নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অভিজ্ঞ ও সিনিয়র শিক্ষক ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে

0
319

খুলনাটাইমস এক্সক্লুসিভ: দেশের নতুন পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে সিনিয়র ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের তীব্র সঙ্কট বিরাজ করছে। যদিও বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির নেতৃত্বে পাঠদান ও গবেষণায় অধ্যাপক পদের শিক্ষক জরুরি। কিন্তু প্রফেসর পর্যায়ের শিক্ষক ছাড়াই নতুন পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিভাগপ্রতি গড়ে একজন অধ্যাপকও নেই। এমনকি কোনো কোনোটিতে অনুষদপ্রতিও একজন অধ্যাপক নেই। তার মধ্যে রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অভিজ্ঞ শিক্ষক ছাড়া উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কিন্তু অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভিজ্ঞ শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। এর কারণ ঢাকা, বুয়েট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ক্যাম্পাস ছেড়ে শিক্ষকরা নতুন বিশ^বিদ্যালয়ে যেতে চান না। বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট অধ্যাপক রয়েছেন ৩ হাজার ৯০৬ জন। তার মধ্যে শুধু ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ কৃষি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েই (বুয়েট) কর্মরত ২ হাজার ২৭৭ জন। অর্থাৎ এই ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়েই আছেন মোট অধ্যাপকের ৫৮ শতাংশ। আর শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠিত ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন ৩ হাজার ১৪১ জন, যা মোট অধ্যাপকের ৮০ শতাংশ।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৭ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট ১৭৩ শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক ছিলেন মাত্র একজন। বর্তমানে ২৪টি বিভাগে শিক্ষক রয়েছেন ১৮০ জন। তার মধ্যে অধ্যাপক রয়েছেন মাত্র দুজন। অর্থাৎ দেড় বছরেও প্রফেসর সংকটের চিত্র তেমন পাল্টায়নি। একই অবস্থা পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে ১৩২ জন শিক্ষকের মধ্যে কোনো অধ্যাপকই ছিলেন না। বর্তমানে ২১টি বিভাগে শিক্ষকসংখ্যা প্রায় ১৭৫। এর মধ্যে দুজন স্থায়ী অধ্যাপক ও একজন অস্থায়ী অধ্যাপক রয়েছেন। ২০১৭ সালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮০ শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক ছিলেন মাত্র তিনজন। বর্তমানে বিশ^বিদ্যালয়টির ২১টি বিভাগেই জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের তীব্র সংকট রয়েছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮৯ শিক্ষকের মধ্যে ৪ জন অধ্যাপক, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ৮ জন অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪০ জন শিক্ষকের মধ্যে ৫ জন অধ্যাপক এবং মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯০ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ৭ জন অধ্যাপক রয়েছেন। তাছাড়া রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫ জন শিক্ষকের মধ্যে কোনো অধ্যাপক নেই।
সূত্র আরো জানায়, নতুন পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলো বিজ্ঞপ্তি দিয়েও যোগ্য শিক্ষক পাচ্ছে না। সব নতুন বিশ^বিদ্যালয়েই একই অবস্থা।
বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে হাতে গোনা কয়েকজন অধ্যাপক রয়েছেন। সম্প্রতি কয়েকজন শিক্ষককে অধ্যাপক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকার বাইরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুযোগ-সুবিধা অনেক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি। ঢাকার বাইরে যানজট, বায়ুদূষণ নেই। সব মিলিয়ে অনেক ভালো পরিবেশ। কিন্তু তারপরও অভিজ্ঞ শিক্ষকরা সেখানে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক সংকটের কথা বলা হচ্ছে সবগুলোই ঢাকার বাইরে অবস্থিত। কিন্তু ঢাকার শিক্ষকরা শিক্ষকতার বাইরে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়া, পরামর্শক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। ঢাকার বাইরে ওসব সুযোগ নেই। এ কারণে তারা ঢাকা ছাড়তে আগ্রহী হন না। যদিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক থাকা খুবই জরুরি। প্রভাষকরা মূলত এই জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের কাছ থেকেই প্রশিক্ষণ পান।