ধর্ষণের পর ছবি তুলে ভাইরালের হুমকিতে ১ হাজার টাকা আদায়

0
221

টাইমস প্রতিবেদক:
পাশবিক নির্যাতনের ৫ মাস পর খুলনায় রাজপথে দাঁড়িয়ে নৃশংস ঘটনার বর্ণনা দিলেন খুলনার এক গৃহবধূ। মে মাসে রোজার ভিতরে নিজ ঘরে, ৫ বছরের নিজ সন্তানের সামনে পাশবিক নির্যাতনের স্বীকার হন এই নারী। আর এখন ৫ বছরের পুত্র সন্তান ও স্বামী নিয়ে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন তিনি। এই ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার হয় ৩ আসামী। তার মধ্যে ১ জন জামিনে বের হয়ে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এদিকে মামলার চার্জশীট হয়নি এখনও। পুলিশ বলছে, আগামী সপ্তাহ খানেকের মধ্যে দেওয়া হবে চার্জশীট। আর হুমকির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।

২মে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যালয়ের আধা কিলোমিটার এর ভিতরে খানজাহান আলী রোডের বাহাদুর লেনের এই বাড়ির নিচতলায় দিনের বেলায় ধর্ষনের স্বীকার হন গৃহবধূ। ধর্ষনের পর তার ছবি তুলে সেটিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে এক হাজার টাকাও আদায় করে দুষ্কৃতকারীরা। নিজের শ্বশুরের চক্রান্তে পাশবিক নির্যাতনের স্বীকার এই নারী। শ্বশুড়ের অন্যায় কাজে সমর্থন না দেওয়াই তার আজ এই পরিনতি দাবি তার। তার দাবি শ্বশুড় অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এবং নৈতিক ভাবে খারাপ একজন মানুষ। সে গৃহবধূর মাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
গৃহবধূর গ্রামের বাড়ী সাতক্ষীরা। গত বছর পারিবারিকভাবে নগরীর কেএমপির নিকট ফার্মেসী ব্যবসায়ীর সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের ছয় মাস পর তার শ্বশুড় তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তার ছবির সাথে অন্যছবি যুক্ত করে অপপ্রচার চালায় এবং পত্রিকায় তার স্বামীকে ত্যাজ্য করার কথা বলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেও তার সন্তানের আইনিভাবে বৈদ পাওনা পরিশোধ করেননি।
তারপরও স্বামী স্ত্রী ও ৫ বছরের পুত্র সন্তান নিয়ে বসবাস করছিলেন নগরীর খানজাহান আলী রোডের বাহাদুর লেনের শান্তিনীড় নামের চারতলা বাড়ির নিচ তলায়। ০২ মে বেলা ১১টায় বাসা দেখার কথা বলে ঘরে প্রবেশ করে দুই ব্যক্তি। তারপর দরজা দিয়ে তার সন্তানকে হত্যা করে ফেলবে বলে তাকে ধর্ষন করে। পরে তার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেবার ভয় দেখিয়ে ৫ হাজার টাকা দাবি করে। পরে তার অনুনয় বিনয়ে ২ হাজার টাকা দাবি করে। নিরুপায় হয়ে সে এক হাজার টাকা দেন দুষ্কৃতকারীদের। এই ঘটনা জানাজানি হলে তার সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়।
এই ঘটনায় পরের দিন ৩ মে খুলনা থানায় মামলা করে ভুক্তভুগী। মামলা নং-০১, তারিখ ০২.০৫.২০। অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা করেন তিনি। মামলায় পাশ্ববর্তী এলাকার নাহিদুজ্জামান, আলী ইমরাজ জুয়েল ও সুমন শিকদার নামে ৩ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরন করে পুলিশ। ভুক্তভুগীর অভিযোগ সুমন জামিনে বের হয়ে মামলা তুলে নেওয়ার চাপ দিচ্ছে। পাশবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে পাচ বছরের বাচ্চা ও স্বামীসহ অমানবিক ও নিরাপত্তাহীনতায় জিবন যাপন করছেন তিনি।
এই মামলায় আসামীদের গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের সনাক্তও করা হয়েছে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে। করা হয়েছে ডিএনএ টেস্টসহ অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষাও। মোবাইলে ছবি তোলার ব্যাপারে দুষ্কৃতকারীদের মোবাইল জব্দ করে সেটি আইটি ফরেনসির জন্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও মামলার চার্জশীট দেননি তদন্ত কর্মকর্তা। চার্জশীট দিতে বিলম্বের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন করোনার কারনে ডিএনএ রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়াই ও মোবাইলের আইটি ফরেনসিক রিপোর্ট এখনও না পাওয়ায় বিলম্ব হয়েছে বলছেন খুলনা থানার এই এস আই মোঃ আবু সাঈদ।
নাগরিক নেতারা বলছেন, ধর্ষনকারীরা মনে করে তাদের কোন কিছু হবে না। এই চিন্তা থেকেই তারা অন্যায় করে। অতএব ধর্ষনকারীদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
একাত্তর এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ডাঃ বাহারুল আলম বলেন, ধর্ষনকারীরা নিজেদের খুব শক্তিশালী মনে করেন। তারা মনে করেন তারা আইনের উর্দ্ধে। এই কারনেই তারা অন্যায় করে। অতএব ধর্ষনের শাস্তি সর্বোচ্চ হলে অপরাধীদের অপরাধ প্রবনতা কমে যাবে।
নারী নেত্রী শামীমা সুলতানা শিলু বলেন, সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সমাজে যে নৈতিক শিক্ষা আগে দেওয়া হতো তরুনদের সেটি বর্তমানে নেই। যে যার মত থাকেন, কারোর সাথে কারোর কোন সম্পর্ক নেই। আমি আমার পাশের ফ্ল্যাটে কে আছে সেটি জানি না। আমাদের সামাজিক বন্ধন আরো দৃড় কতে হবে। তাহলে সমাজে নৈতিকতা সৃষ্টি হবে।
পাশাপাশি আরো একজন নাগরিক নেতা বলেন, তরুনদের খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক চর্চাসহ নানা সৃজনশীল কর্মে যুক্ত করতে হবে। তা না হলে বর্তমান এই বদ্ধ সমাজ ব্যবস্থায় সৃজনশীল কর্মকান্ড হীন হয়ে পড়ে তরুনেরা মাদক ও ধর্ষনের মতন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হবে।
অপরদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজের ওসিসিতে গত তিন মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ৮৬জন। যার মধ্যে ধর্ষনের স্বীকার হয়ে এসেছিলেন ৪৫জন, শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে এসেছিলেন ৪১ জন। ধর্ষনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চত করা না গেলে সমাজে ধর্ষন প্রতিহত করা যাবেনা বলছে বিশিষ্টজনেরা।