বিএসএফের আগ্রাসী আচরণ

0
548

পদ্মা নদীতে ইলিশ মাছ শিকারকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিএসএফের একজন সদস্য নিহত হয়েছেন বলে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা সদরের বালুঘাট এলাকায় পদ্মা ও শাখা বড়াল নদের মোহনায় এ ঘটনা ঘটে।
পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে পদ্মায় আটক ভারতীয় নাগরিককে হস্তান্তর করা হলে এই অনভিপ্রেত ঘটনা এড়ানো যেতো বলে আমরা মনে করি। বিএসএফ সদস্যরা সবসময়ই প্রফেশনাল দায়িত্বের বাইরে গিয়ে বাড়াবাড়ি ও আগ্রাসী আচরণ করে থাকে। বালুঘাটের পদ্মা শাখায় কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট- ১. ভারতীয় জেলে বাংলাদেশের পানি সীমায় প্রবেশ; ২. বিএসএফের স্পিডবোট নিয়ে অনুমতি ছাড়া শূন্য রেখা অতিক্রম করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়া; ৩. আটক ভারতীয় নাগরিককে ছেড়ে দিতে বিজিবিকে জোর করা; ৪. আটক ভারতীয় জেলেকে বিএসএফের ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা; ৫. বাধা দিলে বিএসএফ সদস্যরা বিজিবির ওপর গুলি করা। এসবই বিএসএফের চরম বাড়াবাড়ি ও অপেশাদারিত্বের পরিচয় বলে আমরা মনে করি।
এছাড়াও কাঁটা তারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে বিএসএফ জওয়ানরা আগেও অসংখ্যবার সীমান্তনীতির তোয়াক্কা না করেই বাংলাদেশ সীমান্তে অনধিকার প্রবেশের ঘটনা ঘটিয়েছে। গত এক দশকেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের নির্মম নির্যাতন আর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৩১৯ জন বাংলাদেশি। বেশির ভাগ ঘটনায়ই দেখা গেছে, জোরপূর্বক বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে গুলি করে হত্যা এবং সীমান্ত থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতন শেষে হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় সবসময়ই বিজিবি উদ্যোগী হয়ে পতাকা বৈঠক ডেকেছে, চেষ্টাও করেছে সমস্যা সমাধানের। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি, থামছে না ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের এমন আগ্রাসী কর্মকা-।
কয়েকদিন আগে কুমিল্লা সীমান্তে মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে ভারতের অভ্যন্তর ঢুকে পড়ে র‌্যাব সদস্যসহ পাঁচজন। যাদের বিএসএফ সদস্যরা আটক করে পরিচয় পাওয়ার পরও নির্মম নির্যাতন করে। কিন্তু বিজিবি সদস্যরা পতাকা বৈঠকের মাধ্যমেই শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনে। অথচ সর্বশেষ রাজশাহীর চারঘাটে বিএসএফ সদস্যদের অনধিকার প্রবেশের ঘটনায় বিজিবির পতাকা বৈঠকের আহ্বানকে উপেক্ষা করে গুলি ছোড়ে বিএসএফ। আত্মরক্ষার্থে বিজিবিও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে বিএসএফের এক সদস্য নিহত হয় বলে দাবি করে ভারত। তাদের দাবি সত্যি হয়ে থাকলে এটা অবশ্যই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা বলে আমরা মনে করি। যদিও ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, এ ঘটনায় বিএসএফের একজন মেজর নিহত হয়েছে। বিজিবির কর্মকর্তা ফেরদৌস সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, বিএসএফে মেজর বলতে কোনো পদবিই নেই।
বিজিবির শান্তিপূর্ণ পতাকা বৈঠকের আহ্বান উপেক্ষা করে গোলাগুলির ঘটনাকে বিএসএফের আগ্রাসী মনোভাব বলেই মনে করছি আমরা। সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবির সাহসী ও বন্দুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আমরা গর্ববোধ করছি।