বৈশ্বিক মহামারি থেকে মা ও নবজাতককে নিরপদ রাখতে হবে

0
143

ফারহা শেখ বহ্নি :
আজ ২৮ মে বৃহস্পতিবার নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপদ্য বিষয় বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি করোনার দাপটে গোটা বিশ্ব নাজেহাল। তাই এবার মাতৃত্ব দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় করোনা ভাইরাসকে বিবেচনায় রেখে নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘কর্নোভাইরাস থেকে মা এবং নবজাতকদের নিরাপদ রাখুন’। এবার একটু আলোকপাত করা যাক নিরাপদ মাতৃত্ব নিয়ে।

নিরাপদ মাতৃত্বের লক্ষ্য হ’ল ‘মায়েদের সুস্বাস্থ্যের উন্নতি করা, প্রতিরোধ, প্রচার, নিরাময় ও পুনর্বাসনের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যাপক পদ্ধতির মাধ্যমে এই উন্নতি সাধন করা সম্ভব। সুরক্ষিত মাতৃত্বের মূল লক্ষ্য হ’ল মান উন্নত করা, পরিবার পরিকল্পনা এবং মাতৃস্বাস্থ্য পরিষেবাগুলিতে অ্যাক্সেস বৃদ্ধি করা। এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দম্পতিদের একটি কাঙ্খিত এবং নিরাপদ গর্ভাবস্থার জন্য সর্বোত্তম সুযোগ তৈরি করা। জানা গেছে, নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য চারটি স্তম্ভ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে (১) পরিবার পরিকল্পনা (২) প্রসবকালীন যতœ (৩) প্রসবপূর্ব এবং প্রসব পরবর্তি সেবা নিশ্চিত করা ও (৪) প্রয়োজনীয় প্রসূতির যতœ নেয়া। আর নিরাপদ মাতৃশক্তি নিশ্চিত করতে গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের মধ্য দিয়ে নিরাপদ রাখতে সমস্ত মহিলাকে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য এবং সেবার অ্যাক্সেসের বিষয়টি নিশ্চিত করা।

এর মধ্যে রয়েছে, নিরাপদ মাতৃত্বের বিষয়ে শিক্ষা, জন্মপূর্বকালীন যতœ, মাতৃ পুষ্টির প্রচার, সব ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিতরণ সহায়তা, গর্ভাবস্থা, শিশু জন্ম এবং গর্ভপাত জটিলতায় রেফারেল পরিষেবাসহ প্রসেসট্রিক জরুরী অবস্থার বিধান করা। প্রতিটি গর্ভবতী মহিলা একটি স্বাস্থ্যকর বাচ্চা এবং একটি জটিলতা বিহীন প্রসবের আশা করে। তবে, প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৫শ’ মহিলা এবং কিশোরী গর্ভাবস্থা এবং প্রসব সম্পর্কিত সমস্যা থেকে মারা যায়। প্রতি বছর, প্রায় ১০ মিলিয়ন মহিলা এবং কৈশোর বয়সী মেয়েদের গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দেয়। প্রতি বছর, ৩.৭ মিলিয় শিশু জন্মের খুব শীঘ্রই বা প্রথম মাসের মধ্যেই মারা যায়। গর্ভধারণের আগে বা চলাকালীন পর্যাপ্তরূপে চিকিৎসা করা হয়নি এমন রোগসহ মায়ের দুর্বল স্বাস্থ্য হ’ল প্রায়শই নবজাতকের মৃত্যুর কারণ। খুব কম বয়সে এবং কম ওজনসহ জন্মগ্রহণকারী শিশুদের ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। মা এবং তার সন্তানের জন্য সন্তান জন্মদানের ঝুঁকিগুলি হ্রাস করা যায় যদি : ১) একজন মহিলা গর্ভবতী হওয়ার আগে সুস্থ এবং সুস্বাস্থ্যযুক্ত রাখা যায়, ২) প্রতি গর্ভাবস্থায় একজন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর দ্বারা নিয়মিত মাতৃত্বকালীন যতœ নেওয়া হয়, ৩) জন্মটি দক্ষ জন্মদানকারী যেমন ডাক্তার, নার্স বা মিডওয়াইফ দ্বারা সহায়তা করা হয়, ৪) কোন জটিলতা থাকলে মা ও শিশুর বিশেষ যতœ নেওয়া যায় এবং ৫) প্রসবের মা ও শিশুকে নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়।

বেশিরভাগ সরকারই মহিলাদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ সম্পর্কিত কনভেনশনকে অনুমোদন দিয়েছে। কিছু দেশ প্রসূতি সুরক্ষা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলি অনুমোদন করেছে। প্রসূতি সুরক্ষা সম্পর্কিত আইন করেছে। মহিলাদের অধিকার রক্ষায় এই আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলির মধ্যে রয়েছে গর্ভবতী মহিলাদের ও মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মক্ষেত্র সুরক্ষার জন্য একটি আইনী বাধ্যবাধকতা। করোনাভাই মহামারীটি সারা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। গর্ভবতী মহিলা এবং নবজাতকের জন্য কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাব রোধ এবং কমাতে বিশেষ মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সমন্ত গর্ভবতী মহিলাদের প্রসবের আগে, সময়কালে এবং পরে খুবই যতœ পাওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে। গর্ভাবস্থায় কোনও মা থেকে তার শিশুর মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে কিনা, বা শিশুর উপর এটির যে সম্ভাব্য প্রভাব থাকতে পারে তা নির্ধারণের জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই। গর্ভবতী মহিলাদের ভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণগুলি দেখা গেলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

নবজাতকদের বুকের দুধ খাওয়ানোর সুবিধার কথা বিবেচনা করে সমন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। বাংলাদেশ সরকার প্রসূতি যতœ পরিষেবাগুলির বিধানকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গর্ভবতী মহিলা এবং নবজাতকের কোভিড-১৯ নেতিবাচক পরিণতি রোধ ও হ্রাস করার জন্য বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার। কোভিড-১৯ সংক্রমণযুক্ত সমন্ত গর্ভবতী মহিলারই সন্তান জন্মের আগে ও পরে যতœ নিতে হবে। এটি প্রাওয়ার অধিকার রয়েছে তাদের।

খুলনা টাইমস/এমআইআর