কৃষি সেবারমান উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে

0
488

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাটাইমস :
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ফসলের চাষ পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষের মাধ্যমে ফলনের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও বাড়াছে না কৃষকের আয়। লবনাক্ত এই অঞ্চালে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে জৈব পদ্ধতির চাষাবাদে নোনাপানি মুক্ত করে জলাধারগুলো সংষ্কার করতে পারলে নতুন নতুন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। এজন্য ফসলি জমি চাষাবাদের মাধ্যমে মাটি ও ফসলের উত্তম অবস্থা বজায় রেখে ফসলের উৎপাদন নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে খুলনা নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে ‘কৃষি সেবারমান উন্নয়ন শীর্ষক’ বিভাগীয় এক সংলাপে এসব কথা উঠে আসে। আমেরিকান সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) এর খাদ্য নিরাপত্তা কার্যক্রমের অর্থায়নে ‘নবযাত্রা’ প্রকল্প এই সংলাপের আয়োজন করে।

সংলাপে বক্তারা বলেন, ফসল উৎপাদনে মিষ্টি পানির উৎস না থাকায় মৌসুম ভিত্তিক চাষাবাদে ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি সেবা প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও সরকারি খালগুলো ইজারাদাদের দখলে থাকায় কৃষকেরা চাষাবাদ করতে নানা সমস্যার সম্মূখীন হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে জনবল সংকট থাকায় সেবার মান পিছিয়ে যাচ্ছে। কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার অনুপস্থিতি ও জরাজীর্ণ অবকাঠামোর কারণে মানসম্মত সেবাদানে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এগুলো কাটিয়ে ওঠা খুবই জরুরি। স্থানীয়ভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জোর প্রচারণা থাকাটাও জরুরি। স্বচ্ছন্দে সেবাদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ আসবাবপত্র রাখাটাও খুবই দরকার। বাৎসরিক কর্মপরিকল্পনা ভালোভাবে করে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা দরকার।

বক্তারা আরও বলেন, লবনাক্ততার পাশাপাশি উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তার স্বল্পতা, ইউনিয়ন পরিষদের কৃষক তথ্য ও পরামর্শকেন্দ্রের অভাব এবং ইউনিয়ন কৃষি কমিটির অনিয়মিত সভা। এছাড়া দুর্যোগ প্রবণ উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষি উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষির উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার ও অন্যান্য বিভিন্ন অধিদপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগ খুবই জরুরি। একই সঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষকের কৃষি সেবা প্রদানের জন্য পৃথককক্ষের ব্যবস্থা, আধুনিক ল্যাব স্থাপন, নিয়মিত সভা আয়োজন ইত্যাদি নিশ্চিতকল্পে উপজেলা প্রশাসনের যথাযথ সহযোগিতা প্রয়োজন।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ নবযাত্রা প্রকল্পের ডেপুটি চিপ অব পার্টি আলেক্স বেকুন্ডার সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নবযাত্রা প্রকল্পের এমসিএইচএন ম্যানেজার মোস্তাক আহম্মেদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান।

প্রধান অতিথি বলেন, দেশের কোন কোন উপজেলায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পদ খালি রয়েছে। এই শূন্য পদসমূহের বিপরীতে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। উপকূলীয় এই চারটি উপজেলায় নিয়োগের ব্যাপারে নজর রাখবো। তিনি প্রত্যেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনিয়ন ভিত্তিক কৃষি সেবা প্রদানের জন্য পৃথক কক্ষের ব্যবস্থা করার জন্য আহবান জানান। উপকূলীয় অঞ্চলের লবনাক্ত পানি চাষাবাদের জন্য অত্যন্ত অনুপযোগী, তাই কৃষকদের জন্য সেচের পানির বন্দোবস্ত করার লক্ষ্যে জলাশয় ও খালসমূহ ইজারামুক্ত করার প্রতি আহবান জানান তিনি।

বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পংকজ কান্তি মজুমদার, সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক অরবিন্দু বিশ্বাস, খুলনা অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহন কুমার ঘোষ।

সংলাপে বক্তারা, জৈব কৃষি এমন এক কৃষি ব্যবস্থা যেখানে রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ব্যবহার না করে জৈব পদার্থের পুনঃচক্রায়নে সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে জমি চাষাবাদের মাধ্যমে মাটি ও ফসলের উত্তম অবস্থা বজায় রেখে সুস্থ সবল বিষমুক্ত সবজির উৎপাদন নিশ্চিত করে ব্যবহারের আহবান জানান। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজি স্থানীয়ভাবে সবজির বাজার প্রস্তুত করার দাবি জানান তাঁরা।

সংলাপে খুলনার দাকোপ ও কয়রা এবং সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যান ও সদস্য, বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক, সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) প্রতিনিধি, উন্নয়নকর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সদস্য, সিভিএ দলের প্রতিনিধি ও প্রকল্পের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী অংশ নেন।