আজ খুলনা মুক্ত দিবস

0
1044

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করলেও খুলনায় তখন যুদ্ধ চলছিল। খুলনা বিজয় হয়েছিল ১৭ ডিসেম্বর। এদিন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার হায়াত খান অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দিয়ে যুদ্ধ শেষের ঘোষণা দেন। খুলনায় পাকিস্তানিদের পতন ঘটে, মুক্ত হয় খুলনা। সোমবার সেই খুলনা মুক্ত দিবস।
১৬ ডিসেম্বর খুলনার শিরোমণি এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর তীব্র লড়াই চলছিল। মুক্তি ও মিত্র সেনারা উজ্জীবিত ও বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত থাকলেও পাকিস্তানি সেনারা প্রবলভাবে প্রতিরোধ করে চলছিল।
খুলনার গল্লামারী রেডিও স্টেশন (আজকের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা), লায়ন্স স্কুল, বয়রার পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কলোনি এলাকা, সাত নম্বর জেটি এলাকা, নূরনগর ওয়াপদা (বর্তমানের পানি উন্নয়ন বোর্ড) ভবন, গোয়ালপাড়া, গোয়ালখালি, দৌলতপুর, টুটপাড়া, নিউ ফায়ার ব্রিগেড স্টেশন প্রভৃতি এলাকায় মুক্তিসেনাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের লড়াই হয়।
মুক্তিবাহিনীর খুলনা অভিযানে ফোয়াম উদ্দিন ও লে. নোমানউল্লাহ তাঁদের বাহিনী নিয়ে সেনের বাজার, রাজাপুর ও রূপসা ঘাট এলাকা দিয়ে শিপইয়ার্ড, হাসপাতাল ও গোয়ালখালী এলাকার পাকিস্তানি সেনা অবস্থানে আক্রমণ করেন। বোরহানউদ্দিন ও তাঁর দল ক্রিসেন্ট জুট মিল ও নৌ ঘাঁটি এলাকার পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানে হামলা করেন।
ক্যাপ্টেন শাজাহান মাস্টার ও তাঁর বাহিনী কুলটিয়া নামক অবস্থান থেকে রেডিও স্টেশন আক্রমণ করেন। আফজাল ও কুতুবউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল মুক্তিসেনা সাচিবুনিয়ার দিক থেকে লায়ন্স স্কুলের পাকিস্তানি ঘাঁটিতে আক্রমণ করেন। মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে এক কম্পানি মুক্তিসেনা ছিলেন ভৈরব নদীসংলগ্ন এলাকায়, যাতে পাকিস্তানিরা নদীপথে পালিয়ে যেতে না পারে তা প্রতিহত করতে। এ ছাড়া লে. আরেফিন ও কমান্ডার খিজিরের নেতৃত্বে নদীপথে ছিলেন আরো একদল মুক্তিসেনা। পরিকল্পিত এই আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা তাদের মরণপণের ইচ্ছাটি ধরে রাখতে পারেনি। পাকিস্তানিদের মনোবল ভেঙে যায়। মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর সম্মিলিত তীব্র আক্রমণের মুখে ব্রিগেডিয়ার হায়াত তাঁর নিউজপ্রিন্টের ডেরা থেকে বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।