খুলনায় জমি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যার অভিযোগে মামলা

0
98

নিজস্ব প্রতিবেদক
খুলনার নিউ বিশ্বাস প্রপার্টিজের মালিক তারেক বিশ^াসের বিরুদ্ধে স্ত্রী মোছাঃ মাহামুদা আক্তার মিলি (৩২) হত্যার অভিযোগে চারজনকে আসামী করে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল ২ এর বিচারক জামিউল হায়দার হরিনটানা থানাকে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তারেক বিশ^াসের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নিয়মিত যৌতুকের জন্য শারিরিক নির্যাতনের অভিযোগ ছিলো। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন তারেকের প্রথম স্ত্রী মোসাঃ নাসিমা (৩৫), তারেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি মোঃ বিল্লাল ও বঙ্কিম অধিকারী। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মিলির মৃত্যু হলেও কয়েকদিন আগে মিলিকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ হলে তার মা সেলিনা বেগম এই মামলাটি করেন। এ ঘটনায় তারেককে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। মামলার প্রধান আসামী তারেক, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম, হরিণটানা থানার সভাপতি আজগর আলী বিশ্বাসের ছোট ভাই।

আদালতে বাদীর আরজি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে মিলির সাথে তারেক বিশ^াসের বিয়ে হয়। এর আগে তার আরেকটি বিয়ে ছিলো। তাদের ছাড়াছাড়ি হলে মিলিকে দ্বিতীয় বিয়ে করে। বিয়ের পর জমির ব্যবসা করার জন্য বিভিন্ন সময়ে মিলির পরিবারের নিকট যৌতুক দাবি করে আসছিলো। এক পর্যায়ে মিলির পরিবার ২৫ লাখ টাকা তারেককে দেয়। টাকা নেয়ার পর তারেকের পূর্বের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক বহাল করে। শহরে বাসা ভাড়া করে করে তার সংসারের যাবতীয় খরচ বহন করতো। এই নিয়ে মিলির সাথে তারেকের বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া হতো। একই সাথে মিলির সংসারের সকল প্রকার খরচ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এরই মধ্যে প্রথম স্ত্রীকে সে বাড়িতে নিয়ে আসে। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে ব্যপক অশান্তি সৃষ্টি হয়। প্রথম স্ত্রীর বিষয়ে কথা বলায় মিলিকে প্রায়ই সময় মারপিট করতো তারেক। সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ফের যৌতুকের দাবিতে মারপিট করে মিলিকে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে মিলিকে খুলনা হেলথ কেয়ার হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড নামক হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। মিলির মা এ খবর পেয়ে মেয়েক দেখতে যান হাসপাতালে। সে সময় মিলি তার মাকে জানায় যে, তারেক তার প্রথম স্ত্রী ও কর্মচারিদের নিয়ে শলা পরামর্শ করছে তাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলবে। ঠিক ওই দিন রাত ১১টার দিকে মিলি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। এরপর তড়িঘড়ি করে তারেক তার মেয়ের মরদেহ ময়না তদন্ত করতে না দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যায়। এমনকি মিলির মা মেয়ের লাশ বুঝে নিতে চাইলেও তাকে লাশ বুঝিয়ে দেয়নি তারেক। মরদেহ গোসল করানোর সময় মৃতের শরীরে উপর্যপুরি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে মিলির মৃত্যুর একমাস পর মিলিকে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায় মিলি পরিবারের সদস্যদের বলছে আমাকে বাশ দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে। অপরদিকে তারেক তার স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। এ নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
আদালত মামলা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার পর গতকাল হরিনটানা থানা পুলিশ সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে। একই সাথে মামলার প্রধান আসামী তারেক বিশ্বাসকে আটক করে গতকাল বুধবার জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
এ বিষয়ে হরিনটানা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর মঙ্গলবার রাতেই মামলা গ্রহণ করেছি। একই সাথে ১ নং আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।