মাস্ক ছাড়া অনুষ্ঠানে গিয়ে সমালোচিত করোনা আক্রান্ত মেয়র আরিফ

0
180

খুলনাটাইমস: উপসর্গ থাকায় করোনা পরীক্ষার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে নমুনা দেয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে একাধিক জনসমাগমপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। মেয়রের এমন আচরণে বিব্রত খোদ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর নগরজুড়ে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষ থেকে মাইকযোগে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়। তবে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানালেও মেয়র নিজেই তা লঙ্ঘন করায় ক্ষুব্ধ সচেতন নাগরিকরা। করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা দেয়ার পর থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে নির্দেশনা দেয়া হলেও তা মানেননি সিসিক মেয়র। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকালে করোনা শনাক্তের নমুনা জমা দেয়ার পর ওইদিন দুপুরে তিনি একটি বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠানের আহŸানে নগরের একটি অভিজাত হোটেলে মধাহ্নভোজে অংশ নেন। এরপর বিকেলে নগরভবনে উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি সভায়ও অংশ নেন। যেখানে নগরভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এসব অনুষ্ঠানেও স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হয়নি। এমনকি মেয়রের মুখে মাস্কও ছিলো না। গত বৃহস্পতিবার রাতে মেয়র ও সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমানের করোনা শনাক্তের খবর জানার পর থেকে এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া সিসিক কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পেশার লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। অনেকেই নিজে থেকে হোম কোয়ারান্টাইনে চলে গেছেন। এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, মেয়র ও প্রধান প্রকৌশলীর করোনা শনাক্তের খবর জানার পর থেকে আমি নিজেই ভয়ে আছি। সিসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে কেবল আমার বোধ হয় এখন পর্যন্ত করোনা হয়নি। কিন্তু এ অবস্থায় অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দেয়াও আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। এতে নগর ভবনের কার্যক্রম ব্যাহত হবে। নমুনা জমা দেয়ার পরও কোয়ারেন্টাইনে না গিয়ে মেয়র ও প্রধান প্রকৌশলীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে বলা আমার জন্য বিব্রতকর। সকলেই দায়িত্বশীল লোক। সবারই স্বাস্থ্যবিধি মানা উচিত। সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মÐল বলেন, নমুনা জমা দেয়ার পর থেকে তো অবশ্যই, এমনকি কারো কোনো উপসর্গ দেখা দিলেও আমরা কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বলে আসছি। সকলেরই তা মেনে চলা উচিত। কিন্তু অনেকেই তা মানছে না। এ কারণে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। জানা যায়, দুদিন আগে জ¦র ও সর্দি হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সকালে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে নমুনা জমা দেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং সিটির প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান। ওই রাতে আসা রিপোর্টে তাদের দুজনেরই করোনা পজিটিভ আসে। সিসিক সূত্রে জানা যায় করোনা নমুনা জমা দিয়ে নগর ভবনে আসেন মেয়র ও প্রধান প্রকৌশলী। তারা নগরভবনের দৈনন্দিন কাজে অংশ নেন। এরপর দুপুরে আবাসন প্রতিষ্ঠান আমিন মোহাম্মদ গ্রæপের আহŸানে নগরের দরগাহ গেইট এলাকার একটি হোটেলে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। এতে সিটি করপোরেশনের ও আমিন মোহাম্মদ গ্রæপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদসহ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এরপর বিকেলে নগর ভবনে আমিন মোহাম্মদ গ্রæপের ‘সিলেট নগরের উন্নয়ন প্রকল্প’ উপস্থাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান। ওই অনুষ্ঠানে সিসিক কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, সচিব ফাহিমা ইয়াসমিন, নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আজিজ, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আ.ন.ম. মনছুফ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হানিফুর রহমান, আমিন মোহাম্মদ গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রমজানুল হক নিহাদ, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও চীফ মার্কেটিং কর্মকর্তা তানভীরুল ইসলামসহ দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অংশ নেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেয়া সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ গত শুক্রবার রাতে বলেন, আমি জানতাম না তিনি (মেয়র) করোনা পরীক্ষার নমুনা জমা দিয়ে এসেছেন। নমুনা দিয়ে এলে তার অবশ্যই এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া উচিত হয়নি। এখন আমাদের সবাইকে তিনি ঝুঁকিতে ফেলে দিলেন। তিনি বলেন, দায়িত্বশীল মানুষরা যদি সচেতন না হন, তাহলে সাধারণ জনগণ কিভাবে সচেতন হবে? এ ব্যাপারে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি। এদিকে গত শুক্রবার রাতে করোনায় আক্রান্ত সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান নগরের মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল আখালিয়া শাখায় তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। এ সময় তাদের হার্টের ইসিজিসহ বিভিন্ন পরীক্ষাও করা হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের ম্যানেজার জর্জেস। তিনি জানান, মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের আইসিউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. জাহিদ হোসেনের তত্ত¡াবধানে রাত ১০টা পর্যন্ত তারা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছেন।