খুলনায় ভোটের মাঠে উত্তাপ বাড়ছে

0
651

এম জে ফরাজী : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যতই দিন ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তাপ বাড়ছে। খুলনা-৩, খুলনা-৪, খুলনা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুড়ছে। এতে করে ভোটারদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে শঙ্কারও। নিরাপদে ভোটদান করতে পারবে কি না তা নিয়ে ভোটারদের মনে জাগছে কৌতুহল।
জানা গেছে, সম্প্রতি খুলনা-৩ আসনের খালিশপুরস্থ প্লাটিনাম জুট মিল এলাকায় গণসংযোগকালে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মুজ্জাম্মিল হকের উপর দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। এতে প্রার্থীসহ বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হন। যার জন্য দায়ী করা হচ্ছে স্থানীয় ছাত্রলীগকে। যদিও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হচ্ছে। এর আগে বিএনপি প্রার্থী বকুলের পোস্টার ছিড়ে ফেলার অভিযোগ আনা হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয় এ ঘটনায় তারা জড়িত নন। অন্য কেউ আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এ কাজ করেছে।
খুলনা-৫ আসনে গত শুক্রবার রাতে ফুলতলার বেজেরডাঙ্গাস্থ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বোমা হামলা করা হয়। সেসময় কার্যালয়ে ৮/১০ নেতাকর্মী অবস্থান করলেও একজন ক্ষতিগ্রস্ত হন। এর কয়েক মিনিট পরই একই উপজেলার দামোদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে মোটরসাইকেলে করে দুর্বৃত্তরা এসে মারধোর, কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এবং তাদের প্রচারণামূলক লিফলেট ফেলে রেখে যায়। পরে সেখান থেকে বোমার অংশবিশেষ, রাজনৈতিক কিছু লিফলেট উদ্ধার করে পুলিশ। লিফলেটে লেখা ছিলো, ‘আল্লামা সাঈদীর মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ ইত্যাদি। এ ঘটনার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করছে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৭ জন বিএনপি-জামায়াতকর্মীকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পরে পৃথক এ দুটি ঘটনায় ফুলতলা থানায় তিনটি মামলা (দুটি বোমা হামলা, একটি অগ্নিসংযোগ) দায়ের করা হয়।
এদিকে গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলনে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এনেছেন খুলনা-৪ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও বিএনপির প্রার্থী আজিজুল বারী হেলাল। বেলা ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতায় আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ধানের শীষের প্রার্থী নিজে উপস্থিত থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছেন। ধানের শীষে ভোট না দিলে নির্বাচনের পর দেখে নেয়া হবে বলেও হুমকি দিচ্ছেন তারা। এমনকি তারা বর্তমান সরকারের অভাবনীয় সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিভিন্ন স্থানে মিথ্যাচার করছে। নৌকার প্রার্থী আরও বলেন, নির্বাচনে ভরাডুবি বুঝতে পেরে বিএনপির প্রার্থী মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করে চলেছেন।
সংবাদ সম্মেলননে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন, তেরখাদা উপজেলা চেয়ারম্যান সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, এ্যাড. এম এম মুজিবুর রহমান, ফ ম সালাম, অধ্যক্ষ সরদার ফেরদৌস আলম, দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য মোল্যা আকরাম হোসেন, রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার আবুল কাশেম ডাবলু প্রমুখ।
অন্যদিকে বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি প্রার্থী আজিজুল বারী হেলাল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তার দলীয় নেতাকর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের তান্ডবে বিএনপির নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারছেন না। গত চার-পাঁচ দিনে তিন উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে অভিযোগ করে হেলাল বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধির ধারও ধারছেন না। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। গতকাল শ্রীফলতলা ইউনিয়নের নেতা রুহুল আমিন বিশ্বাস, রবিউল আমার নির্বাচনী কাজ যখন করছিলো তখন দেশিয় অস্ত্র গুপ্তি দিয়ে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা তাদের আঘাত করে। রুহুল বিশ্বাসের পেটের মধ্যে গুপ্তি ঢতুকিয়ে দেওয়া হয়। এতে তার খাদ্য নালী কেটে যায়। আজকে তার অপারেশন হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা, সহসভাপতি মনিরুজ্জামান মন্টু, আব্দুর রশিদ, মেজবাউল আলম, মনিরুল হাসান বাপ্পী, মোল্লা খায়রুল ইসলাম প্রমুখ।