খুলনাঞ্চলের সাড়ে ৪৪ হাজার প্রাথমিক শিক্ষার্থী পাবে দুপুরের খাবার

0
721

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুপুরের ক্ষুধা নিবারণ, পুষ্টির অভাব পূরণ, ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যবান জাতি গঠন, শতভাগ উপস্থিতি ও ঝরে পড়া বন্ধ করতে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের দুপুরে খিচুড়ি দেওয়া হবে। এ কর্মসূচির আওতায় খুলনা অঞ্চলের ২৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ৪৪ হাজার ৪৪৯ জন শিক্ষার্থীকে আনা হয়েছে। এ কর্মসূচিভুক্ত উপজেলাগুলো হচ্ছে, খুলনার বটিয়াঘাটা ও যশোরে ঝিকরগাছা। ১ জুলাই থেকে সপ্তাহে তিনদিন দুপুরে রান্না করা খাবার সরবারহ করা হবে। জাতীয় স্কুল মিল নীতিমালা অনুযায়ী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিদিন বিস্কুট দেওয়া হত।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানান, প্রতিজন শিক্ষার্থীর জন্য ৯০ গ্রাম চাল, ২৫ গ্রাম ডাল আর ৭০ গ্রাম সবজি মিলিয়ে খিচুড়ি রান্না করে সরবারহ করা হবে। যার মাথাপিছু বরাদ্দ ১৬ টাকা। শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত, শতভাগ উপস্থিত এবং ঝরে পড়া ঠেকাতে মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১১ সাল থেকে সরকার ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি যৌথভাবে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় দুপুরে শুধুমাত্র বিস্কুট সরবারহ করা হত। খুলনা বিভাগের পাঁচ জেলায় ১৪টি উপজেলায় ২ হাজার ৩৪৫টি স্কুলে ৩লাখ ৫১হাজার ২৪৬জন শিক্ষার্থী সপ্তাহে তিনদিন দুপুরে বিস্কুট খেয়ে আসছে। বিস্কুট পাওয়া উপজেলাগুলো হচ্ছে, নড়াইলের লোহাগাড়া, সাতক্ষীরার আশাশুনি, কলারোয়া, কালিগঞ্জ, তালা, শ্যামনগর, যশোর জেলা সদর, ঝিকরগাছা, চৌগাছা, খুলনার বটিয়াঘাটা, দাকোপ, বাগেরহাটের ফকিরহাট, শরণখোলা ও মোড়লগঞ্জ।
১ জুলাই থেকে চালু হওয়া এ কর্মসূচিতে সপ্তাহে তিনদিন বিস্কুট ও তিনদিন রান্না করা খিচুড়ি সরবারহ করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মেহেরুন নেছা জানান, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা বিদ্যালয়ে থাকতে হয়। এই কর্মসূচির ফলে দুপুরের ক্ষুধা নিবারণ হবে, পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে। স্বাস্থ্যবান জাতি গড়ে উঠবে। পাশাপাশি ভর্তির হার বাড়বে, ঝরে পড়া হ্রাস পাবে। উপস্থিতির হার শতভাগ নিশ্চিত হবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, খুলনা বিভাগে ২০১৭ সালে ঝরে পড়া হার ছিল ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। সেক্ষেত্রে ২০১৯ সালে ঝরে পড়ার সংখ্যা ৭ শতাংশ।
বটিয়াঘাটা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের দেওয়া তথ্য মতে, দুপুরের খিচুড়ির জন্য উপকরণ মিনারেল, খনিজ মেশানো চাল, সয়াবিন, ডাল ও পাতা যুক্ত সবজি থাকবে। শিক্ষার্থীরা দুপুরে সুষম খাবার পাবে। মেধা সম্পন্ন জাতি গঠনে পুষ্টির অভার দূর হবে। এর আগের দুপুরে বিস্কুট সরবারহ করা হত।
ঝিকরগাছা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসমত আরা পারভিন জানান, এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। ৩ থেকে ১২ বছর বয়সি শিক্ষার্থীরা এই নীতিমালার আওতায় আসবে। ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। দৈনিক প্রয়োজনীয় শক্তির ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রোটিন থেকে এবং ১৫-৩০ শতাংশ চর্বি থেকে আসা নিশ্চিত করা হবে। তবে স্যাচুরেটেড বা সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ ১০ শতাংশের কম রাখতে হবে। ন্যূনতম খাদ্য তালিকাগত বৈচিত্র বিবেচনায় ১০ টি খাদ্য গোষ্ঠীর মধ্যে ন্যূনতম ৪টি খাদ্য গোষ্ঠী নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে, যেখানে কমপক্ষে একটি প্রাণিজ উৎস থেকে বিবেচনায় নেওয়া হবে।
ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকিবফুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, এই পদ্ধতি চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত হবে। এ প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ১৫৯ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। তাদের মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ২০ শতাংশ। একদিকে যেমন দরিদ্র জনগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের ক্ষুধা নিবারণ হবে, অপরদিকে সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের পুষ্টির অভাব পূরণ হবে। এতে ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যবান জনশক্তি গড়ে উঠবে।
বটিয়াঘাটা উপজেলা সদরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পঙ্কজ মল্লিক জানান, উপজেলা সদরের পার্শবর্তী হেতালবুনিয়া, হাটবাটি ও কিসমত ফুলতলা গ্রামের ৩০২ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। তার মধ্যে ৫০ জন নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাধের ওপর বসবাস করা পরিবার থেকে আসা ৫০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। অনন্তঃ এদের দুপুরে আর খাবার চিন্তা থাকবে না। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহমুদা রশিদ প্রভা জানিয়েছেন, দুপুরের খাবার সরবারহের খবর উৎসবের মত আনন্দের। তার অভিমত প্রতিদিন শিশু শিক্ষার্থীরা পুষ্টিকর খাবার পাবে। সহপাঠীরা বাবা মার সাথে শ্রম দিতে পাট ও ধান ক্ষেতে যাবে না। প্রভা রোজার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুরে টিফিন নিয়ে যেত। দুপুরে খিচুড়ি সরবারহের খবর পেয়ে ইতিবাচক বলে অভিমত দিয়েছে শিশু শিক্ষার্থী প্রভার পিতা লক্ষীপুর (পূর্বপাড়া) গ্রামের মামুনুর রশিদ ও তার স্ত্রী রেহানা পারভীন।