ডুমুরিয়ায় ভিক্ষুকের হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতার নামে মামলা : বিপাকে বাদী

0
348

নিজস্ব প্রতিনিধি:
ডুমুরিয়ায় মেয়েকে কু-প্রস্তাব দেয়ার প্রতিবাদ করায় মধ্যযুগীয় কায়দায় এক ভিক্ষুক মাকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামীরা জামিনে মুক্তি পেয়ে বাদীকে মামলা তুলে নিতে জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলার বাদী আল্লাদি ঢালী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেছেন, যার নং- ৫০৪।

মামলা ও সাধারণ ডায়রীর বিবরণী সুত্রে জানা যায়, উপজেলার মাগুরখালী এলাকায় স্বামী পরিত্যক্তা হতদরিদ্র ছোট খুকু ওরফে শিখা ঢালী (৪৭) গত ৯ বছর যাবত দুই কন্যা সন্তান ইতু ঢালী (১৭) ও পূজা ঢালী (৮) কে নিয়ে বাবার বাড়িতে থেকে ভিক্ষা বৃত্তি করে জীবিকা অর্জন করে আসছে। এমতাবস্থায় পাইকগাছা চিনেমলা এলাকার সমিরন মন্ডলের ছেলে মাগুরখালী মামার বাড়ি বসবাসরত বিএল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লিংকন মন্ডল (২২) ওই ভিক্ষুকের বড় মেয়ে ইতু ঢালীকে প্রায়ই কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। বিষয়টি ইতু তার মা শিখা ঢালীকে জানালে, শিখা লিংকন’র কাছে এর কারণ জানতে চায়। এতে লিংকন ক্ষুব্ধ হয়ে তার দলবল নিয়ে শিখাকে খুজতে থাকে। এক পর্যায়ে ঘটনার দিন গত ১৯ জুন রাত ৯টার দিকে শিখা ভিক্ষা করে বাড়ী ফেরার পথে পাশ্ববর্তী সিদ্বার্থ মন্ডলের পুকুর পাড়ে পেয়ে তার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ছাত্রলীগ নেতা লিংকন, তার সহযোগী সুজিত গোলদারের ছেলে আশিষ গোলদার (২২), নিখিল মন্ডলের ছেলে মধূসুধন মন্ডল (২৪) ও পবিত্র গাইন (২৩)’র পিটুনিতে শিখার বাম পা ও বাম হাতের হাড় ভেঙ্গে রক্তাক্ত জখম হয়।

পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য প্রসাদ কুমার মন্ডল ও মাগুরখালী পুলিশ ফাড়ির টু আইসি এ এস আই আলতাপ হোসেন ঝোলায় করে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। হাসপাতালে ২০ দিন চিকিৎসার পর শিখা গুরুতর অসুস্থ থাকার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেন। কিন্তু টাকার অভাবে ও গুরুতর অসুস্থ থাকায় শিখা বাড়ি আসতে না পেরে হাসপাতালের বারান্দার পরে থাকে। এরপর হাসপাতালের বারান্দায় থেকে বিনা চিকিৎসায় ও অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে ভিক্ষুক শিখা। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হলে টনক নড়ে পুলিশ প্রশাসনের। এরপর গত ৩০ জুলাই পুলিশের সহযোগীতায় ভিক্ষুক শিখার মা বাদী হয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যার নং-৩৮।

এদিকে মামলার আসামী লিংকন মন্ডল, মধূসুধন মন্ডল, পবিত্র গাইন ও আশিষ গোলদার দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর গত বুধবার জামিনে মুক্তি পায়। এরপর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বাদীর বাড়ির সামনে গিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে বাদী আল্লাদিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিতে থাকে। অন্যতায় জীবন নাশ সহ দেশ ত্যাগ করতে হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় হত-দরিদ্র পরিবার আবারো পুলিশের সরণাপন্ন হলে পুলিশ ঘটনার বিবরণী শুনে একটি সাধারণ ডায়রী গ্রহন করেন। ঘটনা প্রসঙ্গে বাদী আল্লাদি ঢালী জানান প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মামলা করে আমি দারুন ভাবে নিরাপত্তাহীনতা ভুগছি।