করোনার ধাক্কায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বিজয় দিবসে মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগ

0
167

টাইমস ডেক্স:সরকার চলতি বছরেই বিজয় দিবসেই মেট্রোরেলের অর্ধেক অংশ চালু করার পরিকল্পনা ছিল। ওই লক্ষ্যে মেট্রোরেল নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষও কাজ এগিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু দেশে করোনার তীব্র প্রাদুর্ভাবে ওই সময়ে মেট্রোরেল চালু হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৬) উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে। বিগত ২০১৭ সালে কাজ শুরু হয়ে আগামী ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ। দুই ভাগে প্রকল্পের নির্মাণকাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। এক ভাগে পড়েছে উত্তরা-আগারগাঁও অংশ, আরেক ভাগে আগারগাঁও-মতিঝিল। মতিঝিল থেকে আবার কমলাপুর পর্যন্ত লাইনটি বর্ধিত করার কাজ শুরু হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে শুরুতে মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চালুর কথা জানানো হয়েছিল। পরে তা বাড়িয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ওই লক্ষ্য চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এগিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে তাও এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মেট্রোরেল প্রকল্পে বর্তমানে ৭ হাজার কর্মী কাজ করছে। তার মধ্যে ৬ হাজার বাংলাদেশের, বাকি এক হাজার বিদেশী কর্মী। কিন্তু মেট্রোরেল প্রকল্পে কর্মরত ৪৮ জন কর্মী এক সপ্তাহের মধ্যে করোনা পজিটিভ হয়েছে। আর বাংলাদেশে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত কর্মীর সংখ্যা ৫১৮। তবে কারো মৃত্যু হয়নি। এমন অবস্থায় প্রকল্পে কর্মরত বিদেশী প্রকৌশলীরা নিরাপত্তার স্বার্থে এখন আর দিনের বেলায় সাইটে যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের কর্মীদের করোনা ভাইরাসজনিত চিকিৎসা সেবা দিতে দুটি ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। গাবতলী কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের ফিল্ড হাসপাতালে ১০ শয্যা আর উত্তরার পঞ্চবটী কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের ফিল্ড হাসপাতালে ১৪টি শয্যা রয়েছে। হাসপাতাল দুটিতে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে কার্ডিয়াক মনিটর, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও। ওগুলোতে মেট্রোরেল প্রকল্পে কর্মরত দেশী-বিদেশী প্রকৌশলী, পরামর্শকসহ কর্মীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিচ্ছে। মেট্রোরেলের কর্মীদের মনোবল বাড়াতে প্রয়োজনে এসব হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা আরো বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে জানা যায়।
সূত্র আরো জানায়, মেট্রোরেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ডিএমটিসিএলের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের দিল্লি মেট্রোর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বাংলাদেশে কিছু অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের হাতে-কলমেও কিছু প্রশিক্ষণের দরকার হবে। তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে এখনো ওই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়নি। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে এখন পর্যন্ত উত্তরা-মতিঝিল-কমলাপুর মেট্রোরেল প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৬১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। তার মধ্যে প্রথম ভাগ উত্তরা-আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৮৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। ওই অংশে ভায়াডাক্টের পরিমাণ ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার, যার পুরোটাই নির্মাণ করা হয়েছে। ভায়াডাক্টের ওপর রেলপথ আর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ চলছে। ৯টি স্টেশনের সবক’টিরই কাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে উত্তরা নর্থ থেকে পল্লবী পর্যন্ত ৪টি স্টেশনে যান্ত্রিক, বিদ্যুৎ আর কাঠের কাজ চলমান রয়েছে। আর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের অগ্রগতি ৫৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মেট্রোরেলের ট্রেনগুলো জাপানে তৈরি করা হচ্ছে। তার মধ্যে প্রথম সেট ট্রেনটি গত ৩১ মার্চ মোংলা বন্দরে এসে পৌঁছেছে। সেটি ২৩ এপ্রিল উত্তরার ডিপোয় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তারপর পর্যায়ক্রমে আরো ২৩টি ট্রেন দেশে এসেছে পৌঁছবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক গণমাধ্যমকে জানান, আগামী ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের প্রথম অংশ চালু হবে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত সব কাজ স্বাভাবিকভাবেই চলছে। কাজের গতি ঠিক রাখতে দিনে ও রাতে দুই শিফটে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।