করোনাভাইরাসে মৃতদের কবর দেয়ার জায়গা নেই ইরাকে

0
300

খুলনাটাইমস বিদেশ : সাদ মালিকের জন্য নভেল করোনাভাইরাসে তার বাবার মৃত্যু দুঃস্বপ্নের সূচনামাত্র। এক সপ্তাহ ধরে ইরাকের বিভিন্ন কবরস্থানে নিহত বাবাকে দাফনের অনুমতি চাচ্ছিলেন। কিন্তু সব জায়গাতেই তার অনুরোধ ফেলে দেয় কবরস্থান কর্তৃপক্ষ। কবরস্থ লাশ থেকে শ্বসনযন্ত্রের এ রোগে স্থানীয় বিভিন্ন জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হতে পারেÑএ আশঙ্কায় কভিড-১৯ রোগে নিহত ব্যক্তিদের লাশ হাসপাতাল মর্গে ফেরত পাঠাচ্ছে ইরাকের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন সম্প্রদায় ও শহরবাসী। এতে হাসপাতালগুলোর মর্গে করোনাভাইরাসে নিহতদের লাশের স্তূপ জমেছে। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে সাদ মালিক বার্তা সংস্থাকে বলেন, আমরা তার (বাবার) জানাজা করতে পারিনি এবং মৃত্যুর পর এক সপ্তাহ কেটে গেলেও তার লাশ দাফন করতে পারিনি। বিভিন্ন সশস্ত্র আদিবাসী নেতারা মালিক, তার পরিবার ও তার বন্ধুদের হুমকি দেয় যে যদি তাদের এলাকায় লাশ দাফনের চেষ্টা করা হয় তবে তাদের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হবে। তার সরল প্রশ্ন, আপনি কি ভাবতে পারেন এ বিশাল ইরাকে অল্প কয়েকজন মানুষের লাশ দাফন করতে কয়েক বর্গমিটার জায়গা মিলছে না? ইসলামে একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই মৃত্যুর পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কবরস্থ করা উচিত। সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটা করতে হয় এবং লাশ পোড়ানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ইরাক সরকার থেকে বলা হচ্ছে, এ পর্যন্ত দেশটিতে কভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে এবং নিহত হয়েছে ৪২ জন। তবে ৪ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত বিশাল এ দেশে আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ অল্পসংখ্যক ব্যক্তিরই করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ সময়ে নাগরিকদের ঘরে অবস্থান এবং কঠোর পরিচ্ছন্নতা অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ কিছুকিছু ক্ষেত্রে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রাজধানী বাগদাদের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এক কবরস্থানে চারজনের লাশ দাফনে বাধা দিয়েছে স্থানীয় উপজাতীয় নেতারা। কভিড-১৯-এ নিহতদের দাফনের জন্য ওই এলাকা চিহ্নিত করেছিল ইরাক সরকার। প্রতিনিধিরা যখন লাশগুলো বাগদাদের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অন্য একটি কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তখন সেখানকার কয়েক ডজন স্থানীয় বাসিন্দা প্রতিবাদ জানায়। শেষ পর্যন্ত মরদেহগুলো মর্গে ফিরিয়ে আনতে হয়। বাগদাদের কাছে বসবাসরত এক ইরাকি এএফপিকে বলেন, আমরা আমাদের এলাকায় এ ধরনের লাশ দাফন ঠেকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা আমাদের শিশু ও পরিবারের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, করোনাভাইরাসটি নাক ও মুখ থেকে বের হওয়া জলকণা এবং কোনো বস্তুপৃষ্ঠের সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। এটা লাশের মাধ্যমে ছড়াতে পারে তার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই বলে জানান ইরাকের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইফ আল-বদর। লাশগুলোকে ব্যাগে মুড়ে ফেলা, তাদের জীবাণুমুক্ত করা এবং বিশেষ কফিনে করে লাশ দাফনের মতো সরকার সম্ভাব্য সব সতর্কতা অবলম্বন করছে বলে জানান তিনি। দেশটির শীর্ষ শিয়া ধর্মবেত্তা আয়াতুল্লাহ আলী সিস্তানি বলেছেন, যারা এ রোগে প্রাণ হারিয়েছেন তাদের তিন স্তরের কাফন দিয়ে ডেকে দেয়া উচিত এবং লাশ দাফনে কর্তৃপক্ষকে শক্ত অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। কিন্তু দুই পবিত্র শহর কারবালা, নাজাফসহ অন্যান্য স্থানে দাফনে বাধার মুখোমুখি হচ্ছে ইরাকি কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চাপ দেয়া হলেও নাজাফ কর্তৃপক্ষকে বশ মানানো যায়নি, যেখানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সমাধিস্থল অবস্থিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাজাফের এক চিকিৎসক এএফপিকে জানান, তিনি এক ব্যক্তিকে দেখেছেন যিনি কর্তৃপক্ষের কাছে তার স্ত্রীর লাশ ভিক্ষা চেয়েছেন। শোকাগ্রস্ত ওই স্বামী অনুরোধ করছিলেন, আমাকে আমার স্ত্রীর লাশটি দিন। আমার ঘরেই তাকে দাফন করব। ওই চিকিৎসকের প্রশ্ন, মাত্র ৪০ জনের মৃত্যুতেই এ অবস্থা। যদি পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় এবং অধিকসংখ্যক মানুষ মারা যায় তাহলে তাদের কোথায় দাফন করবে?