গল্পের রাজকুমার ছিলেন জাফর ইকবাল: ববিতা

0
174

টাইমস বিনোদন:
বাংলা চলচিত্রের সুদর্শন ও স্টাইলিশ নায়কদের মধ্যে অন্যতম জাফর ইকবাল। যেমন স্টাইলিশ তেমন অভিমানী, আবেগপ্রবণ। ছিলেন বোহেমিয়ান। জাফর ইকবাল চিরসবুজ নায়ক হিসেবে পরিচিত। শহুরে রোমান্টিক ও রাগী তরুণের ভূমিকায় দারুণ মানালেও সব ধরনের চরিত্রে ছিল তাঁর সহজ বিচরণ। অভিনয়ের পাশাপাশি বাস্তবজীবনে চমৎকার গান গাইতে পারা এ অভিনেতা বেশ কিছু ছবিতে গায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৫০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে জন্ম জাফর ইকবালের। বাড়িতে গানবাজনার রেওয়াজ ছিল। তাঁর বোন শাহনাজ রহমতুল্লাহ একজন সুপরিচিত কণ্ঠশিল্পী। বড় ভাই আনোয়ার পারভেজও নামকরা শিল্পী। জাফর ইকবাল প্রথমে গায়ক হিসেবেই পরিচিতি পান। ১৯৯২ সালের এই দিনে পাড়ি দেন জীবনের ওপারে। নায়ক জাফর ইকবালের সঙ্গে জুটি হয়ে ৩০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন ববিতা। তাঁদের দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। প্রেমের কথাও শোনা যেত সেই সময়ে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতা নায়ক জাফর ইকবালকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। ববিতা শুক্রবার আলাপকালে বললেন, জাফর ইকবাল অভিনীত শেষ সিনেমা ছিল ‘লক্ষ্মীর সংসার’। সেই সিনেমায় একটি সংলাপ ছিল, ‘ভাই আজিমপুর যাবো কীভাবে?’ এখনো আমার কানে বাজে তার বলা সংলাপটি। ছবিটি মুক্তির কিছুদিন পরই পাড়ি দেন জীবনের ওপারে। এ যেন শুরু হওয়ার আগেই সব শেষ হয়ে যাওয়া। চল”িচত্রকে আরো অনেক কিছু দিতে পারতেন। নিজেকে নিয়ে যেতে পারতেন অনন্য উ”চতায়। কিš‘ ক্যান্সার বাধা হয়ে দাঁড়ালো বাংলা চল”িচত্রের এগিয়ে যাওয়ার পথে। কেড়ে নিল একটি তরতাজা প্রাণ। ভেঙে গেল হাজারো স্বপ্ন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই অভিনেত্রী বলেন, অনেক বড় বড় অভিনেতার সঙ্গে কাজ করেছি। আমাদের নায়করাজ রাজ্জাক ভাই, ফারুক, সোহেল রানাসহ আরো অনেকের অভিনয়ে আজও মুগ্ধ হয়েছি। ভারতের সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও অভিনয় করেছি। কিš‘ আমার পছন্দের নায়ক ছিল জাফর ইকবাল। তার কিছু জিনিস আমাকে বরাবরই মুগ্ধ করত। তিনি সুদর্শন ছিলেন। তার অভিনয় সাবলীল। তার কণ্ঠ, ব্যক্তিত্ব, ফ্যাশন সচেতনতা, রুচিবোধ চমৎকার। খুব ভালো ইংরেজি গান গাইতে পারতেন। গিটার বাজিয়ে ওর মুখে ইংলিশ গান শোনাটা আমাদের সময়কার যেকোনো মেয়ের জন্য স্বপ্নের একটি মুহূর্ত। ওর মতো পরিপূর্ণ কোনো নায়ক আমাদের চল”িচত্রে আসেনি।’ যে কথা চিরপ্রচলিত জাফর ইকবালের ক্ষেত্রে, এক চির বোহেমিয়ান, জিপসির মতো ছিলেন- ববিতাও বললেন সে কথা, উনি খুব অভিমানী এবং আবেগপ্রবণ ছিলেন। কিছুটা বোহেমিয়ান স্বভাবের। জীবনযাপন ছিল কিছুটা অগোছালো। নিজের সময়ে তো বটেই, পরের সব প্রজন্মকেই প্রভাবিত করেছেন তিনি। শুধু অভিনয় বা গান দিয়ে নয়, ব্যক্তিত্বের আবেদন, পোশাক, স্টাইল- সব মিলিয়ে জাফর ইকবাল যেন ছিলেন এক গল্পের রাজকুমার! নিজস্বতা ছিল অভিনয়ে। বাংলা চল”িচত্র তাঁকে মনে রাখবে।’ জাফর ইকবাল অভিনীত প্রথম সিনেমার নাম ‘আপন পর’। খান আতাউর রহমান পরিচালনা করেছিলেন ছবিটি। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে তার নায়িকা ছিলেন কবরী। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন জাফর ইকবাল। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চল”িচত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। ‘সূর্যসংগ্রাম’ ও এর সিকুয়েল ‘সূর্যগ্রহণ’ চল”িচত্রে ববিতার বিপরীতে অভিনয় করেন। ১৯৭৫ সালে ‘মাস্তান’ চল”িচত্রে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় তাঁকে সে প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে পরিচিতি পান ‘নয়নের আলো’ সিনেমার মাধ্যমে। সর্বমোট ১৫০টি চল”িচত্রে অভিনয় করেছেন জাফর ইকবাল। গায়ক হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য। ছোটবেলা থেকেই গানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে বন্ধুদের নিয়ে ‘রোলিং স্টোন’ ব্যান্ড গড়েছিলেন। এলভিস প্রিসলি তার খুব প্রিয় ছিল। সংগীত পরিচালক ভাই আনোয়ার পারভেজের সুরে ‘বদনাম’ ছবির ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’ গানটি দিয়ে চল”িচত্র প্লেব্যাকে অভিষেক হয় তার। সুরকার আলাউদ্দিন আলীর সুরে অনেক গান গেয়েছেন তিনি। তার গাওয়া শ্রোতাপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারো ঘরণী’, ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন’, ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’ আশির দশকে ‘কেন তুমি কাঁদালে’ শিরোনামে একটি অডিও অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছিল তার।