বে-টার্মিনাল নির্মাণে নতুন সমীক্ষা হচ্ছে শিগগিরই শুরু হচ্ছে না নির্মাণ কার্যক্রম

0
262

খুলনাটাইমস এক্সক্লুসিভ: না চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল আলোচিত বে-টার্মিনাল নিয়ে নতুন করে সমীক্ষা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর তা শেষ হতে আরো এক বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে। ফলে শিগগিরই বে-টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে না। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে বে-টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করাও সম্ভব হবে না। বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতিতে বন্দর ব্যবহারকারীরা হতাশা। যদিও বে-টার্মিনালটি নির্মাণের প্রস্তাব দিয়ে বিভিন্ন দেশের ৭টি প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে আগ্রহ প্রকাশ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে আগের সমীক্ষাটি যথেষ্ট না হওয়ায় নতুন করে সমীক্ষা চালাতে হচ্ছে বলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকায় সাগর উপকূল ঘেঁষে বে-টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। একে বলা হচ্ছে আগামীর বন্দর। তবে এখনো প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার বে-টামিৃনাল প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়নি। ৮৭১ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি জমি ছাড়াও সমুদ্র থেকে জেগে উঠা আরো এক হাজার ৬০০ একরসহ দুই হাজার ৫০০ একর জমিতে টার্মিনালটি নির্মাণের কথা রয়েছে। যা চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বড় হবে।
সূত্র জানায়, দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামো ৪৫০ একর জমির ওপর নির্মিত। এ বন্দরে বর্তমানে সাড়ে ৯ মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। তবে নতুন টার্মিনাল হলে ভিড়তে পারবে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের জাহাজ। ফলে বন্দরে প্রতি বছর যে পরিমাণ আমদানি-রফতানি পণ্য হ্যান্ডলিং হচ্ছে, বে-টার্মিনালে হ্যান্ডলিং হবে তার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি পণ্য। বে-টার্মিনালের জন্য ইতিমধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাতে ইয়ার্ড ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হলেও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি আটকে থাকায় কাজটি থমকে আছে। তবে অবশিষ্ট ৮০৩ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমতি মিলেছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।
সূত্র আরো জানায়, বে-টার্মিনাল নির্মাণের অর্থ বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষে একা জোগান দেয়া সম্ভব নয়। সেজন্য প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে তা কারা বাস্তবায়ন করবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। যদিও বিদেশি ৭টি প্রতিষ্ঠান বে-টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিষ্ঠান ৭টি হলো- পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটি (পিএসএ), সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড, সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে, ভারতের আদানি গ্রুপ, ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস, চীনের চায়না মার্চেন্টস গ্রুপ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই গ্রুপ।
এদিকে বে-টার্মিনাল নির্মাণ বিলম্ব প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, বে-টার্মিনালটি কবে হবে বুঝতে পারছি না। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন যে হারে বাড়ছে, তাতে বর্তমান অবকাঠামো দিয়ে তা সামাল দেয়া সম্ভব নয়। তাই বে-টার্মিনাল নির্মাণের বিকল্প নেই। দ্রুত এর কাজ শুরু করতে হবে। কারণ এখন পণ্য খালাসের জন্য প্রতিটি জাহাজকে গড়ে ৭-৮ দিন এমনকি আরো বেশি সময় বন্দরে বসে থাকতে হয়। নতুন টার্মিনাল না হলে এ সমস্যা দিন দিন আরো প্রকট হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বে-টার্মিনাল দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত চট্টগ্রাম বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল আলম জানান, প্রকল্পটির কাজ কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করতে গেলে নতুন করে সমীক্ষা চালাতে হবে। ইতিমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের ডিটেইলড ফিজিবিলিটি স্টাডি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কাজে আগ্রহী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রস্তাব (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) চাওয়া হয়েছে। ৫ ডিসেম্বর ছিল প্রস্তাব জমা দেয়ার শেষ দিন। মোট ২১টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হবে। সমীক্ষার সময় ৯ মাস ধরা হয়েছে। আর এ কাজের জন্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিগত
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৬ সালে জার্মান প্রতিষ্ঠান শেল হর্নের নেতৃত্বে ওই দেশের এইচপিসি হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং এবং বাংলাদেশের কেএস কনসালট্যান্টস লিমিটেড যৌথভাবে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা) করে। তবে তখন পিপিপি ও জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ করা হবে- এমন সিদ্ধান্ত ছিল না।