খুলনা-মোংলা রেলপথের খুলনা অংশে রূপসা রেলসেতুতে প্রথম স্প্যান বসানোর কাজ সফলভাবে সম্পন্ন

0
877

নিজেস্ব প্রতিবেদকঃখুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের রূপসা রেলসেতুর প্রথম স্প্যান বসানো সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। খুলনা অংশে প্রথম স্প্যান মাটি থেকে ১৬ মিটার উঁচুতে এই স্প্যান বসানো হয়েছে। এরই মধ্যে ভারত থেকে ৩২ দশমিক ৫ মিটারের গার্ডার আনা হয়েছে। এ রেলসেতুতে মোট ১৪২টি স্প্যান বসবে। ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার এ রেলপথ প্রকল্পে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হবে। রূপসা রেলসেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার।প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই রেলপথটি নির্মিত হচ্ছে।৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রূপসা রেলসেতু নির্মাণের জন্য ৯৫৮টি পাইলিং করার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ৮৮৬টি নদীর দু’পাড়ে এবং ৭২টি নদীর মধ্যে। এরই মধ্যে দুই শতাধিক পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া রেলপথ নির্মাণের জন্য ১০ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন রেলপাটি প্রয়োজন হবে । যা ইতিমধ্যে প্রকল্প এলাকায় আনা হয়েছে । রূপসা রেলসেতু এখন দৃশ্যমান হওয়ার ফলে দেশের দক্ষিঞ্চালের সাথে সহজে রেপপথে মালাশাল পরিবহন সহজতর হবে । এ সেতুতে পর্যায়ক্রমে ১৪২টি স্প্যান বসিয়ে তৈরি হবে এই সেতু। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে সেতুর কাজ সমাপ্ত করতে চায় কর্তৃপক্ষ। তবে ২০২১ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা সময় ও প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করেছে রূপসা সেতুর ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টাব।
বাংলাদেশ রেলওয়ের রূপসা রেল সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম জানান, সেতুর খুলনা অংশে ৬৬ ও ৬৭ নম্বর পিলারের ওপর মাটি থেকে ১৬ মিটার উঁচুতে এই স্পপ্যান গত ৯ আগস্ট বসানো হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকায় এসে পৌঁছেছে ভারতে নির্মিত ৩২ দশমিক ৫ মিটারের আরও ৮টি স্প্যানের বিভিন্ন অংশ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ ৩টি অংশে বিভক্ত। যার একটি রেল সেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। প্রকল্পের অধীনে লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হবে। আর রূপসা নদীর ওপরে হযরত খানজাহান আলী (রাঃ) সেতুর দেড় কিলোমিটার দূরে যুক্ত হবে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু।
এছাড়া ২১টি ছোটখাট ব্রিজ ও ১১০টি কালভার্ট নির্মিত হবে। ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন হবে। স্টেশনগুলোর মধ্যে ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদ নগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মোংলা। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেললাইনের জন্য ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ এবং ব্রিজের জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বাকী টাকা জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানান, রূপসা রেল সেতু বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই রেলপথটি নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের রেললাইন তৈরির জন্য ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর ভারতের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভারতের ইরকন এর সাথে চুক্তি হয়েছে। আর ব্রিজ তৈরির জন্য ওই বছরের ২৪ আগস্ট ভারতের লারসেন অ্যান্ড টাব নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয়। এর আগে ২০১২ সালের নভেম্বর প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়ি জেভি প্রতিষ্ঠান।
স্টুপ কনসালট্যান্টস লিঃ টিম লিডার গোলাম ফরুক জানান, ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু নির্মাণের প্রথম দফায় বর্ধিত সময়সীমা শেষ হয়েছে জুন মাসে, কিন্তু কাজের অগ্রগতি মাত্র ২২ শতাংশ। তাই দ্বিতীয় দফায় সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে ৩০০ কোটি টাকা।