খুলনায় তৃণমূলকে চাঙ্গা করার ক্ষমতাসীন দলের চেষ্টা ব্যার্থ : মেয়াদ শেষ হলেও পূণাঙ্গ হয়নি থানা কমিটি

0
468
বটিয়াঘাটায় নৌকার ফলাফল বিপর্জয়ের কারণ জানাতে নোটিশ খুলনা জেলা আ’লীগের

 

আসাদুজ্জামান রিয়াজ ॥
নির্ধারিত সময় পেড়িয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের থানা কমিটিগুলো। শুধু মাত্র সভাপতি – সাধারণ সম্পাদক এই দুই নেতার হাত ধরে দীর্ঘদিন চলছে এ দলের ১৪ থানা কমিটি। দলের শীষর্ নেতৃত্বের অভ্যান্তরণীন দ্বন্দ্বের কারণে সংগঠনের এই হাল এমন অভিযোগ মাঠের কর্মীরদের। ফলে নেতৃত্ব প্রত্যাশিদের মধ্যে হতাশার পাশাপাশি সংগঠনটির তৃণমুলে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের কর্তৃত্বের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরেছেন তৃণমুলের নেতারা।
তৃণমুলের অস্থিরতা আর নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব আসন্ন খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শঙ্কার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আসন্ন সিটি কর্পোরেশন ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গন। বর্তমান সরকারের ৫ বছর মেয়াদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনো প্রায় দেড় বছর। তবে ইতিমধ্যেই খুলনাসহ দেশের সব মহলে শুরু হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা। তাই ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
দলীয় একাধিক সুত্র জানায়, দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী খুলনা জেলা এবং ২০১৪ বছর ২৯ নভেম্বর নগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে তালুকদার আব্দুল খালেক সভাপতি ও আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজানকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে নগর কমিটি গঠন করা হয়। এর দীর্ঘ ১৯ মাস পর ৭১ সদস্যের পূণাঙ্গ কমিটিও অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া শেখ হারুনুর রশিদকে সভাপতি ও এস.এম মোস্তফা রশিদী সুজেকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয় জেলা সম্মেলনে। এর ৯ মাস পর পূণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেন দলীয় সভাপতি। যদিও পূণাঙ্গ নগর কমিটি নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের কোন অভিযোগ ওঠেনি তবে জেলা আওয়ামী লীগের পূণাঙ্গ কমিটি গঠন একতরফা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সুত্র আরো জানায়,বিগত ২০১৪ সালের জুন থেকে নভেম্বরের মধ্যে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের ৫টি থানার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র মোতাবেক ইতোমধ্যে এই ৫ থানা কমিটির মেয়াদ উর্ত্তণী হয়ে গেছে। তথাপি নির্ধারিত সময় পেড়িয়ে গেলেও কমিটিগুলো আজও পূর্ণাঙ্গ রুপ পায়নি।
জন্মলগ্ন থেকেই এই ৫ থানা কমিটি চলছে দুই নেতার হাত ধরে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় সভাপতি-সম্পাদকই সবকিছু। ফলে সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূলকে চাঙ্গা করার ক্ষমতাসীন দলের চেষ্টা কোনো কাজে আসেনি।
সুত্র মতে,সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২৭ জুন সোনাডাঙ্গা, ৪ জুলাই দৌলতপুর, ৫ জুলাই খালিশপুর, ১৩ জুলাই খানজাহান আলী, ৭ সেপ্টেম্বরে খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ ব্যাপারে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান এমপি খুলনা টাইমসকে বলেন,নানা কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পূণাঙ্গ থানা কমিটিগুলো অনুমোদন দেয়া যায়নি। তরে সহসায় অনুমোদন দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে সদর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ্যাড.সাইফুল ইসলাম খুলনা টাইমসকে জানান দুই দফায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা নগর শাখায় জমাদেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে সহসায় কমিটি অনুমোদন দেয়া হবে নগর নেতারা এমন আশ্বাস দিলেও তা হয়নি।
সোনাডাঙ্গা থানায় সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস সভাপতি ও তসলিম আহম্মেদ আশা সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। সদর থানায় ভোটাভুটির মাধ্যমে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে ফকির মো. সাইফুল ইসলাম নির্বাচিত হন। এ ছাড়া খালিশপুর থানায় এ কে এম সানাউল্লাহ নান্নু সভাপতি ও মো. মনিরুল ইসলাম বাশার সাধারণ সম্পাদক, দৌলতপুর থানায় শেখ সৈয়দ আলী সভাপতি ও শহিদুল ইসলাম বন্দ সাধারণ সম্পাদক এবং খানজাহান আলী থানায় শেখ আবিদ হোসেন সভাপতি ও আনিছুর রহমান সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ খুলনা জেলা শাখা কমিটি অনুমোদনের ১৯ মাসেও জেলার নয় উপজেলা কমিটি অনুমোদন হয়নি। উপজেলা কমিটি অনুমোদন না হওয়ায় ইউনিয়ন কমিটিরও অনুমোদন হয়নি। যার ফলে ইউনিয়ন কমিটির অনুমোদন নেই। উপজেলা শাখা তাদের কমিটি জেলার কাছে জমা দেয়নি। জেলা থেকেও কোনও তাগিদ নেই। এছাড়া, জেলা কমিটিরই দুটি সদস্য পদ এখনো শূন্য রয়েছে। এর নেপথ্যের কারণ জেলার শীর্ষ দুই নেতার দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব। প্রকাশ্যের এই দ্বন্দ্ব বেশ কয়েক বার হাঙ্গামায় রূপ নেয়। এমনকি শীর্ষ দুই নেতা একে অপরের মুখ দেখা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছেন।
সুত্র মতে,জেলা সম্মেলনের সময় বলা হয়েছিল, ১৫ দিনের মধ্যে উপজেলা কমিটি গঠন করা হবে। কিন্তু গত ১৯ মাসেও তা সম্ভব হয়নি। এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়,জেলা আওয়ামী লীগের পূণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদকের সাথে পরামর্শ করা হয়নি। ফলে কমিটিতে অধিকাংশই সভাপতি সমর্থিতরা স্থান পেয়েছেন। কমিটি অনুমোদনের পর সাধারণ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগও করেন। ফলে বাইরে থেকে জেলা সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের মিল দেখা গেলেও ভেতরে রয়েছে অমিল। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তৃণমূলে।
রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন বাদশা বলেন,‘২০১৫ সালের জানুয়ারিতে উপজেলা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সম্মেলনে শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এরপর একটি খসড়া উপজেলা কমিটির তালিকা করা হয়। কিন্তু চূড়ান্ত কমিটি জমা দেয়ার বিষয়ে এখনও নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।’
একই কথা বলেন কয়রা উপজেলা কমিটির সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম মহসীন রেজা। তিনি জানান, ২০১৫ সালের উপজেলা সম্মেলনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। এরপর আর কোনও অগ্রগতি হয়নি।