দেবহাটায় হাতুড়ে ডাক্তারের দেয়া ভুল ইঞ্জেকশনে প্যারালাইস ২১ মাসের শিশু!

0
270

দেবহাটা প্রতিনিধি:
দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার আকিব হোসেন আকাশের দেয়া ভুল ইঞ্জেকশনে শরীরের একপাশ অবশ হয়ে প্যারালাইসিসের শিকার হয়েছে ২১ মাস বয়সের ফুটফুটে শিশু আজিম হোসেন। শুক্রবার শিশুটির শরীরে ভুল ইঞ্জেকশন পুশ করে হাতুড়ে ডাক্তার আকিব হোসেন আকাশ। কোনমতে ডি.এম.এফ একটি কোর্স করে আকিব হোসেন আকাশ গ্রাম্য এলাকার মানুষের কাছে নিজেকে মা, শিশু ও কিশোর রোগে অভিজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও রীতিমতো মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে। ওই হাতুড়ে ডাক্তারের বাবার নাম আমিরুল ইসলাম মধু। তিনিও আরেক হাতুড়ে ডাক্তার। পারুলিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা কোমরপুরে নিজেদের বাড়ীতেই চেম্বার খুলে বসেছেন বাপবেটা। চেম্বারের নাম দিয়েছেন শাহিদা সেবা কেন্দ্র। হাতুড়ে ডাক্তার আমিরুল ইসলাম মধুর কাছ থেকেই জ্বর, মাথাব্যাথা, পেটব্যাথা, পাতলা পায়খানার চিকিৎসা ও ইঞ্জেকশন ফুটানো শিখেছে আকাশ। বাপবেটা মিলে ডাক্তারী ব্যবসা জমজমাট করে তুলতে কিছুদিন আগে নামমাত্র একটি ডি.এম.এফ সার্টিফিকেট ম্যানেজ করে সদ্য এসএসসি পাশ করা ছেলে আকাশকেও হাতুড়ে ডাক্তার বানিয়ে ফেলে তার বাবা আমিরুল ইসলাম মধু। এরপর নিজেদের চেম্বারে নিজেরাই বনে যান নারী, শিশু ও কিশোর রোগের ভুয়া অভিজ্ঞ ডাক্তার। এমনকি আইনানুযায়ী ডিএমএফ ধারীদের নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্ত্বেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মত নিজেদের নামে বাহারি প্রেসক্রিপশন ছাপিয়ে চিকিৎসার নামে মানুষকে অপচিকিৎসা দিচ্ছে বাপবেটা আমিরুল ইসলাম মধু ও আকিব হোসেন আকাশ। সাধারণ মানুষ ও রোগীদের সাথে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া অর্থে গড়ে তুলেছেন আলীশান বাড়ী। সেই বাড়ীতে আবার বিভিন্ন বিলুপ্ত প্রজাতির পাখিসহ বণ্যপ্রানী খাচাবন্দি করে গড়ে তুলেছেন মিনি চিড়িয়াখানা।
মানুষের থেকে হাতিয়ে নেয়া অর্থে যাদের এই বিলাসী জীবনযাপন, সেই হাতুড়ে ডাক্তার বাপবেটার ভুল চিকিৎসার কারনে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে দূর্বিসহ দিন কাটছে ভাতশালা গ্রামের দিনমজুর আলামিন সরদারের ২১মাস বয়সের শিশু সন্তান আজিম হোসেনের। হাতুড়ে ডাক্তারের অপচিকিৎসায় বর্তমানে শিশুটির শরীরের ডান পাশ পুরোপুরি অচল হতে বসেছে।
শিশু আজিমের দাদা গোলাম রসুল সরদার (৬২) জানান, শুক্রবার শিশু আজিম হোসেন বাড়িতে খেলা করার সময় ঘরের খাট থেকে মেঝেতে পড়ে ব্যাথা পায়। এক পর্যায়ে ব্যাথায় কাতর শিশু আজিমকে চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের সদস্যরা তড়িঘড়ি করে পাশের গ্রাম কোমরপুরে ওই হাতুড়ে ডাক্তার বাপবেটার কসাইখানা খ্যাত চেম্বার শাহিদা সেবা কেন্দ্রে নিয়ে যায়। তখন হাতুড়ে ডাক্তার আমিরুল ইসলাম মধু বাড়ীতে ছিলেন না। একপর্যায়ে খদ্দের (রোগী) আসতে দেখেই বাবার অনুপস্থিতিতে অভিজ্ঞ ডাক্তার সেজে চেম্বারে বসে পড়েন আমিরুল ইসলাম মধুর ছেলে হাতুড়ে ডাক্তার আকিব হোসেন আকাশ।
কোনো পরীক্ষা নীরিক্ষা ছাড়াই সে শুরু করে শিশু আজিম হোসেনের চিকিৎসা। এরপর ব্যাথা পেয়েছে শুনেই, হাতুড়ে ডাক্তার বাবার থেকে শেখা পূর্ণবসয়ী রোগীর চিকিৎসা শিশুটির শরীরে প্রয়োগ করে অকালে পাকা হাতুড়ে ডাক্তার আকিব হোসেন আকাশ। সে শিশু আজিম হোসেনের কোমরে সম্পূর্ন একটি ইটোরাক-৩০ (ঊঃড়ৎধপ-৩০) ইঞ্জেকশনের পুরোটাই পুশ করে শিশুটিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বাড়ীতে ফেরার পরপরই একে একে শিশু আজিমের ডান হাত, ডান পা নিস্তেজসহ ক্রমশ মুখ বেঁকে যেতে থাকে। অবস্থার অবনতি দেখে পরবর্তীতে তড়িঘড়ি করে প্রতিবেশীদের পরামর্শে শিশু আজিম হোসেনকে সাতক্ষীরার শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আজিজুর রহমানের কাছে নিয়ে যায় পরিবারের সদস্যরা। এসময় শিশু বিশেষজ্ঞ আজিজুর রহমান হাতুড়ে ডাক্তার আকিব হোসেন আকাশের দেয়া ইঞ্জেকশনটি ভুল ছিলো উল্লেখ করে দ্রুত নতুনভাবে শিশুটির চিকিৎসা শুরু করেন।
পরবর্তীতে শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে এই অপচিকিৎসার প্রতিবাদ করা হলে, ভাতশালার স্থানীয় ইউপি সদস্য কামরুল ইসলামের মধ্যস্থতায় দুই হাজার টাকা দিয়ে শিশুর পরিবারের সদস্যদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করে হাতুড়ে ডাক্তার আমিরুল ইসলাম মধু ও তার ছেলে আকিব হোসেন আকাশ।
এদিকে ভূক্তভোগী পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মধু ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে কথা হয় তার সাথে। এই অপচিকিৎসার কথা জানতে চাইলে দায় স্বীকার করেন। তবে মধু ডাক্তারের চেম্বারের কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এমনকি তার ছেলে আকাশ নিজেই কত সালে এসএসসি পাশ করেছেন সেটিও সঠিক করে বলতে পারেননি। একজন মাধ্যমিক পাশ ছাত্র কিভাবে মা, শিশু ও কিশোর রোগে অভিজ্ঞ। সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মধু ডাক্তার তার নিজের অভিজ্ঞতায় তার ছেলে অভিজ্ঞ বলে জানান। তবে ভুল চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ওই হাতুড়ে ডাক্তার আকিব হোসেন আকাশ জানায়, আমার ডি.এম.এফ ট্রেনিং করা আছে। শিশুটি ব্যাথা পেয়েছিল ভেবে আমি ইটোরাক-৩০ (ঊঃড়ৎধপ-৩০) ইঞ্জেকশন দিই। কিন্তু পরে জানতে পেরেছি ইনজেকশনটি শিশুদের জন্য ক্ষতিকর।
এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর লতিফ জানান, গ্রাম্য ডাক্তাররা ব্যবস্থাপত্র লিখতে পারেন না। তবে অধিকাংশরাই এটি মানেন না। বর্তমানে অনেক গ্রাম ডাক্তাররা ভুল চিকিৎসা প্রদান করছেন। ওই শিশুটির সুচিকিৎসার জন্য দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেন।