দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরিনের সফল অভিযানে ০৯ ভুয়া পরীক্ষার্থী সনাক্তসহ সুপার আটক

0
1253

আব্দুর রব লিটু,দেবহাটা: দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরিনের সফল অভিযানে সনাক্ত ০৯ ভুয়া পরীক্ষার্থী। এ ঘটনায় হলের পরিদশর্কের দায়িত্বে থাকা নুরুল ইসলাম আটক হয়েছে।তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে দুই দালাল পালাতক হয়েছে বলে জানা যায়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরিন চলমান ২০১৯ সালের ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় আকর্ষিক পরিদর্শনে আসেন উপজেলার একমাত্র ইবতেদায়ী পরীক্ষা কেন্দ্র সখিপুর দাখিল মাদ্রাসায়। পরীক্ষা পরিদর্শন কালে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ পত্রে ভিন্ন ভিন্ন সিল দেখতে পেয়ে প্রথমে এক ছাত্রকে শনাক্ত করেন। পরে তিনি একে একে নয় জন ভূয়া শিক্ষার্থীকে সনাক্ত করেন। এসময় আরো একজন শিক্ষার্থী পালিয়ে যায় বলে খবর পাওয়া যায়। পরে দেবহাটা থানা পুলিশে খবর দিলে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার সাহা সঙ্গীয় ফোর্সসহ এসে উত্তর পারুলিয়া সতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সুপার উত্তর পারুলিয়া গ্রামের মৃত তাজউদ্দীন মৃধার পুত্র নুরুল ইসলাম (৪৮) কে ঘটনা স্থল থেকে আটক করে। এছাড়া তদন্তে বেরিয়ে আসে এ ঘটনার সাথে জড়িত ঘোনাপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবুল বাশার ও সহকারী শিক্ষক মোর্শেদ রহমান নামের দুই দালালের নাম। এসময় মোর্শেদ দ্রত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় বলে জানা যায়। তবে এসময় একটি গোপন তথ্যে জানা যায়, উত্তর পারুলিয়া সতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সুপার নুরুল ইসলাম ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার প্রবেশপত্র নেওয়ার জন্য তিন থেকে চার বার উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রণব কুমার মল্লিকের কাছে গোপনে দেখা করে। সরোজমিনে যেয়ে দেখা যায়, নলতা আহছানিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী ও উপজেলার বেজরাটি গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের কন্যা জাকিয়া পারভীন (১২), ঘোনাপাড়া মাদ্রাসার ঘোনাপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের কন্যা তাছলিমা খাতুন (১২), একই মাদ্রাসার নাংলা গ্রামের রবিউল ইসলামের কন্যা রুবি আক্তার (১২), নলতা মাদ্রাসার নলতা গ্রামের সাইফুল ইসলামের কন্যা আমেনা খাতুন (১০), বেজরআটি গ্রামের সফিকুল ইসলামের পুত্র সাব্বির হোসেন (১৩), পারুলিয়া মৃধাপাড়া ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্রমতিউল্লাহর পুত্র রবিউল বাশার (১০), নলতা মাদ্রাসার বেজরআটি গ্রামের আজহারুল ইসলামের পুত্র আশিকুর রহমান (১২), উত্তর পারুলিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার বিল্রাল মোল্যার পুত্র আব্দুর রহমান (১৩) এবং দক্ষিণ নাংলা গ্রামের আব্দুল করিমের পুত্র তরিকুল ইসলাম (১১) নামের ছাত্র-ছাত্রীরা দালাল মোর্শেদের সহযোগীতায় উত্তর পারুলিয়া সতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিতে আসে। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন প্রবেশপত্র সহ সফল ভাবে তাদেরকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার সাহা ঘটনাস্থলে এসে এঘটনার সাথে জড়িত থাকার কারণে উত্তর পারুলিয়া সতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সুপার নুরুল ইসলামকে আটক করে। এছাড়া উক্ত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে লিখিত মোচলেকা দিয়ে অভিভাবকদের জিম্মায় দেয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রনব কুমার মল্লিককে আদেশ দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৯ সালের ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় সখিপুর দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৩০৮জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করার কথা। প্রথম দিনের পরীক্ষায় ১৭জন সহ ৫ম দিন পর্যন্ত সর্বমোট ১৮জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। ৫ম দিন বৃহস্পতিবার ছিল কুরআন মজীদ ও আকাইদ শিক্ষা পরীক্ষা। এই কেন্দ্রের সচিবের দায়িত্বে ছিলেন সখিপুর দাখিল মাদ্রসার ভারপ্রাপ্ত সুপার তবিবুর রহমান, হল সুপারের দায়িত্বে ছিলেন পারুলিয়া আহছানিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আমিনুর রহমান এবং ট্যাগ অফিসার ছিলেন উপজেলা তথ্য অফিসার শামছুন্নাহার। এখন জনমনে প্রশ্ন, এতগুলো কর্মকর্তা হলের দায়িত্বে থাকার পরেও চলমান ৪ দিনের পরীক্ষা শেষ হলেও কিভাবে এসকল ভূয়া পরীক্ষার্থীরা অংশগ্রহন করলো। তাই এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে সচেতনমহল। এব্যাপারে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার সাহা জানান, ঘটনা শুনেই আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। এর সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন জানান, চলমান ২০১৯ সালের ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় আকর্ষিক পরিদর্শনে যেয়ে উপজেলার একমাত্র ইবতেদায়ী পরীক্ষা কেন্দ্র সখিপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৯জন ভূয়া পরীক্ষার্থী সনাক্ত করা হয়েছে।এ সাথে জড়িত থাকার কারনে একজনকে আটক করা হয়েছে।অন্যান্য দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।