দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশ উপযোগি গবেষণা কার্যক্রমের আওতায় কায়রায় কৃষক প্রশিক্ষণ

0
236

ফকির শহিদুল ইসলাম:
খুলনা জেলার কয়রায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, দৌলতপুর খুলনা এর আয়োজনে ও গোপালগঞ্জ জেলার বিএআরআইবি এর কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন ও দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল পরিবেশ প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করনের মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে কয়রায় বিএআরআইবি বিভিন্ন ফল চাষের আধুনিক কলাকৌশলের উপর কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে দিন ব্যাপী এ কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট সরেজমিন গবেষণা বিভাগ এমএলটি সাইট কয়রার বৈজ্ঞানিক সহকারি মোঃ জাহিদ হাসানের পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এসএম শফিকুল ইসলাম। প্রধানবক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন গোপালগঞ্জ জেলার কৃষিগবেষণা কেন্দ্র স্থাপন ও দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল পরিবেশ প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করনের মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুনর রশিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম, কৃষি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাশরুকুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম মিজান মাহমুদ। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সদরউদ্দীন আহম্মদ, কয়রা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এসএম হারুন অর রশীদ, কৃষক রবীন্দ্র ঢালী,কৃষ্ণা ঢালীও আঃ হালিম। প্রশিক্ষণে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৫০ জন কৃষককে ফল চাষের আধুনিক কলাকৌশল শেখানো হয়। এসময় কৃষক প্রশিক্ষনে বক্তারা বলেন এখন বর্ষাকাল । গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলেছেন দেশে এক ইঞ্চি জায়গাও যেন খালি পড়ে না থাকে। সে জন্য সকলকে গাছ লাগানোর জন্য উদ্ধুদ্ধ করেন। আলোচনা শেষে কৃষকদের মাঝে অতিথিরা ফলের চারা বিতরণ করেন এবং কয়রায় ২ জন কৃষক কে ১ বিঘা করে ২ বিঘা জমিতে মিশ্র ফলের বাগান স্থাপন করতে তাদের পেয়ারা, মাল্টা ও আমের চারা বিতরণ করেন। মিশ্র ফলের বাগান পেয়ে রবীন্দ্র ঢালী বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আমার ১ বিঘা জায়গায় মিশ্র ফলের বাগান করতে ফলের চারা, বেড়া সরঞ্জাম, সার, কীটনাশক দিয়েছেন এবং আমাকে খেত তৈরী ও চারা রোপনের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানাগেছে, গোপালগঞ্জ জেলায় বিএআরআই-এর কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন ও দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণের মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি গ্রহণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি ২০১৮ সাল হতে ২০২৩ সালের ৩০ জুন মেয়াদকালে প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৭ কোটি টাকা। যার পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হচ্ছে। কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং গুণগতমান সম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও সরবরাহের লক্ষ্যে ২০ একর জমির উপর আধুনিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র নির্মান করা হচ্ছে গোপালগঞ্জে। গবেষণা কেন্দ্রটি নির্মিত হলে ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা এই তিনটি বিভাগের ৫ জেলার ৩৮টি উপজেলার কৃষিতে অবদান রাখবে। পাশাপাশী এ প্রকল্পের আওতায় ৫টি জেলার ৩৮টি উপজেলায় পাঁচ বছরে বিএআরআই উদ্ভাবিত প্রায় ১৫টি ফসলের উপযোগিতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে ২ হাজারটি ট্রায়াল স্থাপন করা হবে। বারি উদ্ভাবিত উন্নত জাত ও প্রযুক্তির বিস্তারের কৃষির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী, কৃষক ডিলারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উদ্ভাবিত কার্যকরী প্রযুক্তিসমূহ মাঠ পর্যায়ে দ্রুত জনপ্রিয় করতে প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সার্বিক সহযোগিতা উচ্চফলনশীল জাত সমূহের উপযোগিতা যাচাইয়ের পর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা এবং ৫শ’ হেক্টর জমিতে উৎপাদন কর্মসূচি স্থাপন কাজ এগিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের প্রশিক্ষন ও মিশ্র ফলজ বাগান তৈরিতে কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা করা হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে উপকুল রক্ষায় তাল ও খেজুরের চারা রোপন করে বেড়িবাঁধ টেকসই করা হচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপযোগী ফসলের উপযোগিতা ও সম্ভাব্যতা যাচাই সম্ভব হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপযোগী সবজি, ফল, ডাল, আলু, তৈলবীজ, গম, ভুট্টা, নারিকেল, তাল এবং খেজুরের উৎপাদন বাড়ানো ও কৃষকদের আয় বাড়ানোর পথ সহজ হবে। সর্বোপরি এই গবেষণা কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, সেমিনার ও কর্মশালার মাধ্যমে বারি উদ্ভাবিত উন্নত জাত এবং প্রযুক্তির বিস্তারে কৃষি ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন সম্ভব হবে।