উপকূলে মেধাশূন্য হওয়ার আশঙ্কা, পড়ার টেবিল বিমুখ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

0
171

ওবায়দুল কবির সম্রাট:
করোনার কারনে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় অটোপাসের প্রভাবে ও বার বার নদী ভাঙ্গনে প্লাবিত হওয়ায় পড়ার টেবিল বিমুখ হচ্ছে উপকূলের শিক্ষার্থীরা। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ধীরে ধীরে পড়ার টেবিল থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। একই সাথে মোবাইলে আসক্তি বাড়ছে শিক্ষার্থীদের। এতে উপকূলে মেধাশূন্য হওয়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষাবিদরা। খুলনার উপকূল কয়রায় গত বছর ২০ মে আম্পান ও চলতি বছরে ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতি ও উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়ন প্লাবিত হয় পানিবন্ধী হয় লক্ষাধিক পরিবার। করোনার মধ্যে পড়ে মরার উপর খাড়ার ঘা।

উপকূলের শিক্ষার্থীরা তাই ভুলতে বসেছ পড়ার টেবিল ও বইখাতা কি। অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে বসা নিয়েও কোনো ধরনের তাগিদ দিচ্ছেন না। এতে বই বিমুখ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছে, উপকূলে একদিকে করোনা ও অন্যদিকে বেঁড়িবাধ ভাড়া পানিতে বার বার প্লাবিত দুশ্চিন্তা কোন সংকেত আসলেই ভঙ্গুর বেঁড়িবাধ নিয়ে। অনিশ্চয়তার কারণে তারা পড়ার টেবিলে মন বসাতে পারছে না।উপকূলে পায় ৮০% শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস কী তা বোঝেনা। তবে যাদের কাছে স্মার্ট ফোন রয়েছে তারা ব্যস্ত থাকছে গেমস নিয়ে। সারাদেশের ন্যায় খুলনা উপকূলীয় অঞ্চল কয়রায় ও গত বছরেন মার্চ মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে উপকূলীয় কয়রার ছোট-বড় কোচিং সেন্টারগুলোও বন্ধ রয়েছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের বাসায় গৃহ শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়াও বন্ধ রয়েছে। একদিকে করোনা অন্য দিকে বেঁড়িবাধ ভেড়ে ওটা উপজেলা দীর্ঘদিন পানির নিচে ছিল।

এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে শিক্ষার্থীরা হয়েছে পড়ার টেবিল বিমুখ।শিক্ষকদের মতে, গ্রামাঞ্চলের কোনো শিক্ষার্থী অনলাইনে পড়ালেখার কোনো সুযোগ পায় না। যদি একজন শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করে তাকে মাসে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা খচর করতে হবে। যা উপকূলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্ভব না বলে মনে করছেন খোদ শিক্ষকরাও।কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তানিয়া তাবাসুম জানায়, গত বছরের মার্চ মাসে কলেজ বন্ধ হওয়ার পর পড়ার টেবিলে বসা হয়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় পড়ার প্রতি এক ধরনের অনিহা তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে ২ বার বেঁড়িবাধ ভাঙা পানিতে দীর্ঘ সময় পানি বন্ধী ছিলাম ক্ষতি হয়েছে ঘর বাড়ি রাস্তা ঘাট বই খাতা। মকয়রার আমাদী এলাকার শিক্ষার্থীর অভিভাবক মুন্না সানা জানান, তার তিন ছেলে মেয়ে। বড় ছেলে খুলনায় বি এল কলেজে অনার্স করছে।

ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে অটোপাসে পাস করেছে। কিন্তু তাদের পড়ালেখার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। ছেলে কলেজ ছুটির পর আর কোনো দিন পড়ার টেবিলে বসেনি। মেয়ে অপোপাস পেয়ে সেও বই বিমুখ হয়ে পড়েছে। শত চেষ্টা করেও তাদের বই মুখি করা যাচ্ছে না। যতবারই তাদের পড়ার কথা বলা হয় ততবারই তারা জানায় স্কুল কলেজ না খুললে পড়ে কী হবে। কয়রার শিক্ষক নেতা সাইদুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের অটোপাস যেমন একটি যুগোপযোগি সিদ্ধান্ত, তেমনি এর প্রভাবটাও কম নয়। ক্লাস ওয়ান থেকে শুরু করে এইচএসসি যেটাই বলি না কোনো, শিক্ষার্থীরাই পড়ার টেবিলে নেই। একমাত্র অভিভাবকরাই পারেন শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে বসাতে।তিনি বলেন, বর্তমান যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে উপকূলের শিক্ষার্থীরা মেরুদ-হীন হতে যাচ্ছে। কয়রা কপোতাক্ষ কলেজের অধ্যক্ষ অদ্রীশ আদিত্য মন্ডল বলেন, বর্তমান করোনা ও নদীর ভাঙ্গনের পরিস্থিতিতে উপকূলের শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে মেধাশূন্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুখবর নয়। প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি, এইচএসসিতে অটোপাস দেয়া হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, সব পরীক্ষাই অটোপাস হবে। তিনি বলেন, নতুন সিলেবাস করা হয়েছে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে বসার জন্য। আর শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফেরাতে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।

খুলনা টাইমস/এমআইআর