খুলনার ট্রাফিক পুলিশ: তপ্ত রোদে নাকাল, তবুও দায়িত্বে অনড়

0
60

আজিজুর রহমান :
খুলনার প্রত্যেকটি অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে দাবদাহ। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে গরম অনুভূত হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। এ অবস্থায় বেশ বিপাকে পড়েছেন সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। তপ্ত রোদেও সড়ক ছাড়ার উপায় নেই তাদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে কড়া রোদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) নগরীর সোনাডাঙা বাস স্টান্ড মোড়, শিববাড়ি মোড় ও ময়লাপোতা মোড় এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে দাঁড়িয়ে এক হাতে মাথার ওপর ছাতা ধরে আরেক হাতে ট্রাফিক সিগনাল পরিচালনা করছেন ট্রাফিক সদস্যরা। যানবাহনের শব্দ, প্রচণ্ড গরমে কাহিল হয়ে পড়লেও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সড়কেই থাকতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের।

ময়লাপোতা ট্রাফিক সিগনাল মোড়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একজন সার্জেন্ট, একজন সহকারি ট্রাফিক সার্জেন্ট ও পাঁচজন কনস্টেবল নিয়মিত এখানে ডিউটি করেন। তাপপ্রবাহের কারণে ঘণ্টাখানেক পরপর একজন রেস্টে যাচ্ছেন, আরেকজন দাঁড়াচ্ছেন সিগনালে। তবে ট্রাফিক বেড়ে গেলে চাপও বেড়ে যায়, তখন আর বসে থাকার উপায় থাকছে না।

ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রচণ্ড রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। নগরীর অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নেই পুলিশ বক্স। প্রচণ্ড রোদে সড়কের পাশে অবস্থিত দোকানের ছায়ায় দাড়ালেও গরমে তা আগুনের মতো তপ্ত হয়ে যায়। গরমে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের কারও কারও ডিহাইড্রেশন হচ্ছে। জ্বর-ঠান্ডা খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে।ময়লাপোতা মোড় এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. রেজাউল হক জানান, যেকোনো মানুষের পক্ষে এই উত্তপ্ত আবহাওয়ায় ১০ মিনিট দাঁড়ানো কঠিন। সেখানে আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। দীর্ঘসময় ডিউটি করা খুবই কঠিন। আমাদের অনেক সদস্যের ডিহাইড্রেশন হচ্ছে, ঘেমে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এরপরও রাস্তা ছেড়ে যাওয়ার উপায় থাকছে না। তিনি আরও জানান, আমাদের ছাতার ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। স্যালাইন ও পানি সরবরাহ করা হয়েছে। পানি বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

শিববাড়ি ট্রাফিক সিগনালে গিয়ে দেখা যায়, গাছের নিচে একজন দাঁড়িয়ে আউটগোয়িং সড়কের সিগনাল সামলাচ্ছেন, আরেকজন রোদে দাঁড়িয়ে আছেন। সেখানে কথা হয় ট্রাফিক সার্জেন্ট মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের পর অফিস আদালত-খুলে গেছে। চিরচেনা রূপে ফিরেছে শহর। যদিও এখনও চাপ কম, কিন্ত অত্যধিক গরম। এই ভ্যাপসা গরমে আমাদের বেশ কষ্টই হচ্ছে। আমাদের তো সড়ক ছাড়ার উপায় নেই। সড়কের মধ্যে থেকেই শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ট্রাফিক বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মনিরা সুলতানা বলেন, মাঠ পর্যায়ের ট্রাফিক সদস্যদের পানি ও স্যালাইন সরবরাহ করেছি। তাদের পরামর্শ দিয়েছি বার বার পানি খেতে। ট্রাফিক বক্স নির্মাণ করার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগের নিজস্ব কোনো সম্পত্তি বা জমি না থাকায় স্থায়ী ট্রাফিক বক্স নির্মাণ করতে পারি না। তারপরও অনেক সময় সমন্বয় করে ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক বক্স তৈরি কিংবা সংস্কার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের অধিকাংশ জনবল বয়বৃদ্ধ থাকায় অসুস্থ হলে রিপ্লেসমেন্ট করা কষ্ট হয়ে পড়বে। তারপরও প্রতিদিন ছাতি নিয়ে ও সুপেয় পানি খেয়ে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে। দায়িত্বে থাকা সদস্যদের এই গরমে খুব কষ্ট করতে হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here