নিবন্ধন নবায়নের আবেদন কোনও হাসপাতালই যেন বন্ধ হয়ে না যায়

0
234

বেসরকারি হাসপাতালের নিবন্ধন নবায়নের নির্ধারিত সময় শেষ হলেও প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রতিষ্ঠান নবায়নের জন্য আবেদনই করেনি। এদিকে ১২ হাজার ১২৭টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা পড়লেও নবায়ন হয়েছে ৪ হাজার ৫১৯টি। আর নবায়নের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে ৭ হাজার ৬০৮টি হাসপাতালেল নিবন্ধন। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, নবায়নের সময় বাড়ানো না হলে আবেদন না করা এই সাড়ে তিন হাজার হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এখন থেকে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হবে। টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব বলেছেন, যারা আবেদন করেনি, তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে। এটা ঠিক, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম মেনেই চলতে হয়, অবৈধভাবে চলার সুযোগ নেই; যদিও এতদিন অনেক বেসরকারি হাসপাতাল অবৈধভাবে পরিচালিত হয়ে এসেছে। আর এটি উদ্ঘাটিত হয়েছে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে।
করোনা চিকিৎসায় যুক্ত রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠলে দেখা যায়, হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ প্রায় ছয় বছর নিবন্ধন নবায়ন করেনি। এরপর স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা শুরু হলে দেখা যায় বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতালের নিবন্ধনই গত ৩-৪ বছর ধরে নবায়ন করা হয়নি। উল্লেখ্য, হাসপাতালের নিবন্ধন প্রতি বছরই নবায়ন করার বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। তারপরও নবায়ন না করে অনেক হাসপাতালের কার্যক্রম যে অব্যাহত ছিল, এর দায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এড়াতে পারে না। কারণ এটি দেখার দায়িত্ব তাদের। এ ধরনের অনিয়মের ফলে চিকিৎসাব্যবস্থায় নানা বিরূপ প্রভাব পড়ে। স্বেচ্ছাচারিতার জন্ম নেয়। রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণার ঘটনা এর একটি বড় প্রমাণ। এ অনিয়ম বন্ধ করা জরুরি। প্রতিটি হাসপাতালকে রাষ্ট্রের নিয়মকানুন মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এর কোনো ব্যত্যয় মেনে নেয়া যায় না।
কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতালের অভিযোগ, স্বাস্থ্য অধিদফতর হাসপাতালের নিবন্ধনের জন্য যে লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করেছে, তা অত্যন্ত বেশি। উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এক পরিপত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন ফি এবং নিবন্ধনের নবায়ন ফি ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বনি¤œ ৫০ হাজার এবং সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য এ অর্থ খুব বেশি হওয়ার কথা নয়। কারণ তাদের বেশির ভাগই ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করে থাকে এবং রোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন চিকিৎসার ফি নেয়া হয় অত্যধিক। তারপরও ছোটখাটো ক্লিনিকের জন্য নিবন্ধনের নবায়ন ফি তাদের আয়ের তুলনায় বেশি হয়ে থাকলে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ফি পুনর্নির্ধারণ করা যেতে পারে। আমরা চাই না, নিবন্ধন ফি পরিশোধ না করতে পারার কারণে সাড়ে তিন হাজার হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাক। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে দেশের চিকিৎসা খাতে। হাসপাতালগুলো যাতে নিবন্ধন নবায়ন ফি পরিশোধ করে যথাযথ নিয়ম মেনে পরিচালিত হয়, সে ব্যবস্থা করা হোক। প্রতিটি হাসপাতাল ও ক্লিনিক প্রতি বছর নিবন্ধন নবায়ন করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে কিনা, তা স্বাস্থ্য অধিদফতর পর্যবেক্ষণ করবে, এটাই কাম্য।