খুলনা জেলা ছাত্রলীগে অন্তঃকলহ, নেতৃত্বপ্রত্যাশীদের লবিং-গ্রুপিং

0
856

এম জে ফরাজী : প্রায় দুই বছর আগে খুলনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পর থেকে বিতর্ক কিছুতেই যেন পিছু ছাড়ছে না। আলোচনায় কখনো সভাপতি, কখনো অপরিপক্ক নেতৃত্ব। আবার কখনো উপজেলা কমিটি গঠন নিয়ে বিতর্ক। সবশেষ কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে তো হয়ে গেল নাটকীয় ঘটনা। জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বের কর্তৃত্ব টেনে কেন্দ্রীয় কমিটি দিয়েছে ওই উপজেলা ছাত্রলীগের অনুমোদন। যা নিয়ে নিজেদের মধ্যে চলছে নীরব দ্বন্দ্ব, কলহ। যার বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
দলীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ ১৫ বছর পর কাউন্সিলর ও ডেলিগেট ছাড়াই ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন শেষে সমঝোতার ভিত্তিতে পারভেজ হাওলাদারকে সভাপতি এবং মোঃ ইমরান হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনের প্রায় ৬ মাস পর ২০১৮ সালের ৫ ফেব্র“য়ারি রাতে জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি।
সূত্রটি আরও জানায়, ইতোমধ্যে জেলা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং সভাপতি বিবাহিত থাকায় সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে বিক্ষুব্ধতা দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা কমিটি গঠন নিয়েও দেখা দিয়েছে অন্তঃকলহ। বর্তমান কমিটির অনেকেই নীরবে প্রতিবাদ করেছেন। বিক্ষুব্ধ নেতারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি তাদের নজরে দিয়েছেন। আগস্ট মাসের পরেই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে কেন্দ্রীয় কমিটি জানিয়েছে বলে বিক্ষুব্ধরা জানান।
এবার সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি চান বিক্ষুব্ধরা। নেতৃত্বে আসতে স্থানীয় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে জোর লবিং-গ্রুপিং করে যাচ্ছেন তারা। নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের অনেকেই বর্তমান কমিটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন অন্তত এক ডজন প্রার্থী। এরা হলেন বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মারুফ হোসাইন, সহ-সভাপতি তসলিম হুসাইন তাজ, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক তানভীর রহমান আকাশ, যুগ্ম সম্পাদক মৃনাল কান্তি বাছাড়, আরাফাত হোসেন, শুভ সেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুজ্জামান তানভির, কাজী নাজিব, আতিক শাহরিয়ার, প্রচার সম্পাদক চিশতী নাজমুল বাশার সম্রাট, আপ্যায়ন সম্পাদক শেখ মোঃ রাসেল। এছাড়াও আলোচনায় আছেন কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম সাইফ এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এ এইচ এম কামাল।
এদের মধ্যে তসলিম হুসাইন তাজ খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু’র ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তিনি প্রার্থী হিসেবে ওপেন না থাকলেও জনমনে তার প্রার্থী হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নেতৃত্ব প্রত্যাশী ও বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক তানভীর রহমান আকাশ বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদসহ আমার রাজনৈতিক বড় ভাইয়েরা যদি চায় আমি প্রার্থী হবো। প্রার্থী হওয়ার জন্য আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত।’
কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম সাইফ বলেন, ‘আমি গত কমিটিতে নেতৃত্ব প্রত্যাশী ছিলাম কিন্তু আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যদি আমাদের সিনিয়র রাজনীতিকরা চান তবে এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে আমি নেতৃত্বে আসতে চাই।’
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এ এইচ এম কামাল বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। যদি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যদি সমর্থন দেয় তবেই আমি প্রার্থী।’
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইমরান হোসেন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। তাদের রুটিন মাফিক আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। যদি জেলা কমিটির সম্মেলন হয়, তাহলে আমরা আগে জানবো। এখন পর্যন্ত সম্মেলনের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। একটি মহল কেন্দ্রীয় কমিটির নাম ব্যবহার করে অপপ্রচার করছে।’