চোখে দেখেনি কলেজের মুখ, নেই ছাত্রত্ব : একাধিক মামলার আসামী কাপড় ব্যবসায়ী ফরহাদ দেবহাটা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক!

0
221

দেবহাটা প্রতিনিধি:
মাঝ বয়সে কোনমতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে উন্মুক্তের একটি স্কুল থেকে ক’বছর আগেই মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়েছে ফরহাদ হোসেন (৩২)। সে দেবহাটা উপজেলার উত্তর সখিপুরের নুর ইসলাম গাজীর ছেলে। ত্রিশ বছর বয়সে টেনেটুনে মাধ্যমিক পাশ করার কথা শুনলেই ফরহাদ সম্পর্কে যেকোন মানুষের মনে নুন্যতম ধারনা চলে আসে। প্রকৃত বয়স ত্রিশোর্ধ হলেও, ছাত্রদলের পদ পেতে এবং রাজনীতির সুবিধার্তে জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স কমিয়ে ২৬ করে কচিখোকা সেজে আছে সুচতুর ফরহাদ।
জীবনে পড়াশুনায় মনোযোগী না হয়ে বখাটেপনা করেই অধিকাংশ সময় কেটেছে তার। সখিপুর কাঁচাবাজার সংলগ্ন রেজিষ্ট্রি অফিসের উত্তর পাশে ফরহাদের রয়েছে একটি কাপড়ের দোকান। ২০১৩ সাল ও তৎপরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলনের নামে দেবহাটা জুড়ে সংঘটিত সীমাহীন নাশকতা কর্মকান্ডে নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে তৎকালীন উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি কামরুল ইসলাম ও রাজীব আহমেদের আস্থাভাজন হিসেবে ছাত্রদলের রাজনীতিতে উত্থান হয় গন্ডমুর্খ ফরহাদের।
পরবর্তীতে সে বনে যায় সখিপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। সহিংসতাকালীন সময়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রীতিমতো আওয়ামী নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মারপিট, ঘরবাড়ি ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর-লুটপাট, সরকারী গাছ ও রাস্তা কেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নসহ সীমাহীন তান্ডব চলে ওই ফরহাদের নেতৃত্বে। এসব সহিংস ঘটনায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক নাশকতার মামলা। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগেও সরকার বিরোধী কর্মকান্ডসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয় সে।
পরবর্তীতে গ্রেপ্তার হয়ে ৫৩ দিন হাজতবাস শেষে জামিনে মুক্তি পায় ফরহাদ। উপজেলার কিছু বিএনপি নেতা ও তৎকালীন ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের আশ্বাসে ছাত্রদলে পদ পাওয়ার জন্য ছাত্রত্ব দেখাতে ঢুকে পড়ে ভোকেশনাল একটি স্কুলে। সেখান থেকে টেনেটুনে কোনভাবে মাধ্যমিকের গন্ডি পার করলেও নিয়মনুযায়ী পরবর্তীতে পড়াশুনা তো দূরের কথা, কখনো কলেজের মুখ দেখেনি ফরহাদ। দীর্ঘদিন ধরে বিবাহিত অবস্থায় অছাত্র কামরুল ইসলাম ও রাজিব আহমেদের নেতৃত্বে দেবহাটাতে ছাত্রদলের কমিটি নামমাত্র কার্যক্রম চালিয়ে আসার পর ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হতে থাকলে উপজেলা ছাত্রদলের শীর্ষ পাওয়ার আশায় তদবির শুরু করে ফরহাদ হোসেন।
সম্প্রতি কামরুল-রাজিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি বিলুপ্ত হলে নামসর্বস্ব ইছামতি টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের ভুয়া ছাত্রত্ব দেখিয়ে ফরহাদ হোসেন দেবহাটা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়কের পদটি হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ ছাত্রদল নেতাকর্মীদের। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ফরহাদ হোসেনের ছাত্রত্ব আছে কিনা জানতে সোমবার ওই নামসর্বস্ব ইছামতি টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের খোজে সংবাদকর্মীরা পারুলিয়ার খেজুরবাড়িয়াতে গেলে সেখানে কলেজটির কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এমনকি যেস্থানটিতে কলেজটির অবস্থান দেখানো হয়েছে সেখানে মাটির স্তুপ ছাড়া নামসর্বস্ব ওই কলেজের কোন সাইনবোর্ডও চোখে পড়েনি সংবাদকর্মীদের। এদিকে যে ব্যাক্তির কোন ছাত্রত্বই নেই, যিনি কখনো কলেজের মুখ দেখেননি উল্টো একাধিক নাশকতা মামলার আসামী সেই ফরহাদ হোসেনকে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক করায় ক্ষুদ্ধ ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির বহু নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩১ আগষ্ট ওই অছাত্র একাধিক মামলার আসামী কাপড় ব্যবসায়ী ফরহাদকে আহ্বায়ক ও ফিরোজ হোসেনকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা ছাত্রদল। একই সাথে পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে উপজেলার পাচটি ইউনিয়নের কমিটি গঠন শেষে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে উপজেলা ছাত্রদলের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্যর সময়সীমা বেধে দেয়া হয়। কিন্তু সেই সময়সীমা পার হতে গেলেও অদ্যবধি কোনো ইউনিয়নের কমিটি গঠন না করে এবং উপজেলা কমিটির ভোটের আয়োজন না করে বরং আহ্বায়কের পদ ধরে রাখতেই এসব ইউনিটের কমিটি গঠনে সম্পূর্ন ব্যার্থ হয়েছে ফরহাদ হোসেন।
তাই ওই অছাত্র, একাধিক মামলার আসামী, কাপড় ব্যবসায়ী ফরহাদের নেতৃত্বাধীন সাংগঠনিকভাবে ব্যার্থ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে প্রকৃত ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে কলঙ্কমুক্ত উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদন দেয়ার জন্য জেলা ছাত্রদল নেতৃবৃন্দদের কাছে দাবী জানিয়েছেন বিএনপিসহ যুবদল, ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রত্বহীন কাপড়ের ব্যবসায়ী ও একাধিক মামলার জেলখাটা আসামী ব্যার্থ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফরহাদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি ওভারলুক করার অনুরোধ করে তিনি বলেন, ভাই সব কথা তো মোবাইলে বলা যায়না, দয়া করে আমার কাপড়ের দোকানে আসুন।