ছুটি বাড়াতে মাতৃকালীন সনদ জালিয়াতির অভিযোগ রাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে

0
216

টাইমস ডেস্ক:
ছুটি বাড়াতে দফায় দফায় জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। প্রথমে শিক্ষা ছুটি নিলেও ছুটি বাড়াতে মাতৃকালীন জাল সনদ ব্যবহার করেন তিনি। এ ছাড়া অভিযোগ তথ্য গোপনেরও। অভিযুক্ত ড. সালমা সুলতানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ড. সালমা সুলতানা ২০০৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রথম দফায় মোট দুই বছর ছয় মাস সাতদিন শিক্ষাছুটি ভোগ করেন। তবে তার গবেষণার কাজ শেষ হয়নি দাবি করে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির কাছে ছুটি বাড়াতে আবেদন করেন তিনি। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১ এপ্রিল ২০১৭ থেকে ১ মার্চ ২০১৯ পযর্ন্ত তিন দফায় সালমাকে দুই বছর একদিন পূর্ণ বেতনে শিক্ষাছুটি দেয়। তবে বারবার ড. সালমা ছুটি বৃদ্ধির আবেদন করলে ছুটির যথার্থতা ও গবেষণার অগ্রগতি নিয়ে সন্দেহ হয় বিভাগ কর্তৃপক্ষের। জানতে পারেন, ২০১৮ সালেই ড. সালমার সঙ্গে তার সুপারভিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। গত ৫ মার্চ ২০১৯ এবং ৬ মার্চ ২০১৯ তারিখে তার সুপারভাইজার জানান ড. সালমার সুপারিশ লেটারটি তার লেখা নয়। উপায় না পেয়ে ড. সালমা এবার দাবি করেন তিনি অন্তঃসত্ত্বা। এ নিয়ে আবারও ছুটি দাবি করেন। ড. সালমার প্রসবজনিত সনদের বিষয়টি যাছাইয়ের জন্য ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অফিসিয়াল মেইল থেকে সনদটির ছবিসহ একটি মেইল করা হয় সনদে স্বাক্ষরকারী ডাক্তার ডেলের কাছে। ডাক্তার ডেল মেইল করে বলেন, এই স্বাক্ষর ও সনদটি আমার। কিন্তু সালমা সুলতানা আমার কাছ থেকে কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করেননি। ছুটি নিয়ে জালিয়াতি করায় তার ছুটির জন্য সমস্ত সুপারিশ বন্ধ করে দেয় বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী শিক্ষক সালমার আর কোনো শিক্ষাছুটি পাওনা না থাকায় সপদে বিভাগে যোগদানের জন্য ২০ মে ২০১৯ তারিখে রেজিস্ট্রার দফতর থেকে স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়। পরবর্তীতে প্রাপক না থাকায় স্থায়ী ঠিকানা থেকে চিঠি ফেরত আসে আর অস্থায়ী মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা থেকে ওই চিঠির জবাব দফতরে আসেনি। এজন্য ২৩ জুলাই ২০১৯ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯২তম সিন্ডিকেট সভার ৬৩ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক পত্র ইস্যুর তারিখ থেকে দুই মাসের মধ্যে সপদে বিভাগের যোগদানের জন্য অনুরোধ করা হয় শিক্ষক সালমাকে। নির্ধারিত সময় ১ এপ্রিল ২০১৭ তারিখের মধ্যে সপদে যোগদানে ব্যর্থ হলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে অবসিত (টারমিনেট) হয়েছে বলে গণ্য হবে বলেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এদিকে, বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ৫০১তম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডেকেট সভায় এই অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. গোলাম কবিরকে আহ্বায়ক করে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজিনা লজ ও ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও সিন্ডিকেট সদস্য ড. রুস্তম আলী আহমেদকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্য ড. আবদুল আলিম বলেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সালমা সুলতানা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে বাইরে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যোগদান করেছেন। তার যোগদানপত্রটি এখনো গৃহীত হয়নি। এ প্রসঙ্গে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, ড. সালমা সুলতানার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট চাইলে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও কাগজপত্র আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দিয়েছি। তার বিষয়ে বিধি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা ব্যবস্থা নেয়ার নেবে। এ বিষয়ে ড. সালমা সুলতানার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন।