কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-অভিভাবক সদস্যের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

0
396

খবর বিজ্ঞপ্তি:
পাইকগাছার ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নানা সমস্যায় ফের বিতর্কের মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের নারী শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের এক সদস্য পরষ্পরকে দোষারোপ করে উপ-পরিচালক,জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার,উপজেলা শিক্ষা অফিসার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেছেন। সর্বশেষ ঘটনায় বিদ্যালয়ের নারী শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে নানা আতংক ছড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের ৭ নারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের সুপারিশক্রমে উপ-পরিচালক,প্রাথমিক শিক্ষা,খুলনা,জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার,খুলনা,উপজেলা শিক্ষা অফিসার,পাইকগাছা,খুলনা,পুলিশ পরিদর্শক,কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ি,স্থানয়ি ইউপি চেয়ারম্যান ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন যে, বিদ্যালয়ের সদ্য গঠিত পরিচালনা পরিষদের অভিভাবক সদস্য সাহিদ মোড়ল প্রতিনিয়ত স্কুলে ঢুকে সকলের অগোচরে নারী শ্রেণি শিক্ষকদের ক্লাসে ঢুকে মোবাইলে তাদের ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। এতে তারা বিব্রতকর পরিস্থিতির পাশাপাশি পাঠদানে মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এমনকি কাউকে না বলে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির ক্লাসে ঢুকে ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণ করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতিকর অবস্থা তৈরি হয় বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়,অভিভাবক সদস্য হিসেবে তিনি কোন পুরুষ শিক্ষকের শ্রেণিতে প্রবেশ না করলেও নিয়মিত মহিলা শিক্ষকদের শ্রেণিতে প্রবেশ করেন। এসময় তিনি অফিস কক্ষেও যান না। প্রধান শিক্ষক ডাকলেও অফিসে ঢোকেননা। এমনকি তার আচার আচারণও অশালীণ ও চোখের চাহনি শিক্ষকদের কাছে ভাল মনে হয়না বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে। ভূক্তভোগীরা বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকে জানালেও তারা বিষয়টি দেখার জন্য আশ্বস্থ করলেও এখন পর্যন্ত কোন ভূমিকা নেননি।
অভিযোগে জানানো হয়েছে,একপর্যায়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টার দিকে উক্ত সদস্য বিদ্যালয়ের দ্বিতলায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে যান। সেসময় জনৈকা শ্রেণি শিক্ষক বাথরুমে ছিলেন। আকষ্মিক সাহিদকে দেখে কোমলমতি শিশুরা ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পড়ে। বিষয়টি শিক্ষিকা শ্রেণিকক্ষে ঢোকামাত্র শিশুরা তাকে অভিযোগ করে। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ফের তিনি ঐ শ্রেণিতে ঢুকলে আগের দিন শ্রেণিতে ঢোকার কারণ ও শিশুদের প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি তাকে জানালে তিনি শিক্ষকের সাথে তর্ক ও বাক্-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এসময় তিনি সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে নানা প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন বলেও অভিযোগে বলা হয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িকে অবহিত করলে ফাঁড়ির ইনচার্জ সঞ্জয় দাশ ঘটনাস্থলে এসে সাহিদকে বাইরে বের করে দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
অন্যদিকে অভিযুক্ত সাহিদ মোড়ল উল্টো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান নিজেকে রক্ষা করতে বিদ্যালয়ের এসএমসি কমিটির নামে পকেট কমিটি গঠনের জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেছেন। যাতে জানানো হয় যে,এ বিষয়ে নবগঠিত এসএমসির অভিভাবক সদস্য ও স্থানীয় যুবলীগের ওয়ার্ড সভাপতি, ওয়ার্ড পুলিশিং কমিটির সদস্য ও নাছিরপুর কলেজ মোড় জামে মসজিদ কমিটির সদস্য দাবি করে এম এম সাহিদ হোসেন ৩ দফতরে প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে এম এম সাহিদ হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,নিজ কন্যাকে ঐ বিদ্যালয়ে আনা-নেয়ার জন্য তিনি নিয়মিত ঐ বিদ্যালয়ে যান। মেয়েকে ঐ স্কুলে ভর্তির পর থেকে বিভিন্ন সময় সেখানকার শিক্ষকদের সাথে সমন্বয়, স্কুলের খুটিনাটি বিষয় যেমন আসবাব পত্রের ব্যাবস্থা, ফ্যান মেরামোত, গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ড্রেস প্রদান, মা সমাবেশে নিজ খরচে পুরস্কার প্রদানসহ সার্বিক বিষয়ে খেয়াল করে আসছেন তিনি। এমতাবস্থায় শিক্ষকদের পাঠদানে সময়মত না আসা, দেরীতে ক্লাস শুরু করার বিষয়ে শিক্ষকদের উপর নজর রাখায় তার বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান ক্ষিপ্ত হন বলে পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি। এক পর্যায়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর মেয়েকে প্রতিদিনের ন্যায় স্কুলে পৌছে দিতে গেলে প্রধান শিক্ষক জনৈকা শিক্ষিকাকে দিয়ে তাকে অপমান করান,এমনকি তাকে ছেলে ধরা হিসেবে আখ্যায়িত ও স্কুলে পুলিশ ডেকে তাকে অপমান করান।
এব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাহিদের আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,প্রথম থেকেই বিদ্যালয়ের মহিলা শিক্ষকরা তার আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন। এমনকি বিভিন্ন সময় সকলের অগোচরে মহিলা শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে ঢুকে মোবাইলে ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণের ব্যাপারে অভিযোগ করেন তিনি।