কয়রায় ডাক্তারের অবহেলায় মৃত্যু, স্বজনদের আহাজারি

0
363

ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা: কয়রায় চিকিৎসকের অবহেলায় উপজেলার নিরঞ্জন সরকার এর পুত্র মনি সংকর সরকার (৪০) নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মনি সংকরের বাড়ি উপজেলার আমাদি ইউনিয়নের সরকার পাড়া। স্বজনরা জানান, নিহত ব্যক্তি শুক্রবার আমাদি ডাঃ হেলালির মৎস্য খামারে কাজ করা অবস্থায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত হন। তাৎক্ষনিক স্থানীয় লোকজন কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, সকাল পৌণে ৯টার দিকে আহত মনি সংকরকে জীবিত অবস্থায় কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কোনও ডাক্তার পাওয়া যায়নি। এসময় হাসপাতালে দায়িত্বরত নার্সদের জিজ্ঞেস করলে তারা ডাক্তারকে খুঁজে নিয়ে আসতে বলেন। নার্সদের কাছে ডাক্তারের নম্বর চেয়েও পাওয়া যায়নি। ডাক্তারদের অনেক খোঁজাখুঁজির প্রায় ৪০ মিনিট পরে পরিদর্শনে আসা সিভিল সার্জন ডাক্তার সুজাত আহম্মেদ এসে দেখেন মনি সংকর মারা গেছেন।
মৃত্যুর খবর স্বজনদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে এনিয়ে হাসপাতাল চত্বরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে নিহতের স্বজনরা ও স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ মিছিল করে ডাক্তারের কর্তব্যে অবহেলা করাই ডাক্তারের শাস্তি দাবি জানায়। হাসপাতাল চত্বরে নিহতের স্বজনরা নিহতের লাশকে জড়িয়ে ধরে কান্নার এক হৃদয় বিদায়ক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
তাৎক্ষনিক ঘটনা স্থান পরিদর্শন করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূরে আলম সিদ্দিকি ও কয়রা থানা অফিসার ইনচার্জ রবিউল হোসেন। এই বিষয়ে বাচ্চু নামে এক ভ্যান চালক বলেন, আমি একটা রোগি নিয়ে হাসপাতালে আসছিলাম, দেখি নিহতের স্বজনরা চিৎকার করে ডাক্তার খুজছে। আমরা ২০-৩০ মিনিটের মত তাকে ম্যাসেজ করি সে জিবীত ছিল, যদি ডাক্তারকে সময় মত পাওয়া যেত হয়ত নিহত মনি সংকর বেঁচে যেত।
এই বিষয়ে নিহতের মামা গৌতম সরকার অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, আমাদের চোখের সামনে মারা গেল আমরা তাকে বাচাতে পারলাম না হাসপাতালে কোন ডাক্তার পেলাম না। নার্সরা মোবাইল চালাচ্ছিল। তারা ডাক্তার কোথায় খুজে নিতে বললো। রোগীর স্বজন, কাকা সুজন সরকার ও স্ত্রী মিনতি সরকার জানান, ২০/২৫ মিনিটের মত সময় ধরে চিৎকার করার পর পরিদর্শনে আসা সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহম্মেদ এসে মৃত ঘোষনা করেন। তারপর জরুরী বিভাগের ডাক্তাররা আসেন। জরুরী বিভাগে ডাক্তার উপস্থিত থাকলে আজ সন্তানেরা এতিম হত না।
এ ব্যাপারে জরুরি বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডাঃ প্রজ্ঞা লাবনী, ডাঃ নুসরাত জাহান আরবি ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট দিলীপের কাছে জানতে চাইলে তারা তাদের স্যারের কাছে না শুনে কিছু বলবেন না বলে জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডাঃ পার্থ জানান, আমি বাইরে আছি। আমি দায়িত্বরত ডাক্তারদের সাথে কথা বলেছি, শুনেছি হাসপাতালে আসার আগে রোগীটি মারা যায়। হাসপাতালে সব ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন।
কয়রা থানা অফিসার ইনচার্জ বলেন মোঃ রবিউল হোসেন বলেন, আমি ঘটনাটি শোনা মাত্রই ঘটনা স্থান পরিদর্শন করেছি। পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্বরত ডাক্তারদের অবহেলার বিষয়ে জানতে চাইলে, খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহম্মেদ বলেন, আমি এ ঘটনায় তদন্ত অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবো।