খুলনার নৌ সীমান্তে জাহাজ উদ্ধার কাজ এক মাস পরে বিআইডব্লিউটিএ’র তাগিদ

0
401

নিজস্ব প্রতিবেদক :
খুলনার নৌ সীমান্ত কয়রা উপজেলার আংটিহারার রায়মঙ্গল নদীতে ফ্লাই এ্যাশ বোঝাই জাহাজ ডুবে যাওয়ার এক মাস পর বিআইডব্লিউটিএ তাগিদ দিয়েছে। ৯‘শ মেট্রিকটন ফ্লাই এ্যাস নিয়ে ভারত বাংলাদেশ নৌ সীমান্তের কাছিকাটা নামক স্থানে গত ৩ আগস্ট জাহাজটি ডুবে যায়। কলকাতার হলদিয়া সমুদ্র বন্দর থেকে ফ্লাই এ্যাশ নিয়ে জাহাজটি ঢাকা অভিমুখে আসছিল। ডুবে যাওয়ার এক মাস পর বিআইডব্লিউটিএ জাহাটি উত্তোলনের জন্য সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক মো. আবু জাফর হাওলাদার গত ১২ সেপ্টেম্বর কোস্টগার্ড, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আইডব্লিউটিএ’র খুলনা নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া এক চিঠিতে ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধারের জন্য সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়- মেসার্স আরিয়ানা শিপিং লাইনের ভাড়াকৃত নৌযান এমভি মা-বাবার দোয়া-৬ গত ৩ আগষ্ট ফ্লাই এ্যাশ নামক সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ নৌ-সীমান্তে রায়মঙ্গল নদীর কাছিকাটা নামক স্থানে ডুবে যায়। জাহাজপি উদ্ধারের জন্য তিনি নৌ-পুলিশের ডিআইজি, প্রধান বন সংরক্ষক এবং আরিয়ানা শিপিং লাইনসকেও চিঠি দিয়েছেন।
বিআইডব্লিউটিএর খুলনাস্থ উপ-পরিচালক মোঃ ছানোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখানে জাহাজ ডুবেছে সেটি দু’দেশের সীমান্তবর্তি এলাকা। এছাড়াও দুর্গম এলাকা। নিয়ম হচ্ছে-জাহাজ ডুবে গেলে মালিক সেটি উত্তোলন করবে আইডব্লিউটিএ সে কাজে সহযোগীতা করব মাত্র। দ্র”ত উত্তোলনের জন্য জাহাজের মালিককে অবহিত করা হয়েছে।
জাহাজের মালিক আব্দুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, ৯শ’ মেট্রিকটন ফ্লাই এ্যাশ নিয়ে কলকাতার হলিদয়া বন্দর থেকে মা-বাবার দোয়া-৬ নামক জাহাজটি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ৩ আগস্ট কাছিকাটার কাছে অপর একটি জাহাজের সাথে ধাক্কা লেগে সেটি ডুবে যায়। ৩ কোটি টাকা মূল্যের ফ্লাই এ্যাশ নষ্ট হয়েছে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান। জাহাজ উদ্ধারের জন্য মালিক পক্ষের প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে পৌঁচেছে।
বিআইডব্লিউটিএর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নৌ সীমান্তের রায়মঙ্গলে অবস্থিত সবুজ লাইটের বয়া থেকে ২/৩ কিলোমিটার উজানে নৌ সীমান্তের কাছিকাটা নামক স্থানে মা বাবার দোয়া নামক জাহাজটি ডুবে যায়।
অপর একটি সূত্র জানান, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে রায়মঙ্গল-আংটিহারা-বজবুজা নৌপথ দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের কার্গো চলাচলে নৌ প্রটোকল র”ট।
এই নৌ প্রটোকল র”ট দিয়ে প্রতিদিন চলাচলকারী কার্গো ও লাইটারেজ জাহাজ থেকে অব্যাহত বর্জ্য নিক্ষেপে পানি দূষণ ও বিকট সাইরেনের শব্দের কারণে বন্য প্রানী বনের এই এলাকা থেকে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। সুন্দরবন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ১৪০ কিলোমিটারের এ নৌপথ দিয়ে যান চলাচল অব্যাহত থাকলে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর শ্যালা নদীতে অয়েল ট্যাংকার ডুবে তেল ও ৫ মে ভোলা নদীতে জাহাজ ডুবিতে পটাশ সার ছড়িয়ে পড়ার মতো আশংকা ছিল। আর এরকমটা হলে সেটা সুন্দবনের আরেক বিপর্যয় ডেকে আনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের কার্গো চলাচলে নৌ প্রটোকল এই র”টটি সুন্দরবনের রায়মঙ্গল নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ভারতের জাহাজগুলো। আর সেখান থেকে বজবুজা নদী দিয়ে আংটিহারা চেকপোস্ট হয়ে মংলা বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে কার্গো ও লাইটারেজ জাহাজগুলো।
এবিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হার”ন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নৌ-পথে যান চলাচল অব্যাহত থাকার কারণে শব্দ দূষণ তৈরি করেছে। আর এ দূষণ এড়াতেই সুন্দবনের গভীরে আশ্রয় নিচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। তত্ত্বাবধানের অভাবে সুন্দবনের নৌ-পথে চলাচলকারী যানগুলো নদীতে তাদের বর্জ্য ফেলছে। আর তা তৈরি করছে নদী দূষণ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দবনের পরিবেশ। তিনি বলেন, সারা দেশে যখন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, তখন সুন্দরবন হচ্ছে প্রাণীদের শেষ আশ্রয়স্থল। মানুষের অস্বাভাবিক আচরণ ও দুর্যোগ সৃষ্টির কারণে প্রাণীদের জীবনযাত্রায় ব্যাতয় ঘটছে। আর তাই প্রাণীরাও তাদের আচরণে বদল ঘটাচ্ছে।
আংটিহারা স্থল চেকপোস্টের কাস্টম কর্মকর্তারা বলেছন, রায়মঙ্গল-আংটিহারা-বজবুজা নৌ-পথ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি জাহাজ চলাচল করছে। সুন্দরবনের বনজীবী আবু জাফর বলেন, আগে হরিণ, বাঘ ও বন্যপ্রাণীদের যেখানে-সেখানে দেখতে পাওয়া যেত। জোয়ারের সময় হরিণরা চলে আসত লোকালয়ে।