পাইকগাছায় মৌসুমের শুরুতেই চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ: উদ্যোগ নেই ব্যবস্থা গ্রহনে

0
466

শেখ নাদীর শাহ্, কপিলমুনি(খুলনা):
সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সদিচ্ছা সত্ত্বেও কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছেনা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ। মৌসুমের শুরুতেই পাইকগাছার বিভিন্ন এলাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা চিংড়ির ওজন বাড়াতে শুরু করেছে পুশ কার্যক্রম। বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চিংড়ীর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠায় দরপতন থেকে শুরু করে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে সম্ভাবনাময় হিমায়িত চিংড়ি খাতটি। নানা প্রতিকূলতায় শুরু হওয়া এ খাতটি তদারকিতে নজরদারি বাড়াতে বদ্ধপরিকর সরকার অপরাধ দমনে আইনেও সংশোধনী এনেছে। এরপরও বন্ধ হচ্ছেনা। ফলে ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় খাতটি।
জানাগেছে,সরকার সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় করে থাকে সাদাসোনা খ্যাত হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি খাতে। সুন্দরবন উপকূলীয় খুলনা চিংড়ি উৎপাদনের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র। দেশের উৎকৃষ্ঠমানের চিংড়ি উৎপাদন হয় এই জনপদে।
পাইকগাছা মৎস্য অফিস সুত্র জানায়,উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১ শ’রও বেশি চিংড়ি ডিপো(ক্রয় কেন্দ্র) রয়েছে। চিংড়ি ও কাঁকড়ার বাজারজাত করতে সরকারী নিয়মনীতি মেনেই ডিপো স্থাপনের কথা থাকলেও অধিকাংশ ডিপো তা মানছেনা। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বছরের পর বছর তারা ডিপো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ডিপো তৈরীতে সরকারী ভাবে ২৯ টি শর্ত পূরণ ও তা বাস্তবায়নের পরে কেবল ব্যবসায়ীকে সরকারীভাবে ডিপোর লাইসেন্স দেয়া যাবে। এছাড়া শর্ত পূরণ সাপেক্ষে সরকারি নির্দিষ্ঠ ফি প্রদান পূর্বক প্রতিবছর ডিপো মালিকদের লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। আর পুরো বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বা তার অফিস।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, চলতি অর্থ বছরের প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হলেও অধিকাংশ ডিপো মালিক তাদের লাইসেন্স নবায়ন না করেই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে আরো কয়েক শ’ অবৈধ চিংড়ি ডিপো। লাইসেন্স বিহীন ব্যবসায়ীদের দৌরাতেœ বানিজ্যিকভাবে টিকে থাকতে বৈধ ব্যবসায়ীরাও অপদ্রব্য পুশকৃত চিংড়ি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
অধিকাংশ ডিপোতে ব্যবসা টেকাতে পুশ করা হচ্ছে অপদ্রব্য। এছাড়া তা পানিতে ভিজিয়ে পাঠানো হচ্ছে জেলা সদরের বিভিন্ন প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানী গুলোতে। পুশ প্রবনতা প্রশমনে বছরের বিভিন্ন সময় জেলা সদর সহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হলেও এক অজ্ঞাত কারণে উপজেলার তৃণমূলে কার্যক্রম নেই আদালতের। লাইসেন্স বিহীন ও লাইসেন্সধারী বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা স্থানীয় কতিপয় প্রশাসন নিয়মিত মাসোহারা কিংবা চুক্তিভিত্তিক চালিয়ে যাচ্ছেন পুশ ব্যবসা। দীর্ঘ দিন ধরে চলমানও অসাধু ব্যবসায় অভিযোগও নেই কারো।
এরআগে বছরের বিভিন্ন সময়ে পুশবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ভ্রাম্যমান আদালত কিংবা মৎস্য অফিসের পক্ষে কখনো যৌথ আবার কখনো পৃথক অভিযান পরিচালিত হলেও চলতি অর্থ বছরের এখন পর্যন্ত কার্যত কোন পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। এতে করে অপদ্রব্য পুশ কার্যক্রমের প্রশাসরতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সংকট নিয়ে উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটি ও উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় ব্যাপক আলোচনা হলেও নেয়া হয়নি কার্যত কোন পদক্ষেপ।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এব্যাপারে সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বাজার,মৎস্য ডিপো,বাসা-বাড়ি,উৎপাদন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার আশায় দেদারছে চিংড়িতে পুশ করছেন। কোন কোন এলাকায় চিংড়িতে পুশ করাতে মহিলা ও শিশু শ্রমিকদেরও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। একাধিক ডিপোতে গিয়েও দেখা যায়,প্রকাশ্য দিবালোকে বসেই চিংড়িতে পুশ করছেন তারা।

খুলনা জেলার সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো চিংড়ী । আর এ চিংড়ী শিল্পটি সকলের চোখের সামনে ধংস্ব হতে চললেও কারোর কোন মাথা ব্যাথা নেই।জনপ্রতিনিধিরা তারা তাদের নির্দিষ্ট ফোরামে কথা বললেও রহস্যজনক ভাবে এর কোন প্রতিকার হচ্ছেনা।
এব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাসের প্রতিক্রিয়া জানতে তাকে ফোন দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।