খুলনাঞ্চলে ‘বুলবুল’র তান্ডবে ফিকে হয়ে গেছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন

0
593

শেখ নাদীর শাহ্:
বুকভরা আশা নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন কৃষকরা। এইতো মাত্র কদিন আগেও সোনালি ধান ঘরে তোলার বুকভরা স্বপ্নে বিভোর ছিলেন প্রায় সকল পর্যায়ের কৃষকরা। ধানে পাক ধরতে শুরু করেছিল ঠিক সেই সময়ে শক্তিশালী প্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডব কৃষকের সোনালী স্বপ্ন ভঙ্গ করে দিয়েছে। সংসার পরিচালনার সব পরিকল্পনা যেন ধ্বংশকরে দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র তা-বে সব যেন শেষ হয়ে গেছে।
প্রতিবেদনকালে বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যানুযায়ী দক্ষিণ খুলনার সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত পাইগাছা,কয়রায় বুলবুলের প্রভাব একটু বেশি পড়েছে। সরেজমিনে বুলবুল পরবর্তী বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাযায়, পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি কাশিমনগর,কাজীমুছা, প্রতাপকাটী, নাছিরপুর,তালতলা, গোয়ালবাতান, আগড়ঘাটা, হাবিবনগর ও হরিঢালীর উলুডাঙ্গা, রহিমপুর, হরিদাশকাটী, সোনাতনকাটী, মামুদকাটী, নোয়াকাটী, সলুয়া ও নগরশ্রীরামপুর এলাকায় অবস্থিত প্রায় কয়েক হেক্টর জমিতে লাগানো আমন ধানের জমি এখন পর্যন্ত পানির নিচে নিন্মজিত রয়েছে। কয়েক শত বিঘা চিংড়ি ঘের শনিবার ও রবিবার মুসুল ধারে বৃষ্টি ও বুলবুলের খামখেয়ালীপনা তান্ডবের ফলে এক ঘের থেকে অন্য ঘের একাকার হয়ে গেছে। ফলে মাছেরা বদ্ধ ঘেরের আবদ্ধ জায়গা থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আধাপাকা বসত ঘরবাড়ী ও গাছপালা।
পাইকগাছা উপজেলার মতো একই ভাবে খুলনার কয়রা, ডুমুরিয়া, রূপসাও বুলবুলের তান্ডবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বুলবুলের প্রভাবে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পাকা ও আধাপাকা ধান তলিয়ে যাওয়ায় সেগুলো দ্রুত কেটে ঘরে তুলতে না পারলে ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকায় ক্ষেতের ধান হেলে মাটির সঙ্গে বিছিয়ে পড়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায় ডুমুরিয়া উপজেলার বুলবুলের তা-বে জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। লালশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালংশাক, করল্লা, উস্তে, ক্ষিরাই, বেগুন, মুলাসহ বিভিন্ন গাছ বাতাসের তোড়ে কাঁত হয়ে জমিতে পড়ে রয়েছে। শীতকালীন সবজি ও আমন ফসলের জমিতে পানি জমে আছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডুমুরিয়ার কুলবাড়িয়া, বরাতিয়া, গোবিন্দকাঠি, মঠবাড়িয়া এলাকার চাষিরা। এসব এলাকার অনেক কৃষকরা ঋণ নিয়ে জমিতে সবজির চাষ করেছিলেন।সবচেয়ে বেশি পেঁপে গাছের ক্ষতি হয়েছে। সব পেঁপে গাছ ভেঙে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক পংকজ কান্তি মজুমদার জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র প্রভাবে খুলনা জেলায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধান ও ৮৬৪ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ধানে সবথেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটায়। জেলার প্রায় সব উপজেলায় সবজিতে ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ডুমুরিয়ায়। এছাড়াও কলা, পান ও পেঁপেতেও বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, মাঠে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকদের ক্ষতিপূরণের জন্য তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। ক্ষতি নিরূপণ করতে কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে। খুলনা জেলার ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন উপজেলা গুলোতে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ পরবর্তী স্ব স্ব উপজেলাধীন কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পরিদর্শন করেছেন এবং বুলবুলের প্রভাবে ক্ষতির পরিমান কমাতে চাষিদের বিভিন্ন প্রকার দিকনির্দেশনা প্রদান করে চলেছেন।