ডায়াবেটিস রোগীর জরুরি পরীক্ষা

0
461

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা শরীরের অনেক অনেক অংশে প্রভাব ফেলে, তবে সম্ভাব্য অনেকগুলো সমস্যাই কার্যকর মোকাবেলা করা যায় আগে ভাগে ধরতে পারলে। তাই ডায়াবেটিস সম্পর্কিত সমস্যাগুলো আগে চিহ্নিত করা নিশ্চিত করতে হলে ডায়াবেটিস রোগীদেরকে বছরে একবার বা কয়েক বার কিছু টেস্ট করতে হয়। নিয়মিত টেস্ট করানোর সুবিধা থাকলে ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে দীর্ঘ দিন, মনেও থাকে শান্তি।
বার্ষিক কিছু টেস্ট-
বছরে একবার এসব টেস্ট করাতে হয় তবে স্বাস্থ্যের অবস্থা বিশেষে ডাক্তারগণ বছরে একাধিকবারও টেস্ট করাবার পরামর্শ দিতে পারেন।
চোখের মনি বিষ্ফোরিত করে চোখ পরীক্ষা-
চক্ষু চিকিৎসকগণ চোখ পরীক্ষা করে নির্ণয় করতে পারেন রক্তের উচ্চমাত্রা সুগার বেশ কিছু দিন থেকে যাওয়াতে চোখের রেটিনাতে ক্ষতি হলো কিনা। প্রথমে চোখের মনিকে প্রসারিত করার জন্য চোখে ড্রপ দেওয়া হয়, যাতে ডাক্তার চোখের পেছন দিকটা ভালোভাবে পরীক্ষা করতে পারেন। ডায়াবেটিস রোগীর চোখের সমস্যা অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, সম্ভবত: খন্ডনও করা সম্ভব, তবে সেজন্য চাই রক্তের গ্লুকোজকে সুনিয়ন্ত্রণ করা। অনেকের জন্য দৃষ্টিশক্তিকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন হয় শল্য চিকিত্সার।
সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা-
প্রতি বছর সাধারণ স্বাস্থ্য চেক আপ করা ভালো প্রত্যেকের জন্যই। যদিও ডায়াবেটিস চিকিত্সকগণ প্রায় সময় রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণের দিকেই বেশি নজর দেন, শরীরের সার্বিক কুশলও নিঃসন্দেহে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কিডনী টেস্ট-
কিডনীর স্বাস্থ্য পরিমাপ করা যায় মূলত দুটো টেস্ট করিয়ে। যেমন-মাইক্রোএলবুমিন এবং ক্রিয়েটিনিন। মাইক্রোএলবুমিন টেস্ট করলে প্র¯্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি সম্বন্ধে জানা যায়। রক্তের উচ্চ মাত্রার সুগার কিডনী সূক্ষ্ম রক্তনালীর ক্ষতি করলে এমন হতে পারে। চিকিৎসা না করালে কিডনী এক সময় নিষক্রয় হয়ে যেতে পারে। রক্তে ক্রিয়োটিনিন মান মাপলে ডাক্তার জানতে পারেন কিডনী কত কার্যকরভাবে বর্জ্য নিষ্কাশন করতে পারছে।
লিপিড প্যানেল-
রক্তে কোলেস্টেরল, চর্বি মান অস্বাভাবিক থাকলে হূদরোগের ও রক্তনালী রোগের সম্ভাবনা থাকে, এটি হলো ডায়াবেটিসের একটি সম্ভাব্য জটিলতা। লিপিড প্যানেল টেস্ট করে রক্তে চর্বির মাত্রা জানা যায়। সাধারণভাবে রক্তের এলডিএল (মন্দ কোলেস্টেরল) ১০০-এর নিচে থাকলে এবং এইচডিএল (ভালো কোলেস্টেরল) ৪০-এর উপরে থাকলে ভালো। লিপিড প্যানেল করে রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড মানও জানা যায়, ১৫০ এর নিচে থাকলে ভালো।
বছরে একাধিকবার যেসব টেস্ট করাতে হয়-
রক্তচাপ, চিকিৎসককে দেখালে তিনি রক্তচাপ মেপে দেখেন, তাই করা উচিত। রক্তে সুগার বেশি থাকলে উচ্চ রক্তচাপও হতে পারে আর এর কোনও সতর্ক সংকেতও সাধারণত থাকেনা। রক্তে চাপমান হূদস্বাস্থ্য ও রক্তনালীর স্বাস্থ্য নির্দেশ করে।
পদযুগল পরীক্ষা-
বছরে অন্তত দু’বার দুটো পা পরীক্ষা করানো উচিত, কোনও ফাটাফোটা, ক্ষত, ফোড়া, ঘা আছে কিনা। রক্ত চলাচল কমে গেলে এমন হতে পারে। চিকিৎসক মনোফিলামেন্ট দিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন পায়ের চেতনা আছে কিনা। চিকিৎসক সেক্ষেত্রে বিশেষ জুতো পরতে বলতে পারেন, ওষুধও দিতে পারেন।
হিমোগ্লবিন এওয়ান সি-
বছরে তিন/চার বার এ পরীক্ষা করানো ভালো। রক্তের পরীক্ষা। বিগত দুই থেকে তিন মাসে রক্তে গ্লুকোজের গড় মান এই পরীক্ষা করে বোঝা যায়। গ্লুকোজ মান ব্যবস্থাপনার কতটুকু কার্যকর হচ্ছে তা বোঝা যায়। এ ওয়ান সি মান বেঠিক থাকলে বোঝা যায় গ্লুকোজ ব্যবস্থাপনা ঠিকমত হচ্ছে না।