ধর্ষণ ও নারী-শিশু নির্যাতন শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি

0
537

কামরুল হোসেন মনি : খুলনায় ধর্ষণ ও নারী-শিশু নির্যাতনের সংখ্যা শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মহানগরীসহ ৯ উপজেলায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫২ জন। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৭৩টি। যার মধ্যে উপজেলায় ধর্ষণের সংখ্যা ২৭টি ও নারী-শিশু নির্যাতনের সংখ্যা হচ্ছে ১০৪টি।
জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বিভিন্ন সভায় পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এর বাইরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি)তে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৫২ জন। যার মধ্যে নির্যাতনের সংখ্যা রয়েছে ১৮৮টি।
জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় পুলিশের উপস্থাপিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, খুলনায় শহরের চেয়ে গ্রামে ধর্ষণের পাশাপাশি নির্যাতনের সংখ্যা বেশি। গত জানুয়ারি মাসে প্রতিবেদনে জানানো হয়, মহানগরীর আটটি থানায় ধর্ষণ ১টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ৫টি ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ সময়ে উপজেলাগুলোতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪ জন এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ৯টি মামলা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রতিবেদনে মহানগরী ৮টি থানায় ওই মাসের চেয়ে বেড়েছে ধর্ষণ ও নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যার মামলা। ধর্ষণের সংখ্যা ৫টি এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা রয়েছে ১১টি। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে জেলার ৯টি থানায়ও চিত্র একই রকম। গত জানুয়ারি মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে বেড়েছে নারী-শিশু নির্যাতনের মামলা। ২টি নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১টিতে।
দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নগরীর ৮টি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয় ৬৯টি এবং উপজেলা থানাগুলোতে মামলার সংখ্যা ১০৪টি।
এ সময়ে শহরে ধর্ষণের ঘটনায় মামলার হয়েছে ২৫টি, উপজেলাগুলোতে হয়েছে ২৭টি।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি)র সূত্র মতে, শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীরা চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন ২৫২ জন। এর মধ্যে নির্যাতনের সংখ্যা রয়েছে ১৮৮টি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, সব ধর্ষণের মামলাগুলোয় দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি প্রদান করতে হবে। আর নারীদের নিজেরে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হবে যাতে স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার নারীরা প্রতিবাদ করতে পারে। অনেক স্ত্রী স্বামীর ঘরছাড়া তাদের কোনো জায়গা থাকে না বলেই স্বামীর বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না। এ জন্য নারীদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য ব্যবস্থা করা ও ধর্ষণকারীদর দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে পারলে এ ধরনের ঘটনা অনেকটা হ্রাস পাবে।
নারী ও শিশু নানান ধরনের নির্যাতনের শিকার ও হারিয়ে যাওয়া শিশু ও নির্যাতিতদের পাশে রয়েছে নগরীর খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার। অভিযোগ পাওয়া মাত্র অসহায় নারী ও শিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা দিচ্ছেন। সহিংসতা বন্ধের পাশাপাশি অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে গ্রহণ করছে কার্যকর পদক্ষেপ। ঠিকানাহীন শিশুকে পৌঁছে দিচ্ছে বাবা-মায়ের কোলে। কোনো বিরতি ছাড়াই ২৪ ঘন্টা সেবা প্রদান করছে এ কেন্দ্রটি। অভিযোগ হেলপ লাইন ‘৯৯৯’ সার্ভিস এর মাধ্যমে অনেক নির্যাতিত নারী অভিযোগ দিচ্ছেন। ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানার পাশে কেএমপি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার কার্যক্রম শুরু করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রাপ্ত ভিকটিমের সংখ্যা ২১৫ জন। এর মধ্যে শিশু ভিকটিমের সংখ্যা ১১২ জন, নারী ভিকটিমের সংখ্যা ৬৫ জন ও ছেলে শিশু ভিকটিমের সংখ্যা ৩৮ জন। এ সব ভিকটিমের অভিযোগের ভিত্তিতে যৌতুক, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ নানা ধরনের মামলা দায়ের করা হয়। অনেক মামলার বিষয়ে থানার মাধ্যমে আমাদের কাছে আসা ভিকিটমকে এই সেন্টারের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে। কেএমপি ভিকটিম সাপোর্ট এর ইন্সপেক্টর ফারজানা ববী বলেন, বর্তমানে পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগের সংখ্যা বেশি আসছে। ভুক্তভোগী নারীরা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে অভিযোগ দায়ের করছেন।