পল্লী জনগোষ্ঠির উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বিআরডিবি

0
99

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাটাইমস
পল্লী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনৈতিকে সমৃদ্ধ করে চলছে সরকারের বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত পল্লী প্রতিষ্ঠায় বিআরডিবি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই পল্লী বাংলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় খুলনার দাকোপ উপজেলা বিআরডিবিও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
দাকোপ বিআরডিবি কার্যালয় সূত্রমতে, অংশীদারিত্বমূলক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের (পিআরডিপি তৃতীয় পর্যায়) আওতায় গ্রামীণ ক্ষুদ্র অবকাঠামো নির্মাণ ও তৃণমূল পর্যায়ে গ্রামীণ অর্থনৈতিকে সমৃদ্ধ করতে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে শুরু করে অদ্যবধি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে গ্রন্থাগার স্থাপন, সুপেয় পানি সংরক্ষণের জন্য পানির ট্যাংক বিতরণ, ইট সোলিং রাস্তা, কালভার্ট, অযুখানা নির্মাণ ও স্কুলে আসববপত্র প্রদান। এর মধ্যে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় মানুষের মাঝে ৩৫০টি পানির ট্যাংক বিতরণ অন্যতম।
সূত্রটি আরও বলছে, করোনা মহামারীতে ১৯জন উদ্যোক্তার মাঝে ৩৫ লাখ টাকার বিশেষ প্রনোদনার ঋণ বিতরণ করা হয়। এছাড়া সাধারণ প্রক্রিয়ায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪৬টি সমিতি এবং দলের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। যার মধ্যে খেলাপি ঋণ রয়েছে ২ লাখ টাকা। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় জেলার মধ্যে পরপর দুইবার সার্বিক কার্যক্রমে প্রথম স্থান এবং গত অর্থবছরে শুদ্ধাচার পুরষ্কার অর্জন করেন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা।
বিআরডিবির অন্তর্ভুক্ত সুতারখালী পূর্বপাড়া ভিডিসি’র সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় আইলা বিধ্বস্ত সুতারখালী গ্রামে অংশীদারিত্বমূলক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনে গ্রন্থাগার স্থাপন ও সুপেয় পানির জন্য ট্যাংক বিতরণ করায় খুশি। এছাড়া সরকার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষে সুতারখালী গ্রামকে সুন্দর ও মডেল গ্রামে রূপান্তর করতে আরও প্রকল্প দরকার। বর্তমানে সেবা প্রদান কার্যক্রম দ্রুত সময়ের মধ্যে হওয়ায় জনসাধারণের ভোগান্তি কমছে। অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য বিআরডিবির সঙ্গে সুতারখালী পূর্বপাড়া ভিডিসি সমন্বিতভাবে কাজ করে যাবে।
গাজীপাড়া ভিডিসির আওতায় কালাবগী সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার স্থাপন করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিএম শহিদুল্লাহ বলেন, প্রত্যন্ত এ অঞ্চলে বর্তমান প্রজন্মের কাছে গ্রন্থাগারটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কারণ বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে সঠিক জ্ঞান চর্চা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এখন স্কুলে স্থাপিত গ্রন্থাগারে বিশিষ্ট লেখকদের বই পড়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে। তিনি আরও বলেন, মানুষের হাতের কাছে যদি বই পৌঁছে দেয়া যায় তাহলে এটি আরও কার্যকরী হবে। একজন বই হাতে নিলেই তার মধ্যে ইতিবাচক একটা পরিবর্তন আসবে এটা খুব স্বাভাবিক।
জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড় বলেন, বিআরডিবি’র আর্থায়নে পিআরডিপি প্রকল্পের আওতায় দু’টি ইউনিয়নের পাড়ার রাস্তা নির্মাণ, পানির ট্যাংক বিতরণ, স্কুলে আসববপত্র প্রদান ও সমিতিভুক্ত উকারভোগীদের স্বাবলম্বী করতে সহজলভ্য ঋণ বিতরণ করে। তাদের এই কর্মকাণ্ড প্রত্যন্ত এ অঞ্চলের জন্য প্রশংসনীয়।
দাকোপ উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা এম রুবাইয়াৎ আল আজাদ খুলনাটাইমসকে বলেন, জনগণ ও জনপ্রতিনিধি সকলের অংশগ্রহণে পিআরডিপি-৩ প্রকল্পটি অত্যন্ত সফলতার সাথে বাস্তবায়িত হচ্ছে। গ্রামীণ জীবনমানের যে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে, তার পেছনে অংশীদারত্বমূলক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের অবদান রয়েছে। গ্রাম উন্নয়নে সম্পৃক্ত সকলের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক সেবা নিশ্চিত করেছে প্রকল্পটি। গ্রামীণ স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ার লক্ষ্যে জাতির পিতা কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর পল্লী উন্নয়ন দর্শনকে কেন্দ্র করে বিআরডিবি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই পল্লী বাংলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলার সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়নের ৪৯টি গ্রামে পিআরডিপি-৩ প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৮০টি স্কীম বাস্তবায়নে আশি লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। পল্লী উন্নয়নে বিআরডিবি-এর মাধ্যমে দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ করা হচ্ছে।