সরকার পক্ষের গাফিলতিতে উচ্চ আদালতে ঝুলে রয়েছে হাজার হাজার রিটের নিষ্পত্তি

0
195

টাইমস ডেস্ক:
সরকার পক্ষের গাফিলতির কারণে উচ্চ আদালতে হাজার হাজার রিটের নিষ্পত্তি ঝুলে রয়েছে। হাইকোর্ট রিটের শুনানি শেষে রুল জারি করেন এবং রুলের জবাব দেয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু ওই সময়সীমা নীরবেই অতিক্রান্ত হয়ে যায়। মেলে না হাইকোর্টের রুলের জবাব। বরং সরকারি দফতরগুলো অনেকটা অবজ্ঞাভরেই জবাব দেয়ার বিষয়টি ফেলে রাখে। আর এভাবেই উচ্চ আদালতে মামলা রিট জটের সৃষ্টি হচ্ছে। হাইকোর্টে রিটকারী আইনজীবীদের সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার দফতরের তথ্যানুযায়ী, সারা দেশের আদালতগুলোতে ৩৮ লাখের মতো মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রিট মামলা। বছরের পর বছর ধরে ওসব রিট ঝুলে রয়েছে। নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও রিট-জট হ্রাস পাচ্ছে না। আইনজ্ঞদের মতে, নাগরিকের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রশ্নে হাইকোর্টে রিট করা হয়ে থাকে। দেশের যে কোনো সংক্ষুব্ধ নাগরিক সংবিধানের ১০২ এবং ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিকার চেয়ে রিট পিটিশন করতে পারেন। রিটে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দায়িত্বশীল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিবাদী করা হয়। কী কারণে রিটকারীর প্রত্যাশিত অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি তা জানতে চাওয়ার জন্য আদালত বিবাদীদের বক্তব্য জানার জন্য রুল জারি করেন। নাগরিককে সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ৫ ধরনের আদেশ দেন। সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে দেয়া এই আদেশ ‘রিট আদেশ’ হিসেবে পরিচিত। রিট আদেশ বাস্তবায়নে হাইকোর্ট সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে নির্দেশ দেন। আর কতোদিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে হবে কিংবা আদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে তারও একটি সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। রিট পিটিশন দায়েরের পর প্রাথমিক শুনানি শেষে রুল জারি হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে রিটের জবাব দিতে বলা হয়। আর রুলের জবাব দানের জন্য কমপক্ষে এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। এটিই রিট মামলার পদ্ধতি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জারিকৃত রুলের জবাব আসছে না। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের ওপর নোটিশ জারি নিশ্চিত করার পর আবেদনকারী পক্ষ আদালতের দৃষ্টিতে এনে চূড়ান্ত শুনানির জন্য আবেদন করেন। ফলে প্রাথমিক রুলের জবাব ছাড়াই চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুলটি অ্যাবসোলিউট (চূড়ান্ত) করা হয়। আর সে অনুযায়ী হাইকোর্ট রায় দেন। এ ধরনের রিটের ক্ষেত্রে প্রাথমিক রুলের জবাব আসাটা কতোটা জরুরি এ প্রশ্নে বিতর্ক রয়েছে। মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় এ পদ্ধতিগুলো মানতে কোনো বাধ্যবাধকতার প্রথা গড়ে ওঠেনি। এ প্রথা গড়ে উঠলে যাদের ওপর রুল জারি হয় তারা দ্রুত জবাব দিতে বাধ্য থাকতেন বলে আইনজ্ঞরা মনে করেন।
সূত্র জানায়, বিচার বহিভর্ত হত্যা এবং ফতোয়া সংক্রান্ত রিটে রুলের জবাব না আসায় সরকারের ওপর জারি হওয়া আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি হওয়ার যে চর্চার পথ, তা অনেকটাই দুর্গম হয়ে পড়ছে। রুলের জবাব না আসার কারণে এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে দীর্ঘসূত্রতার বলয় থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। আর সময়মতো মামলারও নিষ্পত্তি হচ্ছে না। ফলে বিচারবহির্ভূত শাস্তি কিংবা ফতোয়ার অপব্যবহার বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। রুলের জবাব সময়মতো না আসা কিংবা কিছু ক্ষেত্রে জবাব একেবারেই না আসার পেছনের অন্যতম কারণ হলো সংশ্লিষ্ট দফতরের উদাসীনতা, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা, সরকারি আইনজীবীদের কর্তব্যে অবহেলা এবং আদালতের বাধ্যবাধকতার কোনো কাঠামো বা চর্চা না থাকা।
সূত্র আরো জানায়, রাজউকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একটি রিট (নং-২২০২/২০০১) ২০০১ সালের ৪ জুন দায়ের হয়েছে। কিন্তু ১৯ বছরেও রিটটির নিষ্পত্তি হয়নি। শুধুমাত্র রুলের জবাব আসতেই ১০ বছর কেটে গেছে। রিটটির সর্বশেষ শুনানি হয়েছে ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর। সরকারপক্ষের সৃষ্ট জটিলতার কারণে দুই দশকেও রিটটির নিষ্পত্তি হয়নি। রুলের জবাব প্রদান বাধ্যতামূলক করা হলে হয়তো রিট নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতা থেকে কিঞ্চিৎ রেহাই পাওয়া সম্ভব হতো। মূলত রুলের জবাব না আসার কারণেই বিচার প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না। এ সংক্রান্ত রুলের জবাব দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা সংস্থাগুলোর বাধ্যবাধকতা থাকে না। এখানে সরকার ও সরকারি সংস্থাগুলোর দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সজাগ থাকা প্রয়োজন। একই সাথে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়েরও এ বিষয়ে তৎপর থাকা জরুরি।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। তাদের পত্রযোগে কিংবা ফোনেও অবহিত করা হয়। তাগিদ দেয়া হয়। তাদের নোটিশও করা হয়। কিন্তুঅনেকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারি দফতরগুলো থেকে কোনো সাড়া আসে না। তাছাড়া পত্রপত্রিকার খবরের মাধ্যমে দফতরগুলো এ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়। তবুও অনেক ক্ষেত্রেই তারা উদাসীনতা প্রদর্শন করেন। এর পেছনে মূলত তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না। দ্বিতীয়ত, তারা সতর্ক থাকে না এবং উচ্চ আদালতের যে অনেক ক্ষমতা রয়েছে তা উপলব্ধি করে না। তৃতীয়ত, দফতরগুলো মামলার নোটিশকে গুরুত্ব দেয় না। তবে বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক এবং সজাগ থেকে কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে।