয়ে। তবে সব শঙ্কা দূরে করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রথমবারের মতো তাই এবার প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবে অক্সিজেন সিলিন্ডার সুবিধাসহ আইসোলেশন কক্ষের ব্যবস্থাপনা। শিক্ষার্থীদের মাঝে যদি কেউ কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে থাকে বা সংক্রমণের উপসর্গযুক্ত থাকে তবে তারা যেন আইসোলেশন কক্ষে বসে পরীক্ষা দিতে পারে তাই এমন পদক্ষেপ। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় এবার সব পরীক্ষার্থীকে মাস্ক পরে আসতে হবে। একইসঙ্গে কেন্দ্রে পরীক্ষার সময় মাস্ক পরে থাকতে হবে সবাইকে। ক্ষেত্র বিশেষে যদি কেউ ভুলবশত মাস্ক না পরে আসেন তবে তাদের কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা হতে পারে। শুধুমাত্র পরীক্ষার্থীদের জন্যেই নয়, একই সঙ্গে তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্যেও পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর। আর এ ক্ষেত্রে প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে যেনো অভিভাবকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবস্থান করতে পারে ও তাদের বসার ব্যবস্থাও করবেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, ‘পরীক্ষা পেছানোর অবস্থাতে আমরা নেই। আর সেই হিসেবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে গত রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে সব কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়ে। পরীক্ষার দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেনো সুষ্ঠুভাবে সবকিছু সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যদি কেউ আশঙ্কা করে থাকেন যে তার মাঝে কোভিড-১৯ উপসর্গ আছে অথবা কারও মাঝে সংক্রমণ থাকে, তবে আমরা তাদের পরীক্ষা আলাদাভাবে বিশেষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নেবো। এ ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো প্রতিটা কেন্দ্রে থাকছে আইসোলেশন কক্ষের ব্যবস্থা। তাপমাত্রা পরিমাপ করে সবাইকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। আমরা আশা করছি সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হবে এবং সবাই যার যার প্রস্তুতি নিয়ে এতে অংশগ্রহণ করতে পারবে।’ জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম আহসান হাবিব বলেন, ‘পরীক্ষা পেছানোর আসলে আর কোনো সুযোগ নেই। আমরা এ বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। আমরা যখন বৈঠক শুরু করি তখন সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বগতি ছিল না কিন্তু সা¤প্রতিক সময়ে তা বেড়েছে। এমন অবস্থায়ও এলে পরীক্ষা পেছানো সম্ভব না। কারণ প্রশ্ন ছাপানো থেকে শুরু করে সব প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে যেখানে সাংবাদিকসহ অন্যরাও তাদের মতামত দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে সবার সঙ্গে কথা বলেই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। দেশে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরে কিছুটা সময় বন্ধ থাকলেও সা¤প্রতিক সময়ে মেডিকেলের বিভিন্ন পরীক্ষা কিন্তু অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় এই পরীক্ষা গ্রহণের তেমন কোনো সমস্যা হবে না বলেই মনে করছি।’ সংক্রমণের সম্ভাবনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনো সময় যে কারো মাঝে তো সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকেই। আর তাই এবার প্রতিটা কেন্দ্রে থাকবে আলাদা আইসোলেশন কক্ষ। পরীক্ষা চলাকালে যদি কারো শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় বা কারও মাঝে কোভিড-১৯ উপসর্গ থাকে তবে তাকে সেখানেই চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। একইসঙ্গে কেন্দ্রের ভেতরে পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার্থীদের ও বাইরে অপেক্ষমাণ অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ অধ্যাপক ডা. এ কে এম আহসান হাবিব জানান, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এবারের মেডিকেল প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর মোট ১ লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন। কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কেন্দ্র সংখ্যা ১৯টি এবং ভেন্যু সংখ্যা ৫৫টি করা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ফটোকপি মেশিনের দোকান বন্ধ রাখা, কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখাসহ অন্যান্য তৎপরতার দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এবার যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন তাদের অবশ্যই মাস্ক পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার পুরোটা সময়েই মাস্ক পরিহিত থাকতে হবে। যদি কেউ মাস্ক না পরে থাকে বা ভুলে না এনে থাকে তবে কিছুক্ষেত্রে মাস্ক সরবরাহ করা হতে পারে। সেটি অবশ্য সীমিত সংখ্যক আকারে। এছাড়াও কেন্দ্রে প্রবেশের সময় যেনো পরীক্ষার্থীদের তাপমাত্রা পরিমাপ করা যায় সেজন্য কেন্দ্রগুলোতে তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থাও রাখা হবে।’ এদিকে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির এমন সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে পরীক্ষার্থীদের মাঝে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে কিনা তা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. মোশতাক ডা. মোশতাক আহমেদ বলেন, ‘সংক্রমণ সেখানেই বৃদ্ধি পেতে পারে বা ছড়াতে পারে যেখানে বদ্ধ স্থানে অনেক মানুষ একে অপরের সংস্পর্শে আসবে। কিন্তু এবার যেভাবে পরীক্ষা নেওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি বলা হয়েছে তেমন করা গেলে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকবে না। এ ক্ষেত্রে তিন ফিট দুরত্ব বজায় রেখে ও যদি পরীক্ষা কেন্দ্রে জানালা খোলা রেখে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করা যায় তবে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি কমে আসবে।’ তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা হলে সবাই যদি মাস্ক পরে থাকে তবে অন্তত সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়াবে না। কিন্তু হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রে একটু আশঙ্কার জায়গা তো থেকেই যায়। কারণ পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অনেকেই কিন্তু গণপরিবহনে ভ্রমণ করেই কেন্দ্রে আসবেন। এমন অবস্থায় যদি গণপরিবহনে মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি না মানা হয় তবে সেখানে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে।’ এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘দেশে করোনা সংক্রমণ এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে এটা সত্য। কিন্তু যদি মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়া হয় তবে জাতির মেধাবী পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবনে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। এসব বিবেচনায় রেখে ২ এপ্রিলই দেশে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে গ্রহণ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার্থীরা ৩ ফুট দূরত্ব রেখে বসবে। পরীক্ষার্থীদের সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, সেখানে স্যানিটাইজার থাকবে। ভেন্যুতে অন্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। অভিভাবকরা যেন ভালো অবস্থায় থাকতে পারে, সে বিষয়গুলোও আমরা নজরে এনেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বছরের ভর্তি পরীক্ষাটি স্বচ্ছতা ও স্বাস্থ্যবিধি ঠিক রাখতে সরকারের পুলিশ বাহিনী, গোয়েন্দা শাখা, শিক্ষা বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব শাখা মিলে টিমওয়ার্ক ও কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে কাজ করছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে ও কেন্দ্রের আশপাশে এলাকার স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখবে। পরীক্ষার আগে সামাজিকমাধ্যমগুলোতে যেন কোনো গুজব ছড়াতে না পারে সে ব্যাপারেও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিশেষ শাখাগুলো কাজ করবে।’ যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখেই এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নির্বিঘেœই অনুষ্ঠিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।