গ্যাসের পুরনো পাইপলাইনের করণে ভয়াবহ দুর্ঘটনার হুমকিতে জানমাল

0
211

টাইমস ডেস্ক:
দীর্ঘ প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো মেয়াদোত্তীর্ণ পাইপলাইনেই চলছে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সরবরাহ। ফলে সংযোগ লাইনে হচ্ছে লিকেজ। ঘটছে দুর্ঘটনা। কিন্তু তার সমাধান না করেই তিতাসের কর্মকর্তারা যথাযথভাবে লিকেজ মেরামত ও সংস্কার না করেই হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অংকের টাকা। বর্তমানে তিতাসের বিতরণ এলাকায় এক হাজার ৬২২টি লিকেজ রয়েছে। তার মধ্যে সংস্কার করে ঠিক করা হয়েছে ৭৮১টি। এখনো অরক্ষিত রয়েছে ৮১৪টি। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো এখন গ্যাস পাইপলাইনের লিকেজের কারণেও দুর্ঘটনা বাড়ছে। ওসব লিকেজ থেকে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাইপলাইনের লিকেজ থেকে বড় কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তিতাস গ্যাস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ১৯৬৭ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা জেলা শহরে গ্যাস সরবরাহের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৭-৬৮ সালে ডেমরা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ১২ ইঞ্চি এবং ডেমরা থেকে পোস্তগোলা ১৪ ইঞ্চি ও ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়। চাপ প্রশমন করে ২ ইঞ্চি থেকে ৬ ইঞ্চি ব্যাসের বিতরণ নেটওয়ার্ক স্থাপন করে গ্রাহকদের গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। তারপর থেকে নব্বই দশকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ঢাকা শহরের বিভিন্ন অংশে ৫০ পিএসআই (প্রতি বর্গফুটে গ্যাসের চাপ) চাপের বিভিন্ন ব্যাসের বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়। আর ওই নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহর এলাকা ক্রমান্বয়ে বর্ধিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্কও সম্প্রসারণ করা হয়। ৫০ পিএসআই চাপের বিভিন্ন ব্যাসের বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়। ওই পাইপলাইনগুলোর মেয়াদকাল ছিল ৩০ বছর। কিন্তু এখনো সেই পাইপলাইন ব্যবহার হচ্ছে। অনেক আগেই বেশির ভাগ পাইপলাইনেরই মেয়াদ ফুরিয়েছে। ওসব পাইপলাইন একবার বসানোর পর নিয়মিত দেখভালেরও অভাব রয়েছে। গ্রাহক লিকেজ খুঁজে পেলে তিতাসকে ফোনে জানালে তিতাস ব্যবস্থা নেয়। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে দুর্ঘটনার পর তিতাস প্রমাণ করে দিয়েছে পাইপলাইনের লিকেজ খুঁজে বের করা গ্রাহকের দায়। গ্রাহক জানার পরও তিতাসকে না জানানোটাই অপরাধ। আর তিতাসের জানাশোনার বাইরে দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তিতাসের কোনও দায় নেই। অথচ অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই ভুক্তভোগিরা ওই এলাকার বিভিন্ন গ্যাস লাইনে লিকেজের অভিযোগ করেছেন। এক মাসের মধ্যে গ্যাসের লিকেজ মেরামত কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয়নি।
সূত্র জানায়, প্রতি বছরই গ্যাসের লিকেজ মেরামত ও সংস্কারে নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হলেও আসল কাজ হচ্ছে না। গ্যাসের পুরনো পাইপলাইনগুলো নতুন করে করা না হলে নারায়ণগঞ্জের বায়তুস সালাত মসজিদের মতো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থেকেই যাবে। গত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে গ্যাসের কারণে অগ্নিকান্ড ঘটেই চলেছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) রানা আকবর হায়দারি জানান, তিতাসের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে লিকেজের তালিকা করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী জোন ভাগ করে ওই জোনের ডিএমডি এবং জিএমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আশা করা যায় আগামী এক মাসের মধ্যে বেশিরভাগ লিকেজ মেরামত করা সম্ভব হবে। যেসব লিকেজ মেরামতের ক্ষেত্রে অনেক টাকার প্রয়োজন সেগুলা বাছাই করে হেড অফিসে পাঠাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কাজ শুরু করতেও বলা হয়েছে। যাতে করে যা বিল আসে তা বোর্ডে পাস করে দ্রুত ছাড় দেয়া যায়। ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের ডিএমডি এবং ঢাকা নর্থ আর সাউথের জিএমকে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে তাদের এলাকার লিকেজের হিসাব দিয়েছেন। তিতাসের পক্ষ থেকে জোন ভাগ করে তালিকা ধরে ধরে একটা একটা করে লিকেজ মেরামত করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ লিকেজ সারাতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় লাগার কথা নয়। তবে কিছু জটিলও রয়েছে। যেমন হাইওয়ের নিচে অথবা নদী বা খালের নিচের, সেগুলোও এখন বের করে মেরামত করতে বলা হয়েছে। সেগুলো মেরামত করতে মাসখানেক সময় লাগতে পারে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে এবার পুরনো পাইপলাইন সরিয়ে নতুন করে পাইপ স্থাপনে বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মতো আর যেন বড় ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্যই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত হবে।