জলদস্যুদের আনুষ্ঠানিকভাবে আত্বসমর্পনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সুন্দরবনের আত্বসমর্পনের প্রক্রিয়া

0
716

সাইমুম মোর্শেদঃ সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ১ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) বনদস্যুদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শেষ সুন্দরবনের দস্যু আত্বসমর্পনের প্রক্রিয়া। সকাল ১০ দিকে বাগেরহাটের শেখ হেলাল উদ্দিন ষ্টেডিয়ামে এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে সরাসরি ভিডিও বার্তায় উপস্থিত ছি‌লেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এছাড়া স্বারষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছি‌লেন। এসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সুন্দরবনে আত্বসমর্পনকৃত সাবেক জলদস্যুদের পূর্নবাসনের লক্ষ্যে প্রদত্ত আর্থিক অনুদান হস্তান্তর ও ছয়টি জলদস্যু বাহিনীর প্রধান সহ ৫৪ জন সক্রিয় ৫৮ টি অস্ত্র ও ৩,৩৫১ টি গোলাবারুদ জমা দেয়।

কিছুদিন আগেও বনজীবিদের জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করতো দস্যুরা, মুক্তিপনের অর্থ দিতে দেরি হলেই তাদের উপর চালানো হতো অমানুষিক নির্যাতন। ভয়ানক জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করে চলতে হতো সুন্দরবনকে কেন্দ্রকরে উপকূলের খেটে খাওয়া হাজারো জেলে, বাওয়ালীদের।

বনজীবিদের এই দস্যুদের হাত থেকে মুক্তিদিতে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য দরজার দ্বার খুলে দেয় সরকার।শুরু করে আত্বসমর্পন প্রক্রিয়া।এর পর গেলো দুই বছর একে একে আত্বসমর্পন করে প্রায় আড়াই শতাধিক বনদস্যু।দস্যুদের ব্যাবহার করা তিন শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র সহ দুই হাজারের ও অধিক গুলি।

র‌্যাব সুত্রমতে, এ পর্যন্ত সর্বমোট র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর হতে সফল অভিযানে ২৬টি বাহিনীর সর্বমোট ২৭২ জন জলদস্যু/বনদস্যু গ্রেফতার হয় ও ৪০৪টি অস্ত্র এবং ১৯,১৫৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে। র‌্যাব-৮ অভিযানে সুন্দরবন হতে সর্বমোট ১,০০১টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৭,৬১৫ রাউন্ড গোলাবারুদ, ৪টি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চামড়া, ৬৬টি হরিণের চামড়াসহ কয়েক শতাধিক জিম্মী জেলেদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

দক্ষিণ অঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থিত পৃথিবীর একক বৃহত্তম প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত এ বন দেশের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। সুন্দরবনকে ঘিরে এসকল জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ যুগ যুগ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বর্তমান সরকারের ঘোষণা মোতাবেক র‌্যাপিড এ্যাকশান বাটালিয়ন (র‌্যাব)’র উদ্যোগের কারনে বনজীবীদের কাছে ভয়ঙ্কর বন এখন ধীরে ধীরে অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে সুন্দরবনের জলদস্যু-বনদস্যুদের আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে পাল্টে যাচ্ছে সুন্দর বনের চিত্র। তাছাড়া সরকারের নানা পরিকল্পনায় সুন্দরবন বিশ্বের পর্যটন বাজারে আরও মনমুগ্ধকর রুপে হাজির হতে যাচ্ছে। আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যু-বনদস্যুদের পুনর্বাসনে ‘সুন্দরবনের হাসি’ প্রকল্পের উদ্বোধন চলতি বছরের গত ১২জুন আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধন করা  হয়েছে। এতে করে সুন্দরবনের বনদস্যুরা সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে দ্রুততার সাথে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে।

জানা যায়,ইতিমধ্যে সুন্দরবন কেন্দ্রীক বনদস্যু/জলদস্যু বাহিনীর অপতৎপরতা বহুলাংশে কমে এসেছে। সাধারণত ইলিশ ও শুটকি মৌসুমকে কেন্দ্র করে জলদস্যু/ডাকাতরা তাদের ডাকাতি, জেলে অপহরণ এবং অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সে কারণে ইলিশ মাছ আহরণ ও শুটকি প্রক্রিয়াকরণ মৌসুমে সুন্দরবন এলাকায় যাতে মৎস্য আহরণকারী জেলেদের জলদস্যুরা অপহরণ বা গণডাকাতির কবলে না পড়তে হয় সে লক্ষে র‌্যাব সুন্দরবন এলাকায় বনদস্যু ও ডাকাত দমনে বিশেষ আভিযানিক কার্যক্রম জোরদার করেছে।

বনদস্যুদের এই স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে র‌্যাবকে সহায়তা করেছেন বেশ কিছু সংবাদকর্মী বেসরকারী টেলিভিশন যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মোহসিন উল হাকিম, খুলনার সময় খবরের রিপোর্টার  সোহাগ দেওয়ান ও নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের রিপোর্টার আশিকুর রহমান শ্রাবন সহ এই সকল সংবাদকর্মীরা জীবনের ঝুকি নিয়ে দস্যুদের সাথে সরকারের মধ্যস্ততাকারী হিসেবে কাজ করে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করতে বিশাল অবদান রাখেন।

র‌্যাব সুত্র আরও জানায়, আত্মসমর্পণকৃত সাবেক এসকল জলদস্যু পরিবারের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষে র‌্যাব কর্তৃক ‘সুন্দরবনের হাসি’ (প্রস্তাবিত) প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

এদিকে আত্বসমর্পনের খবর উপকূলে ছড়িয়ে পড়লে উপকূলের মানুষের মনে উৎসবের আমেজ বিতাজ করছে। তাদের কাছে যে নামগুলা আতংকের কারন হয়ে থাকতো,এখব আর থাকবে না সেই ভয়ঙ্কর বনদস্যু রাজু, মাস্টার, সাত্তার, বিডিআর, জাকির, শরিফ, সিদ্দিক বাহিনীর নিষ্ঠুর কার্যকলাপ। মৎস্য সম্পদ আহরণ মৌসুমে সবাই নির্দ্ধিধায় মাছ ধরবে, পরিবার থাকবে নিশ্চিন্তে। সামনের দিকে এগিয়ে যাবে দেশের অর্থনীতি।এমনটাই আশাবাদ ব্যাক্ত করছেন উপকূলের এই সব শ্রমজীবী মানুষ।