দেবহাটার প্রধান শিক্ষকের কন্যাকে পুনরায় অপহরন করে ৫লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবি

0
297

আব্দুর রব লিটু, দেবহাটা : সাতক্ষীরা দেবহাটার প্রধান শিক্ষকের কন্যাকে পুনরায় অপহরন করে ৫লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবি করার অভিযোগ। সদর উপজেলার ফিংড়ি এলাকার বাসিন্দা ও দেবহাটার আন্দুলপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কন্যা শিমুলবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণী পড়–য়া ছাত্রী আবারো আপহরন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত ১৯জুলাই রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে তাকে অপহরন করেছে বলে জানায় ভিকটিমের পরিবার । ঘটনার বিবরন দিয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে ভিকটিমের বাবা স্বপন কুমার মিস্ত্রী। এ ঘটনার পর পাঁচ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে অপহরণকারীরা বলে একটি সুত্রে জানা গেছে। ভিকটিমের পরিবার সূত্রে আরো জানা যায়, দেবহাটা আন্দুলপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী গ্রামের স্বপন কুমার মিস্ত্রীর ৭ম শ্রেণী পড়–য়া কন্যাকে দক্ষিণ ফিংড়ী গ্রামের খান ওহিদুল ইসলামের পুত্র রায়হান বিভিন্ন সময় প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে উত্তাক্ত করতো। এর জের ধরে গত ০১/১২/১৯ তারিখ সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে অপহরণকারী রায়হান খান তার সহযোগীরা ভিকটিমকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পর দিন ২/১২/১৯ তাং দুপুরে ভিকটিমকে পারুলিয়া কদবেলতলা মোড় থেকে উদ্ধার করে ভিকটিমের পরিবার। ঐদিনই ভিকটিমের বাবা স্বপন কুমার মিস্ত্রী বাদী হয়ে ৭/৩০ ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩ ধারায় ঘটনা উল্লেখ করে একটি মামালা দায়ের করে। এতে অপহরণকারী রায়হানকে প্রধান আসামী এবং তার সহযোগী আতœীয় সদর উপজেলার শিমুলবাড়ীয়া গ্রামের জালাল ঢালীকে ২নং আসামী ও রায়হানের পিতা খান ওহিদুল ইসলামকে ৩নং আসামী করে সদর থানায় মামলা নং-৪ দায়ের করে। ভিকটিম উদ্ধার হওয়ার ৫দিন পরে ৭/১২/১৯ তাং স্কুল থেকে বাড়িতে ফেরার পথে উক্ত আসামীরা পরিকল্পিত ভাবে দুপুর ১টার দিকে শিমুলবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে প্রধান আসামীর মাতা দেবহাটা উপজেলার চরবালিথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আছিয়া খাতুনের সহযোগীতায় আবারো অপহরণ করে প্রথমে চর বালিথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়ে যায়। পরে তাকে চর বালিথাস্থ রেজাউল ইসলাম খোকন (খোকন দোকানদার) এর বাড়িতে নিয়ে রাখা হয়। ঐ ঘটনায় ভিকটিমের মা অর্পনা রানী মিস্ত্রী সাতক্ষীরা বিজ্ঞ মানব পাচার অপরাধ ট্রাইবুনালে একটি পিটিশন দাখিল করে। যে পিটিশনে পুর্বের তিন জন আসামী বহাল সহ নতুন ভাবে প্রধান আসামীর মা চরবালিথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আছিয়া খাতুন এবং দেবহাটা থানার চর বালিথা গ্রামের রজব আলি সানার পুত্র রেজাউল ইসলাম ওরফে খোকন দোকানদারসহ ৫জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামী করা হয়। যার পিটিশন নং-৩৯/২০,ধারা-৬/৭/৮ মানব পাচার অপরাধ দমন আইন ২০১২। ঐ সময় আদালত বিষয়টি পিবিআই তদন্তে স্থানান্তর করে। পরে ভিকটিমকে ইং ১২/০২/২০২০ তারিখ উদ্ধার করে বাগেরহাট সেভ কাস্টরীতে প্রেরণ করে আদালত। কন্যার পিতা-মাতা গত ২৬/০৫/২০২০ তারিখ ভাচ্যুয়াল কোর্ট বাগেরহাট থেকে রায় পেয়ে ভিকটিমকে বাড়িতে নিয়ে আসে । কিন্তু থেমে নেই অপহরনকারীদের ষড়যন্ত্র। তারা গত ১৯জুলাই রাত ৮টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে আবারো অপহরন করে ভিকটিমকে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষে ভিকটিমের পিতা স্বপন মিস্ত্রী ২০ জুলাই দুপুরের দিকে সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করে। এ ছাড়া ভিকটিমের পরিবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন ব্যত্তিকে জানালে বেরিয়ে আসে নতুন মোড়। স্থানীয় ইউপি সদস্য সুকুমার সরদার সহ কয়েক জনের উপস্থিতিতে পাঁচ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবি করে অপহরণকারী প্রধান আসামী রায়হান খানের পিতা খান ওহিদুল ইসলাম। আবার শুক্রবার সকালের দিকে অপহরণকারী প্রধান আসামীর মা দেবহাটা উপজেলার চরবালিথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আছিয়া খাতুনের কাছে এল্লারচর বাজারে কয়েক জনের উপস্থিতিতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সামছুর রহমান পাঁচ লক্ষ টাকা মুক্তিপনের বিষয়টি জানতে চাইলে আছিয়া খাতুন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এব্যাপারে সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সুকুমার সরদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আমি সহ কয়েক জনের উপস্থিতিতে আসামী রায়হান খানের পিতা খান ওহিদুল ইসলাম পাঁচ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। এদিকে ফিংড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সামছুর রহমান জানান, শুক্রবার সকালের দিকে আসামীর মা আছিয়া খাতুনের সাথে এল্লারচর বাজারে দেখা হয়। সেখানে কয়েক জনের উপস্থিতিতে তার স্বামী কর্তৃক পাঁচ লক্ষ টাকা মুক্তিপনের সত্যতা স্বীকার করেন আছিয়া। এবিষয়ে আসামীর মা দেবহাটা উপজেলার চরবালিথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আছিয়া খাতুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার স্বামী এটা ঠাট্টার ছলে বলেছে। তার সাথে রাগারাগি করে আমি আমার ভাইয়ের বাড়িতে চলে এসেছি।