ঐতিহ্যবাহী ‘ছেসমা’ পিঠা

0
105

সবুজ পাহাড়ে হীমবুড়ির আগমনে শীতল জনপদে পড়ন্ত বিকেলে রাস্তার ধারে, বাজারের গলির মাথায় কিংবা মহল্লার ছোট্ট টিনের ছাউনির নিচে দেখা যায় ছেসমা, ভাপা ও চিতই পিঠা খাওয়ার ধুম।
টিনের বাক্সে, মাটি দিয়ে লাকড়ির চুলা বানিয়ে তৈরি হয় বাহারি রকমের শীতের পিঠা। খাগড়াছড়ি অঞ্চলে ক্ষুদ্র— নৃ—গোষ্ঠি মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পিঠার নাম ‘ছেসমা’ পিঠা।
স্থানীয় সম্প্রদায় থেকে শুরু করে পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই ‘ছেসমা’ পিঠা। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিন্নি চালের গুঁড়া, নারিকেল আর গুড় দিয়ে তৈরি হয় এই পিঠা। বিন্নি চাল পানিতে ভিজিয়ে ঢেঁকিতে গুঁড়া করতে হয়। টিন বা মাটির তৈরি ভ্রাম্যমাণ চুলায় অ্যালুমিনিয়ামের গরম কড়াইতে চালনির মাধ্যমে ছেঁকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চালের গুঁড়া ছিটিয়ে কিছু সময় ঢেকে রাখতে হয়। বিন্নি চালের গুড়া অপেক্ষাকৃত অন্য চালের চেয়ে বেশি আঠালো হওয়ায় কড়াইর তাপে গলে জালির মতো হয়। তারপর নারকেল দিয়ে মুড়িয়ে দিয়ে কড়াই থেকে নামিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যায় ছেসমা পিঠা।
নারকেল আগ থেকেই গুড় বা চিনি দিয়ে ভেজে লালচে করে রাখা হয়। মারমারা পিঠাকে বলে ‘মুহ’। পুরো শীতের মৌসুমেই সারা পাহাড় জুড়ে দেখা যায় মারমা পিঠার দোকান। এসব দোকানে নেই জাতী, ধর্ম, বর্ণ, ধনী গরিবের ভেদাভেদ। এই জাতীয় বেশির ভাগ দোকানে নেই কোনো বসার ব্যবস্থা। পাশে দাঁড়িয়ে গরম গরম পিঠা নিয়ে হালকা ফুঁ দিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা। দশ টাকা দামের এই পিঠার স্বাদ নেয় পাহাড় কন্যা খাগড়াছড়িতে ঘুড়তে আসা ভ্রমণ পিপাসুরাও।
জেলার পানছড়ি এলাকার ম্রাচাং মারমা ও আইয়ো মারমা জানান, শীতের মৌসুমে তিন থেকে চার মাস ধরে চলে এই পিঠার বেচাকেনা। ২০০—৩০০ টাকা যাই লাভ হয় তাতেই চলে সংসার। বছরের বাকী সময়ে অন্যের জমি বা বাগানে শ্রমিকের কাজ করেই দিনযাপন করেন।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাজারের গলির মাথা, সড়কের পাশেই দেখা যায় ভাপা ও চিতই পিঠার দোকান। এখানে পাহাড়ি বাঙালি উভয়ে এই পিঠা তৈরি করেন। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সেখানেও লেগে থাকে পিঠা প্রেমীদের ভিড়। শুঁটকি আর সরিষা বর্তা দিয়ে বন্ধু বান্ধব নিয়ে রাস্তার পাশের পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা।
চিতই পিঠা ক্রেতা সুমন জানান, শীতের দিনে বন্ধু বান্ধব নিয়ে গরম গরম পিঠায় ফুঁ দিয়ে খাওয়াটাই বেশ উপভোগ্য। তাই সুযোগ পেয়ে আজ বন্ধু—বান্ধব নিয়ে পিঠার স্বাদ নিতে ছুটে আসা।
মাটিরাঙ্গার ভাপা ও চিতই পিঠা বিক্রেতা জয়নাল আবদিন জানান, প্রতিদিন ১ হাজার—১২শ টাকার পিঠা বিক্রি হয়। শীতের মৌসুমে তিন মাস পিঠা বিক্রি করে সংসার চলে। বছরের বাকী সময় বাজারে বিভিন্ন কাজ করে সংসার চালান তিনি।