দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই শীর্ষ তিন পদ শূন্য রেখেই কার্যক্রম চালাচ্ছে

0
192

টাইমস ডেস্ক:
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী ও একাডেমিক কর্মকর্তা হলেন উপাচার্য। তাছাড়া একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইন অনুযায়ী বোর্ড অব ট্রাস্টিজের পস্তুÍাবনার ভিত্তিতে সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগ দেবে। কিন্তু এদেশে কর্মরত অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই তা পূর্ণাঙ্গভাবে মানছে না। যা বিদ্যমান আইনের পরিপন্থী। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো তার তোয়াক্কা করছে না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী দেশের প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার থাকার কথা। কিন্তু অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ আইন মানছে না। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ওসব পদে অস্থায়ী বা ভারটও্প্ত হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হলেও কিছু প্রতিষ্ঠানে তাও নেই।ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার পদের অর্ধেকই শূন্য রয়েছে। তার মধ্যে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র বছরের পর বছর নয়; দশকের পর দশক ধরে ওসব পদে নিয়োগ দিচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ডই ওসব পদে নিয়োগের উদ্যোগ নিচ্ছে না।
সূত্র জানায়, দেশের রযসব বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত ভিসি, টেও্-ভিসি ও ট্রেজারারের পূর্ণাঙ্গ পর্ষদ রয়েছে, ইউজিসি সম্প্রতি সেগুলোর একটি তালিকা করেছে। সেখানে দেখা যায় দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার মিলে ৩শ’রও বেশি কিছু বেশি পদ রয়েছে। তার মধ্যে ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ দেয়া উপাচার্য নেই। উপ-উপাচার্য পদ শূন্য রয়েছে ৮৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর ট্রেজারার নিয়োগ দেয়নি ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়। ওই হিসাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষ পদের অর্ধেকের বেশি পদই শূন্য রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারের পূর্ণাঙ্গ পর্ষদ রয়েছে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে মাত্র ১০টি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটি, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি ও নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষ পদের শূন্যতা দূর করতে সরকার দফায় দফায় তাগাদা দিচ্ছে। গত কয়েক মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি ওসব পদ পূরণের জন্য প্যানেল আহ্বান করে কয়েক বার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু ওই আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্যানেল পাঠাচ্ছে না। আবার যেসব প্যানেল পাঠানো হচ্ছে তার অধিকাংশই ভুয়া ও অপূর্ণাঙ্গ হওয়ায় ওসব পদে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আইন অনুযায়ী উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগের জন্য ৩ জনের একটি প্যানেল পস্তুÍাব পাঠাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড। প্যানেলে পাঠানো ব্যক্তিদের যোগ্যতা বিষয়ে আইনে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে প্যানেল পাঠাচ্ছে, তা বেশির ভাগই অপূর্ণাঙ্গ ও ভুয়া। তাদের অভিযোগ, অনেক সময় পছন্দের ব্যক্তিদের যোগ্যতা ঠিক রেখে বাকিদের মধ্যে কম যোগ্য বা অযোগ্যদের নাম পস্তুÍাব করা হয়।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলাম জানান, আইনে পদভিত্তিক যোগ্যতা বিষয়ের শর্ত বাংলা ভাষায় স্পষ্টভাবে বর্ণনা রয়েছে। এরপর যে প্যানেলগুলো পাঠানো হচ্ছে তার বেশির ভাগই অপূর্ণাঙ্গ। দেখা গেছে একজনের শর্ত কভার করে বাকিদের ঠিক নেই। এজন্য প্যানেল ফেরত পাঠাতে হয়। তাতে সময় ও শ্রমের অপচয় হচ্ছে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এ ধরনের প্যানেল কাম্য নয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা ঘটছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্যানেল পস্তুÍাবের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিশ্চিত করতে কয়েক বছর ধরে জোর দেয়া হচ্ছে। যদিও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সেক্ষেত্রে বেশ গড়িমসি করছে। গুরুত্বপূর্ণ ওসব পদে বছরের পর বছর নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। তাহলে ওসব প্রতিষ্ঠান চলছে কীভাবে?