এটাইকি তবে আদর্শ মায়ের নমুনা?

0
1557

নানাজনের নানা কথা, কিভাবে পালন চলে শিশুকন্যার? তো দুঃশ্চিন্তা করা স্বাভাবিকই,
মূলত: মেয়েটার চিন্তায় তিল তিল করে মরছে ওরা,
শেষ হয়ে যাচ্ছে…
মেয়েটা ভালো থাকলে চিন্তামুক্ত ছিল,
কিন্তু সে মোটেই ভালো নেই

মেয়ে জ্বরে ভুগছে দিনভর, অথচ তার মা জানেনা, এটা লালন-পালনের নিশ্চয়ই আদর্শিক দৃষ্টান্ত।
জ্বর ভালো হতে না হতেই মা হাওয়া, মানে চাকুরীর সুবাদে ঢাকা চলে গেছে, সেখানে মায়ের দিব্যি সুন্দর সময় কাটছে, জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে নতুন কলিগ ও বন্ধুদের সাথে এবং সুন্দর মূহুর্তের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছে, দুনিয়াকে বলছে আমি এখন স্বাধীন, মুক্ত আকাশে উড়ছি,
যে গাছের ডালে মন চাচ্ছে, সেইখানে বসছি, ভালো লাগছে না তো আরেক ডালে উড়ে বসছি, কাজের ফাকে নানা বন্ধুদের সাথে চ্যাট করতেও ভুল হয়না ওই মায়ের, বিশেষ করে পুরানো আশি*দের সাথে..

অথচ সেই মাসুম মেয়েটা কি করছে, তা কিন্তু মনে নেই মায়ের, সে প্রতিক্ষণ খারাপ আচরণের শিকার হচ্ছে, তা কে খবর রাখে, ছটফট করছে মায়ের জন্য, কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছে, তবুও মায়ের সময় নেই মেয়ের জন্য,
মা যে এখন আর বেকার নেই, প্রতিদিন কাজে যেতে হয়, তো মেয়েকে সময় দেয়া সম্ভব হয়না। আর মেয়ের রোজ সকালে কেঁদে দিন শুরু করাটা নিয়মে বদলেছে,
মায়ের তাতে কিইবা আসে যায়। সকালে কাজ শুরু, কাজের সাথে কলিগদের সাথে আড্ডা, তার পাশাপাশি নিত্য নতুন বন্ধুদের সাথে মনের কথা বলা, যে বন্ধুর কথা মনে ধরেছে, তার সাথে না হয় একটু বেশিই মনের লেনদেন চলে।
সবকিছু মিলিয়ে হতভাগা মেয়েটি। না পারে কিছু বলতে, না কিছু করতে, আর কিভাবেই বা বলবে/করবে, সেতো থাকে আরেক জাদরেল মায়ের কাছে, ধমকিয়ে, শ্বাসিয়ে তার কচি কন্ঠের আওয়াজ বন্ধ করা হয়।
লোকমুখে উচ্চারিত, এই ধমক-শ্বাসনই শিশুকন্যাটির বারবার জ্বর আসার কারণ।
মায়ের কাজ শেষে বাড়ি ফেরা, ক্ষণিকের তরে মেয়ের সাথে মিলে যাওয়া, তারপর আবারো হয়তো বন্ধুদের সাথে অব্যাহত চালিয়ে যাওয়া।
এক্ষেত্রে মায়ের বিপত্তি শুরুটা হয় মেয়ের মোবাইল কেড়ে নেওয়া, খুব রাগ হয় মায়ের, কেবলই আড্ডাবাজি শুরু হলো, ওমনি বাধ সাধলো মেয়ে, হয়তো মায়ের চড়/লাথি এমন সময় মিস হয়না।
কি করবে মেয়েটা, সারাদিনতো আর মাকে পায়না,
অবশ্য মায়েরও বা কি করার, তার মনতো ঘরে আসেনি, সেতো ভাসছে প্রেমের সুরসুরি দেয়া মানুষগুলোর মাঝে। মুচকি হাসি দিচ্ছে, এখনও আমার দিন শেষ হয়নি ভেবে, আজও পোলাপান পিছনে ঘোরে, ফিল্ডিং দেয়, হা হা হা..

ও হ্যা অভাগা মায়ের কাজের বাহানায় মাঝে মাঝে বন্ধু/ফিল্ডিংবাজ এর সাথে ডেটিংও চলে। স্মৃতিময় ডেটিং তার মুখে হাসি ভরে দেয়, ভুলে যায় সব বেদনা, নির্যাতনের গল্প। ডেটিং করাটাতো এসব ভুলে থাকার জন্যই,

ভুলতে ভুলতে ভুলে যায় মা তার মেয়ের আত্মচিৎকার, ভুলে বসে মা মেয়ের কান্নাভরা মুখখানি,
মা হায়রে মা…
এটাইকি তবে আদর্শ মায়ের নমুনা?

(লেখক: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হতভাগা পিতা)