ভবন হলেও মেলেনি অনুমোদন, চিকিৎসক সংকট

0
439
ভবন হলেও মেলেনি অনুমোদন, তীব্র চিকিৎসক সংকট

অনলাইন ডেস্ক
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের জন্য তিনতলা নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় চার বছর আগে।
২০১৪ সালের নভেম্বরে নতুন ভবনটি কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির শুধুমাত্র ৫০ শয্যার খাদ্যের অনুমোদন হয়েছে। তবে চার বছর ধরে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের জন্য চিকিৎসকসহ জনবল নিয়োগের অনুমোদন মেলেনি। এদিকে চিকিৎসক সংকটের ফলে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকের ১০টি পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন চারজন। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৩১ শয্যার এই হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য ২০০১-২০০২ অর্থবছরে সাত কোটি ১৭ লাখ তিনশ’ ৪১ টাকা ব্যয়ে তিনতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর পর নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৪ সালের নভেম্বরে নতুন ভবনটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর দীর্ঘ চার বছরেও প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় বতর্মানে পুরনো ভবনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চলছে। এ ভবনে শয্যা রয়েছে ৩১টি। লোহাগড়া উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। এ কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে রোগী ভর্তির চাপ অনেক বেশি হয়ে থাকে। শয্যার অভাবে তাদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। বহির্বিভাগেই প্রতিদিন ২০০-৩০০ রোগী সেবা নিতে আসেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১০টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র চারজন চিকিৎসক। তাদেরকে আন্তঃবিভাগ, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জনগুরুত্বপূর্ণ এ কমপ্লেক্সেটি কাগজে-কলমে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও অনুমোদন না হওয়ায় ৩১ শয্যায় চলছে চিকিৎসা সেবা। পুরুষ ওয়ার্ডেও ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা মেলে রোগীরা গাদাগাদি করে কোনোরকমে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। আবার কিছু রোগী শয্যা না পাওয়ায় মেঝেতেই চিকিৎসা দিচ্ছেন কর্তব্যরত এক চিকিৎসক। বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে রোগীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। অপেক্ষা করতে গিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
উপজেলার লাহুড়িয়া গ্রামের রেজাউল হক জানান, ভিড়ের কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষায় আছি। কখন ডাক্তার দেখাতে পারব জানি না।
বাটিকামাড়ি গ্রামের হেনা বেগম নামের এক রোগী জানান, সকাল ১০টায় এসেছি। দেড় ঘণ্টায়ও ডাক্তারের সিরিয়াল পাইনি।
মাই গ্রামের প্রশান্ত কুমার দাস ব্যথার ওষুধ নিতে এসেছেন। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে ডাক্তারের দেখা পেলেও বাইরে থেকে তাকে ওষুধ কিনে নিতে বলা হয়েছে।
বহির্বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, বহির্বিভাগে মাত্র দুজন চিকিৎসককে কয়েক শত রোগীকে চিকিৎসা পরামর্শ দিতে হয়। এক মুহূর্তের জন্য চেয়ার থেকে ওঠা যায় না। নিজেরা অসুস্থ হলেও ছুটি নেয়া বা পাওয়া যায় না। এই চাপের মধ্যে ভালো চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। ৫০ শয্যা বাস্তবায়ন হলে আরও ১২জন চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি হতো। তখন রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হতো।
এ ব্যাপারে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার জানান, ৩১ শয্যার এ হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ মাত্র ১০টি। ৫০ শয্যা হলে চিকিৎসকের পদ হবে ২১টি। এছাড়া অপারেশন থিয়েটার ও আরও ১৯টি শয্যার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ অন্যান্য উপকরণ এখনও পাওয়া যায়নি। নতুন ভবন নির্মিত হলেও প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় এবং ১২টি চিকিৎসকের পদসহ অন্যান্য উপকরণের অভাবে ৫০ শয্যা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
নড়াইলের সিভিল সার্জন মুন্সি আসাদুজ্জামান জানান, লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে শুধু ৫০ শয্যার খাদ্যের অনুমোদন আছে। অন্য সবকিছুই চলছে ৩১ শয্যার ঘাটতি জনবল দিয়ে। হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। গত মাসেও এ বিষয়ে একটি চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ৫০ শয্যা অনুমোদনের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি।