ডুমুরিয়ায় তরমুজ চাষে লাভবান কৃষকরা

0
1077

আজিজুর রহমান, ডুমুরিয়া থেকে :
গ্রামের ভিতরের গ্রামীণ মেঠোপথ ধরে এগোতে এগোতে হঠাৎ একখণ্ড সবুজের সমারোহ চোখে পড়ার মতো। সেখানে একপা দুপা হেঁটেই দেখা গেল তরমুজের খেত। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তরমুজ। তরমুজ তুলে জড়ো করছেন কৃষক। স্তূপ করে রাখছে বিক্রির জন্য। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মহাজনেরা তরমুজ কিনতে খেতে গিয়ে চাষিদের সঙ্গে দাম কষাকষি মাধ্যমে চূড়ান্ত করছে। ওই তরমুজ ট্রাক-ট্রলি বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে তরমুজচাষিরা খেত থেকে তরমুজ তুলে বিক্রি করার চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছেন।

এই চিত্র খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের তক্তামারি গ্রামের। স্থানীয়রা বলছেন, এবারই সর্বপ্রথম বেশি পরিমাণে তরমুজ চাষ করা হয়েছে এই উপজেলায়। তারমধ্যে সবচেয়ে একটু বেশি হয়েছে তক্তামারি গ্রামে। কৃষকেরা বলছেন, রবি মৌসুমে তরমুজ চাষ লাভজনক হওয়ায় তাঁদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। তাই তারা প্রতিবছরই তরমুজের চাষ করবেন বলে আশা রাখেন।

সবুজ সোনার আশায়, আমন ধান কাটা শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে তরমুজ লাগানোর প্রস্তুতি। বার বার চাষ দিয়ে দ্রুত মাটি শুকিয়ে রোপন করা হয় তরমুজের বীজ। কৃষকরা মনে করেন আগে লাগালে আগে তরমুজ পাওয়া যায় এবং ভাল দামে বিক্রি করা যায় এ ধারনা থেকেই উপজেলার কৃষকের মাঝে ব্যাপকভাবে সাড়া পড়েছে। তাই নারী-পুরুষ সবাই মিলে সারাদিন শ্রম দিচ্ছে তরমুজ খেতে।

ডুমুরিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সুত্রমতে, প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪৫০ মেট্রিক টন। বিক্রি হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকার মতো। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪২০ মেট্রিক টন, যার মূল্য দাঁড়াবে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ টাকা।

এদিকে উপজেলার তক্তামারি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের সবচেয়ে বড় তরমুজচাষি কামাল বাওয়ালী(৪০) এ বছরই প্রথম নিজের ও অন্যের জমি মিলিয়ে মোট সাতবিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, মৌসুমের আগেই দেশের বিভিন্ন এলাকার মহাজনেরা তরমুজ নিতে এলাকায় চলে আসেন এবং ফলনের পর তরমুজ সংগ্রহ করতে এলাকায় অবস্থান করেন। ইতিমধ্যে কামাল খেত থেকে তরমুজ তুলে মহাজনদের কাছে প্রায় আট লাখ ৫৪ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেন। তিনি আরও বলেন, প্রায় ৮০ দশক পর্যন্ত এ এলাকার কৃষকরা মারাত্মকভাবে দারিদ্রতায় ভূগেছে। পরবর্তী সময়ে কৃষি কার্যালয়ের সহায়তায় ধানসহ অন্যান্য নতুন নতুন ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে তারা আজ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পেরেছে। কামাল বলেন, ডুমুরিয়ার পতিতজমিতে এখন তিনটি ফসল হচ্ছে এবং দিন যত যাবে এর প্রসারও তেমনি বাড়বে। এ সম্ভাবনাকে আরও ফলপ্রসু ও গতিশীল করার জন্য, সার্বিক সহায়তার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ১৪ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ করতে ব্যয় হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মতো। ফসল ভাল হলে বিক্রি হয় প্রতি বিঘা ১ লাখ টাকারও বেশি। লাভের আশায় পরিশ্রম করে, মাত্র ৬০দিনের ফসল তাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে মাঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করছে। পরিশ্রম করে লাগাতে পারলে অনেক টাকা লাভ হবে এ আশায়।

কৃষি কার্যালয়ের হিসাবমতে, রবি মৌসুমে বোরো আবাদ করলে এক হেক্টর জমিতে চাষাবাদ খরচ হয় ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। ধান উৎপাদন হবে ৬ মেট্রিক টন। ১৫ টাকা কেজি দরে মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। তরমুজ চাষে এক হেক্টর জমিতে খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকার একটু বেশি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তরমুজ উৎপাদন হবে কমপক্ষে ৩০ মেট্রিক টন। সর্বনিম্ন ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে হবে প্রায় নয় লাখ টাকা। তরমুজে লাভবান বেশি হওয়ায় কৃষকেরা এখন তরমুজ চাষের প্রতি ঝুঁকছেন।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন খুলনাটাইমসকে বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় চাষিদের সেচ খরচ কম হয়েছে। তবে নিচু জমিতে পানি জমে একটু ক্ষতি হলেও ফলন ভালো ও বড় আকারের তরমুজ ফলনে চাষিরা লাভবান হবে বলে মনে করছেন তিনি। তিনি বলেন, লবণাক্ত এসব জমিতে পাকিজা, সুইট ড্রাগন ও প্রাউন্ড জাতের তরমুজ ভাল হয় তাই কৃষকরা বীজ তলা তৈরী করে এসব জাতের বীজ রোপন করছেন।

মাঠে গিয়ে কৃষকদের হাতে-কলমে তরমুজ চাষ সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হয়েছে দাবী করে তিনি আরও বলেন, মাটি তৈরী থেকে বালাই দমন পর্যন্ত এমনকি তরমুজ বিক্রির আগমুহুর্ত পর্যন্ত সকল চাষিকে সহায়তা করা হচ্ছে। মাঠ দিবসের মাধ্যমে কৃষকদের সাফল্য তুলে ধরা হচ্ছে, সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ব্লুগোল্ড প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় খাল খনন করে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে চাষিদের মাঝে তরমুজের বীজ সরবারহ করা হয়। এভাবেই কৃষির মাধ্যমেই কৃষকের ভাগ্য উন্নয়ন করা আমাদের লক্ষ্য।