কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ, চরম করোনা ঝুঁকিতে পাইকগাছা

0
149

নিজস্ব প্রতিবেদক:
সংক্রমণ প্রতিরোধে পাইকগাছায় প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ও সরকারের ব্যাপক প্রচার-প্রচারনা সত্ত্বেও বিধিনিষেধের মধ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এত কিছুর মধ্যেও সংক্রমণের আশংকাজনক বৃদ্ধিতে জনমনে নানা আশংকা ক্রমশ দানা বাঁধছে। এমন পরিস্থিতে করোনা প্রতিরোধে নানা আয়োজনকে রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ করছে। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি স্থানীয়রা বাইরে থেকে সংক্রমিত হয়ে আসছেন ? নাকি এলাকার মধ্যে সংক্রমিত মানুষের আধিক্য রয়েছে ? যারা কিনা পরীক্ষা কিংবা কোয়ারেন্টাইনের আওতায় আসছেনা।

করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও প্রত্যন্ত এলাকায় জনসচেতনতা পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরনে ন্যুনতম মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করছেননা অধিকাংশরাই। তবে কি জনসচেতনতার অভাব রয়েছে? নাকি ব্যর্থতা রয়েছে প্রশাসনের? যদিও করোনা প্রতিরোধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন। কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে নির্বাহী কর্মকর্তার জরিমানা নয়, স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বাধ্যতামূলক করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। সুফলও এসেছে রাজপথের এ মোবাইল স্বাস্থ্যব্যবস্থা থেকে। রাজপথে পথচারীদের দু’জনের মধ্যে ইতোমধ্যে কোভিট-১৯ শনাক্ত হয়। যাদের কোয়ারেন্টাইনও নিশ্চিত করা হয়।

এলাকাবাসীর দাবি শুধু পৌরসদর নয়, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজার সমূহে জনসমাগম এড়াতে ও সংক্রমণ প্রতিরোধে ভ্রাম্যমান আদালতে নিতে হবে মোবাইল স্বাস্থ্যব্যবস্থা। এতে সংক্রমণ এড়ানোর পাশাপাশি সচেতনতাও বাড়বে। এ প্রসঙ্গে কপিলমুনি অধিবাসী এ্যাড. দীপঙ্কর সাহা বলেন, যে দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আইন করে মাস্ক ব্যবহার করাতে হয়, তাদেরকে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধির আওতায় নেয়া কঠিন। এ প্রসঙ্গে তিনি জনবহুল এলাকায় জনসমাগম কমানোর পাশাপাশি বেশি বেশি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার দাবি জানান।

উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নীতিশ চন্দ্র গোলদার জানান, তাদের চিকিৎসকরা জীবন বাজি রেখে নন স্টপ ২৪ ঘন্টা সাধারণকে নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনা ইউনিটে ৫ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন। যাদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন।

ইতোমধ্যে হাসপাতালের ডাক্তারসহ স্টাফদেরও করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। তারপরও সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে তাদের। এসময় তিনি সকলকে স্বাস্থবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে মুখে মাস্ক ব্যবহার, সাবান, স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার রাখার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, করোনা প্রতিরোধে সর্বাতœক কঠোর বিধিনিষেধ বলবৎ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানার পরিবর্তে করোনা পরীক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এছাড়া বিধিনিষেধ লংঘনকারীদেরকে দন্ডবিধি ১৮৬০ ও সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধে, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮ এর সংশ্লিষ্ট ধারায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধিনে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির আওতায় স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো’র লাইফস্টাইল, হেলথ এন্ড প্রমোশন’র স্বাস্থ্য শিক্ষা সেবা প্যাকেজ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী করোনা মহামারী বিষয়ে সচেতনা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে পাইকগাছায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘মানতে হবে স্বাস্থবিধির উপদেশ তবেই করোনামুক্ত হবে বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে লোকগান, নাটিকা, বিজ্ঞাপন ও ক্যারাভান প্রদর্শনসহ বিভিন্ন প্রচারণামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ইউনিটের মূখপাত্র ডাঃ ইফতেখার বিন রাজ্জাক জানান, বৃহস্পতিবার ১৭ জুন পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাবে মোট ২শ ৪৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় মোট ৮৫ জনের নমুনায় করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ্য হয়েছেন ৬ জন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৫ জন। এছাড়া ১৬ জুন সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটী গ্রামের ইয়াছিন হায়দার (৬৫) নামে এক ব্যক্তিকে পাইকগাছা হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হলে সে অবস্থায় তার স্বজনরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে তাকে মৃত ঘোষণা করে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর তারও পজেটিভ শনাক্ত হয়। এছাড়া একই দিন উপজেলার রামনগর এলাকার মৃত ইব্রাহীম গাজীর ছেলে জিএম আবুল কাশেম (৭৫) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। পারিবারিক সূত্র জানায়, করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে সর্বশেষ নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পর তার মৃত্যু হয়। সর্বশেষ অবস্থায় উপজেলার সাধারণ মানুষ চরম করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

খুলনা টাইমস/এমআইআর